এ এক অদ্ভূত পরিস্থিতি।তাকে খুনের দায়ে জেল খাটছেন চার জন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার শেষকৃত্যও করা হয়েছে। আর সেই মহিলাই ‘মৃত্যু’র ১৮ মাস পর সশরীরে গ্রামে ফিরে এলেন। হতবাক তার পরিবার, চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। তবে তাদের মা বেঁচে আছে দেখে খুশি তার দুই সন্তান। মহিলা ফিরে আসার পর তার আধার কার্ড এবং অন্যান্য পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় যায় পরিবারের সদস্যরা।চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের মান্দসৌর জেলায়। পুলিশ পড়ে গিয়েছে ধন্দে। তারা বুঝেই উঠতে পারছেন না, মৃত মহিলা কে ছিলেন? শুধু তাই নয়, যে খুন হয়নি, তার জন্য কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের কী হবে?

ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই মহিলার পরিবার পুলিশকে জানিয়েছিল, গান্ধী সাগর এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। জায়গাটি মান্দসৌর জেলা সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এবং রাজস্থান সীমান্তবর্তী। তার কয়েকদিন আগে ঝাবুয়া জেলার থান্ডলা এলাকা থেকে এক মহিলার পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। মুম্বই-দিল্লি মহাসড়কের পাশে পড়ে ছিল দেহটি।পুলিশ সেই দেহের ছবি সমস্ত থানায় পাঠিয়েছিল। থান্ডলা থানার ইনচার্জ ব্রিজেশ মালব্য জানিয়েছেন, গান্ধী সাগর থেকে ফোন করে পরিবারটি থানায় এসেছিল। পায়ের গোড়ালিতে একটি ট্যাটু এবং হাতে বাঁধা সুতো দেখে দেহটি তাদের মেয়ের বলে শনাক্ত করে ওই পরিবার। জনৈক শাহরুখের সঙ্গে তাদের মেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল বলে বিবৃতিও দেয় তারা। তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে শাহরুখ এবং ইমরান, সোনু ও এজাজ নামে চারজনকে আটক করা হয়।

আদালত তাদের জেল হেফাজতে পাঠায়। পুলিশ ধৃত চার জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে। পুলিশের দাবি, চার্জশিট দাখিল করার মতো তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল। তবে মামলাটি এখন আদালতের বিচারাধীন। এ দিকে তদন্ত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃতদেহটি দাহ করা হয়েছিল। ১৮ মাস পর সেই ‘মৃত’ মহিলা এখন ফিরে এসেছেন। গান্ধী সাগর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তরুণ ভরদ্বাজ জানিয়েছেন, মহিলা কয়েকদিন আগে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে তিনি বেঁচে আছেন। গ্রামবাসী এবং পরিবারের সদস্যরা তার পরিচয় যাচাই করেছিলেন। তার পর মহিলার বাবা জানিয়েছেন, মেয়ে নিখোঁজ থাকাকালীন পুলিশ তাদের একটি মৃতদেহ দেখিয়েছিল। তারা সেটি দেখে ভেবেছিলেন, সেটা তাদের মেয়ের। তাদের মেয়ে যে বেঁচে আছেন এবং বাড়ি ফিরে আসবেন, তা তারা কল্পনাও করতে পারেননি।

পুলিশকে মহিলা জানিয়েছেন, তিনি সত্যি-সত্যিই শারুখের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দু-দিনের মধ্যে, শাহরুখ তাকে অন্য একজনের কাছে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ১৮ মাস ধরে, তিনি কোটায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকতেন। সব সময় পালানোর সুযোগ খুঁজতেন। সম্প্রতি কোনওভাবে তিনি পালাতে পারেন। স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে নিজের গ্রামে পৌঁছান। তার কাছে কোনও ফোন ছিল না এবং তাকে বের হতে দেওয়া হতো না বলে, এতদিন তিনি পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

মহিলা ফিরে আসায় পরিবারের সকলে খুশি হলেও, অদ্ভূত পরিস্থিতিতে পড়েছে পুলিশ। মহিলার পরিবার তাদের মেয়ে ভেবে কার মৃতদেহ দাহ করেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে পুলিশকে। জেলে থাকা শাহরুখদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, তারা আদালতের আদেশের অপেক্ষায় আছে। তার পরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

–

–

–

–

–

–

–
–