বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগ তুলে সরব বিজেপিরই সাংসদ! লোকসভার এই ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। সম্প্রতি লোকসভায় বিজেপি সাংসদ তথা উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত অভিযোগ করেন, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার তোয়াক্কা না করে অবাধে চলছে বেআইনি খনন। এরপরেই মুখ বাঁচাতে দলীয় সাংসদের ভাষণকে ‘ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা’ আখ্যা দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডের খনন সংক্রান্ত সচিব বৃজেশ সন্ত বলেছেন, অভিযোগ অসত্য। কিন্তু খোদ সংসদে বিজেপি বনাম বিজেপির দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসায় মুখ পুড়েছে মোদির দলের।

প্রসঙ্গত, ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি রাজ্য থেকে গেরুয়া শিবিরের সাংসদ। লোকসভায় সম্প্রতি এক ভাষণে রাওয়াত অভিযোগ করেন, উত্তরাখণ্ডে রাতেরবেলা অবৈধ খনন ব্যাপকভাবে চলছে। সংসদে বক্তৃতার সময় হরিদ্বারের সাংসদ রাওয়াত বলেন, তিনি তাঁর নিজের রাজ্যের একটি উদ্বেগজনক বিষয় তুলে ধরতে চান। তাঁর কথায়, উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন, হরিদ্বার, উধম সিং নগর এবং নৈনিতালে রাতেরবেলা অবৈধ খনন বেড়ে চলেছে। কোনও নজরদারি নেই। অবাধে চলছে বেআইনি কাজ। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। আগামীদিনে যা বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় তৈরি করবে। রাওয়াতের কথায়, এটি কেবল আইন-শৃঙ্খলা ও পরিবেশের জন্যই হুমকি নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্যও সাংঘাতিক বিপদ ডেকে আনছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও আমরা দেখছি খনন মাফিয়ারা রাতে ট্রাকে করে উপকরণ পরিবহন করছে। এতে রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য সুবিধাগুলি প্রভাবিত হচ্ছে। খোদ দলেরই গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাষণ রাজ্যের বিজেপি সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে। রাওয়াত তাঁর ভাষণে দাবি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে নজর দেওয়া এবং পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভায় রাওয়াত বলেন, আমি রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, রাতে এই ধরনের ট্রাকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করুন, ট্রাকের অতিরিক্ত ভার বন্ধ করতে চেকপয়েন্ট স্থাপন করুন এবং খনন মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন।

সাংসদ ত্রিবেন্দ্র রাওয়াতের এই ভাষণে অপদস্ত বিজেপি সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে নামিয়েছে রাজ্যের খনন সচিবকে। উত্তরাখণ্ডের খনন সচিব বৃজেশ সান্তের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে এই অভিযোগের পরেই। সেখানে তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।ভিডিওতে সচিবকে বলতে শোনা যায়, রাজ্যে অবৈধ খনন বাড়ছে এই বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। খননের তথ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয় কারণ রাজস্ব বেড়েছে। রাজ্য গঠনের পর থেকে চলতি বছরের মতো বৃদ্ধি দেখা যায়নি। এটি গত বছরের তুলনায় ২.২৫ গুণ বেশি। এটিও প্রথমবার যে আমরা কেবল অর্থ বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করিনি, বরং উদ্বৃত্ত পেয়েছি। এটি আমাদের খননের উপর নিয়মকানুনের কারণে সম্ভব হয়েছে। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এই আইন লঙ্ঘনের জন্য শাস্তিমূলক করেছি। তাছাড়া, আমরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এবং তিন স্তরে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছি; যেমন তহসিল-স্তর, জেলা-স্তর এবং রাজ্য-স্তর। এর মাধ্যমে খননকার্যের উপর নজর রাখা হয়। দলীয় সাংসদের বক্তব্য খণ্ডন করতে রাজ্যের বিজেপি সরকার এরপর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও জারি করে। তাতে প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্যে অবৈধ খনন, অবৈধ পরিবহন এবং অবৈধ সংরক্ষণ বাড়ছে এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পাথর ভাঙার যন্ত্র, স্ক্রিনিং প্ল্যান্ট এবং কয়লা, লৌহ আকরিক, গ্রানাইট, ডলোমাইট ইত্যাদি উত্তোলিত উপকরণ শুধুমাত্র বৈধ রয়্যালটি অনুমতি নিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। রয়্যালটি অনুমতি ছাড়া খনিজ উত্তোলনের যে দাবি সাংসদ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর। সব মিলিয়ে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার বনাম বিজেপি সাংসদের পারস্পরিক দোষারোপ ঘিরে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে।

আরও পড়ুন – ফেসবুকে পোস্ট করে কলকাতায় আসুন: রাম-বাম বিপ্লবীদের ‘অভ্যর্থনা’ কুণালের


_


_

_

_

_
_

_

_