Wednesday, August 27, 2025
উৎপল সিনহা

একটা সহজ প্রশ্ন : মহারাজ হরিশচন্দ্র , কর্ণ , হর্ষবর্ধন এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মধ্যে মিল কোথায় ?
উত্তরটাও সবার জানা । এঁরা সবাই ছিলেন দাতা । দানবীর । দানসাগর । এঁদের মতো কিংবদন্তিদের পাশে আমাদের খুব চেনা গৌরী সেনের নামটা কি রাখা যায় ? তিনিও তো ছিলেন একজন নামকরা দাতা , দানবীর।

‘ লাগে টাকা , দেবে গৌরী সেন ‘ , অতি জনপ্রিয় একটি বাংলা প্রবাদ । ছোট বড়ো নানা আলোচনায় এবং বিভিন্ন আড্ডায় আজও গৌরী সেনের নামটা বারবার উচ্চারিত হয় । টাকা লাগবে ? চিন্তা নেই । গৌরী সেন আছেন । আমাকে কি গৌরী সেন পেয়েছো যে চাইলেই টাকার বৃষ্টি নামাবো ? থাকতো যদি গৌরী সেন রুখতো কে ?

এইসব কথা একটা সময় পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে ফিরতো । এই কিংবদন্তির গল্প শোনে নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল । কিন্তু প্রশ্ন হলো , কে এই গৌরী সেন ? তিনি কি সত্যিই দানবীর ছিলেন ? না হলে এতো জনপ্রিয় তিনি হলেন কী করে ? সঙ্গে এটাও ভাবতে হয় যে , এতো টাকা উনি পেতেন কোথায় ? তাঁর এতো টাকার উৎস কী ? তিনি মহিলা নাকি পুরুষ ? এই নামে সত্যিই কি কেউ ছিলেন ? নাকি এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র ! চলুন , জানা যাক গৌরী সেনের কথা ।

‘ বাংলা প্রবাদের গঠন ও উৎসকথা ‘ গ্রন্থে কমল কুমার পাল লিখেছেন , গৌরী সেনের মূল নাম গৌরীকান্ত সেন । সুবর্ণ বনিক সম্প্রদায়ের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি । ১৫৮০ সালে হুগলীতে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম নন্দলাল সেন । থাকতেন ৩৫ নম্বর কলুটোলা স্ট্রিটে । সাত সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ গৌরী ছিলেন দারুণ মেধাবী । অধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী গৌরী সেন ছিলেন হুগলী জেলার বালি শহরের মানুষ , যা বর্তমানে হাওড়া জেলার অন্তর্গত । আবার আরেকটি মত অনুযায়ী , তিনি নাকি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের মানুষ । এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রকাশিত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা , প্রবাদ প্রবচন গ্রন্থ থেকে জানা যায় , গৌরী সেন হরেকৃষ্ণ মুরলীধর সেনের পুত্র ।
আমদানী-রপ্তানীর পারিবারিক ব্যবসায় গৌরী সেন বিপুল টাকা উপার্জন করার ফলে বনিক সমাজে প্রসিদ্ধ হন । বহু সাধারণ মানুষকে তিনি বিবিধ সমস্যায় সাহায্য করতেন । দু’হাতে টাকা বিলিয়ে তিনি অনেক মানুষকে ঋণমুক্ত করেন । অনেক দুঃস্থ ও বিপন্ন মানুষকে বকেয়া রাজকর মেটাতে সাহায্য করতেন । কেউ চাইলেই তিনি টাকা দিতেন । এ থেকেই ‘ লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’ প্রবাদের জন্ম ।

সেকালে দেনার দায়ে কারোর জেল হলে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা মুক্তি পেতেন না । অনেকেই জেলে মারা যেতেন । এ অবস্থায় গৌরী সেন ছিলেন তাঁদের ত্রাণকর্তা । তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি তাঁদের ঋণের টাকা মিটিয়ে কারামুক্তির ব্যবস্থা করতেন । কলকাতার আহিরীটোলায় গৌরী সেনের বিশাল বাড়ি ছিল বলে জনশ্রুতি আছে ।

সুবল চন্দ্র মিত্রের লেখা ‘ বাংলা প্রবাদ ও প্রবচন ‘ গ্রন্থে গৌরী সেন সম্পর্কে লেখা হয়েছে , তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা ( জাহাজে মাল আমদানী-রপ্তানী ) করে অল্প বয়সেই গৌরী সেন বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন ব্যবসায়ী মহলে । তিনি ছিলেন বৈষ্ণব চরণ শেঠের ব্যবসার অংশীদার । তাঁরা দুজনে মিলে একবার ডুবে যাওয়া জাহাজের দস্তা নিলামে কেনেন । পরে দেখা যায় আসলে দস্তার নিচে লুকিয়ে পাচার করা হচ্ছিল রূপা । গৌরী সেন এই রূপা ঈশ্বরের কৃপা হিসাবে গ্রহণ করেন । তাঁর ছিল আকাশের মতো বিশাল ঔদার্য , দরাজ দানের হাত এবং একটি অতি সংবেদনশীল হৃদয় । তাঁর দ্বার অবারিত থাকতো অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতাদের জন্য । নানা ধরনের জনহিতকর কাজ ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য তিনি তাঁর সমকালে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন । ১৬৬৭ সালে এই মহান দাতার মৃত্যু হয় ।

ধনী তথা বিত্তশালী অনেকেই হন । কিন্তু একইসঙ্গে বিত্তে ও চিত্তে বড়ো মানুষ খুব বেশি দেখা যায় না । তীক্ষ্ণ ব্যবসায়ীক বুদ্ধি ও মরমী মন এবং মানুষের উপকার করার তীব্র বাসনা গৌরী সেনের বিপুল জনপ্রিয়তার মূল কারণ । যার জোরে বাঙালির মনে তিনি অমর হয়ে আছেন।

আরও পড়ুন- বাংলার বাড়ি প্রকল্প: ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তির টাকা! শীর্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনা

_

 

_

 

_

Related articles

বিরক্ত মিঠুন? এড়াচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক কর্মসূচি

বারবার রং বদল করে আপাতত গেরুয়াতে ঠেকেছেন ডিস্কো ড্যান্সার মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। ভোটের আগে বা বিজেপির. (BJP)...

আরজি কর কাণ্ডে ভুয়ো প্রচারের অভিযোগ! নোটিশ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়া অভয়ার মৃত্যুকে ঘিরে ভুয়ো প্রচার মামলায় নোটিশ ধরাল কলকাতা পুলিশ। পুলিশের...

দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি-উদ্বেগ! টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে আশঙ্কা 

দুর্গোৎসবের মুখে একদিকে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডেঙ্গি সংক্রমণ রাজ্যবাসীর কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে...

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী! কিনলেন শাড়ি 

বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় এসে হঠাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মহিলাদের হাতের কাজই ঘুরে দেখলেন না, কেনাকাটাও...
Exit mobile version