ট্যাংরা-কাণ্ডে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রহস্য!

পরতে পরতে রহস্য। যত সময় এগোচ্ছে ততই জট খোলার বদলে আরও যেন ধোঁয়াশা দেখা দিচ্ছে ট্যাংরার (Tangra) ৭ জনের রহস্যমৃত্যু ও একই পরিবারের তিনজনের গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ঘটনা। প্রশ্ন উঠছে দুই স্ত্রী ও কন্যাকে খুন করে কী পালাচ্ছিলেন দুই ভাই ও তাঁদের নাবালক পুত্র? পুলিশ সূত্রে খবর, ট্যাংরায় মৃতদের এক মহিলার হাতের পাশাপাশি গলাতেও ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। এই থেকেই খুনের তত্ত্ব জোরদার হয়েছে।

প্রথমে বুধবার ভোররাতে বাইপাসে গাড়ি দুর্ঘটনার খবর মেলে। সেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে প্রণয় দে, প্রসূন দে ও তাঁদের এক পুত্রসন্তানকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করার সময় তাঁরা জানান, বাড়িতে তিনটি মৃতদেহ রয়েছে। সেই মতো ট্যাংরার ১এ, অতুল শূর রোডে গিয়ে হাড়হিম করা দৃশ্য দেখে পুলিশ। দেখা যায়, দে ভাইদের দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা দে এবং রোমি দে-র রক্তাক্ত দেহ দুই ঘরে পড়ে আছে। আর এক ঘরে প্রণয় ও সুদেষ্ণার কিশোরী কন্যার দেহ। তাঁর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরিয়ে ছিল। সেখানে একটিই মাত্র ছুরি মিলেছে।

ট্যাংরার মৃত্যু-রহস্য একরাশ ধোঁয়াশা

  • গাড়ি দুর্ঘটনা না নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা
  • যদি আত্মহত্যা হয়, তাহলে তাঁরা সিট বেল্ট বাঁধলেন কেন
  • দুমড়ে যাওয়া গাড়ির এয়ার ব্যাগ বেরিয়ে এসেছিল। সিট বেল্ট না বাঁধলে গাড়ির এয়ারব্যাগ বের হত না
  • এক মহিলার কবজির শিরার পাশাপাশি গলাতেও কাটা দাগ মিলেছে, সেই দাগ কোথা থেকে এলো
  • বাড়িতে একটিই রক্তাক্ত ছুরি মিলেছে
  • যদি ওই তিনজন আত্মহত্যা করেন, তাহলে একজন যখন শিরা কাটছিলেন, তখন কী আরেকজন পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন
  • কিশোরী কন্যাকে বিষ কে দিল, না হলে তার মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হল কেন
  • বুধবার যাঁরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাঁরা কেউই বহুবার ডাকার পরেও সাড়া পাননি
  • বাড়ির চত্বরে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট তিনজন গ্যারাজ থেকে গাড়ি বের নিয়ে বেরোন
  • তাঁরা কখন বেরিয়েছিলেন, তখন কি বাড়ির ২ মহিলা ও কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে
  • যদি আত্মহত্যাই করার উদ্দেশ্য হত, তাহলে কেন তাঁরা গাড়ি বেছে, রাস্তা বেছে, সিট বেল্ট বেঁধে রওনা হলেন
  • বাড়ি থেকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে খুব বেশি হলে ৪০ মিনিট লাগার কথা, তাহলে রাত ১২টা ৫২ মিনিটে গাড়ি নিয়ে বেরনোর পর বুধবার ভোর পর্যন্ত কোথায় ছিলেন

প্রণয় দে এবং প্রসূন দে চামড়ার গ্লাভসের ব্যবসা করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ইদানীং তাঁদের ব্যবস্থায় মন্দা চলছিল। তবে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ব্যবহার স্বাভাবিকই ছিল। কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) যুগ্ম কমিশনার (অপরাধদমন) রুপেশ কুমার জানান, প্রণয় ও প্রসূন দাবি করেছিলেন পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাঁরা ৬জন একসঙ্গে খেয়েছিলেন। পরে গাড়ি নিয়ে তিন জন বেরিয়ে পড়েন এবং আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পিলারে ধাক্কা মারেন। আর্থিক সমস্যার কারণেই একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। যদি তাই হয়, তাহলে তাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরোলেন কেন? দুই মহিলার শিরা কাটা হল? কারা কাটলেন? আত্মহত্যার চেষ্টায় ইচ্ছাকৃত পিলারে ধাক্কা নাকি তিন জনকে খুন করার পরে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা? প্রশ্ন উঠেছে।
আরও খবর: টালিগঞ্জে ডাকাতির ঘটনা ‘সাজানো’! গ্রেফতার অভিযোগকারী গৃহকর্ত্রী

ঘটনাস্থলে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার (Kolkata Police) মনোজ বর্মাও। তিনি বলেন, “তিন জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। দুই মহিলার দেহে আঘাত রয়েছে। এক জন নাবালিকা, তার বয়স ১৪-১৫ বছর। ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে।“ একই সঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার জানান, গড়ফা থানা এলাকায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে আহত হয়েছেন ওই দুই মহিলার স্বামীরা। তদন্ত এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। যাচাই করে দেখা হচ্ছে আহতদের বয়ান। আত্মহত্যা না খুন, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে CC ক্যামেরার ফুটেজও।