লাগাতার অধিবেশন বয়কট ভুল হয়েছে! বঙ্কিমের ‘সোজা কথায়’ চাপে বিজেপি

জনপ্রতিনিধি হয়েও বিধানসভার অধিবেশনে উপস্থিত না থাকা ও সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি উচিৎ কাজ হয়নি। নিজের দলের বিধায়কের এই বোধোদয়ে অস্বস্তিতে বিজেপি। বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে প্রায় সবদিনই বয়কট করেছে বিরোধী দল বিজেপি (BJP)। অধিবেশনে বিশৃঙ্খলা তৈরি, কাজ ছেঁড়া, ওয়াকআউট করে বিধানসভার মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে বিজেপি। একটি আলোচনাতেও অংশ নেয় গ্রহণ করেনি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরোধীদলের উপস্থিত না থাকা ভুল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ (Bankim Ghosh)। তাঁর কথায়, “আমি বলব, এটা আমাদের ভুলই হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটো বাজেট সেই জায়গাটায় আমরা থাকতে পারলাম না।“

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Shubhendu Adhikari) নেতৃত্বে বিধানসভায় গোলমাল পাকায় বিজেপি। কোনও গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করে না। এই নিয়ে এতদিন সরব ছিল শাসকদল তৃণমূল। এবার নিজের দলের বিধায়কই সমালোচনা করছেন দলের এই অবস্থানের। বৃহস্পতিবার চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বলেন, ”আমার ব্যক্তিগত মত, যে স্বাস্থ্য দফতরের বাজেটের উপর যে আলোচনা হল বা শিক্ষা নিয়ে হল, সেই জায়গাটায় আমরা থাকতে পারলাম না। আমরা বয়কট করে বেরিয়ে এলাম। এটা মনে হয় আমাদের একটা ভুলই হয়েছে। আমি বলব, এটা আমাদের ভুলই হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটো বাজেট সেই জায়গাটায় আমরা থাকতে পারলাম না। আগামী দিনে আমাদের নিশ্চয়ই এই নিয়ে চর্চা করতে হবে, আলোচনা করতে হবে।”

জন প্রতিনিধি হয়েও বিধানসভায় আলোচনায় না থাকা একেবারেই ঠিক নয়- মত বঙ্কিমের (Bankim Ghosh)। তাঁর কথায়, ”বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আমাদের সবাইকে বলতে হবে যে মানুষের কথা আমরা বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলব যেখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট, সেই জায়গাটায় আমরা বিধানসভা বয়কট করলাম বা অফ থাকলাম এটা আমার ব্যক্তিগত মত, আমার মনে হয় আমাদের ঠিক হয়নি। আমাদের থাকা উচিত ছিল, বলা উচিত ছিল। অন্য কোনও বিষয়ের উপর বা অন্য কোনও পদ ধরে আমাদের বয়কটগুলো করলে ভাল হত। এই দুটি বিষয়ের উপর মূলত থাকাটা আমাদের জরুরি ছিল।”

বঙ্কিম ঘোষের মতে, বিধানসভা বিরোধীদের জন্য। জনগণ মানুষের কথা বলার জন্য তাঁদের জিতিয়ে বিধানসভায় পাঠিয়েছেন। ফলে মানুষের কথা বেশি করে বিধানসভায় তুলতে হবে বিধায়কদের। বিজেপি বিধায়কের কথায়, ”আমার মনে হয়, আগামী দিনে এসব নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। পুরো সময়টা বিধানসভায় থেকে আমাদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ করতে হবে। বিধানসভায় থেকে যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে মানুষের কথা বলতে পারব। আমার মনে হয়, আগামী দিনে বিরোধী দলনেতাকে আমাদের যে বাজেটের যে সময় আছে, সেই সময়টুকু রাজ্যের মানুষের জন্য আমাদের বলতে হবে। কথায় কথায় আমাদের বয়কট করে বেরিয়ে এলে হবে না।”

এই বিষয়ে বঙ্কিমের মতকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ”আমি এ বিষয়ে একমত। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কর্তব্য, আমরা মানুষের কথা বলব। ভাগাভাগির রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, টিভিতে মুখ দেখানো জনপ্রতিনিধিদের কাজ নয়। তাতে মানুষকে অপমান করা হয়। কিন্তু বিরোধীরা আজকাল সেটাই করছেন বেশি।”

বিধানসভায় এই গোলমালের যিনি হোতা সেই বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়কের কথা বেজায় চটেছেন। বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। তার পর থেকে লাগাতার অধিবেশন বয়কট শুরু করে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দু অধিকারীর ব্যক্তিগত ইগোর কারণে ইচ্ছা না থাকলেও লাগাতার অধিবেশন বয়কট করতে বাধ্য হয়েছেন বিজেপি বিধায়করা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই কাজ ঠিক হয়নি বলে এদিন বোমাটা ফাটিয়েই ফেললেন বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম।