Tuesday, November 4, 2025

চাকরি হারানো শিক্ষক থেকে প্রাইভেট টিউটররাও বিনা স্বার্থেই স্কুলে পড়াতে চান!

Date:

পুরো এলাকা জুড়ে একটিই উচ্চমাধ্যমিক স্কুল।কাকতালীয়ভাবে সুপ্রিম-নির্দেশে এক লহমায় চাকরি গিয়েছে স্কুলের সব শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর।সবে ধন নিলমণি পাথরপ্রতিমার উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা তিনিও। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিনা স্বার্থেই প্রাথমিকভাবে এগিয়ে এসেছেন চাকরি খোয়ানো সেই ছয় শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীই।একদিকে রাজ্য সরকার যেমন চাকরি হারানোদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ঠিক তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে এই শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা বিনা দ্বিধায় এগিয়ে এসেছেন।

ঘটনাস্থল সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ পাথরপ্রতিমার অনেক ভিতরে অচিন্ত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা।পশ্চিম শ্রীপতিনগর ডা. বি সি রায় মেমোরিয়াল বিদ্যাপীঠ গত বছরই মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। স্কুলের ৬০০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী। তাদের পড়াতেন সাকুল্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক-সহ পাঁচজন শিক্ষক। ছিলেন গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদের দু’জন অশিক্ষক কর্মচারী। আদালতের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন তাদের ছয়জনই। এখন চলছে ছাত্রছাত্রীদের পর্যায়ভিত্তিক পুনর্মূল্যায়নের পরীক্ষা। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের পক্ষে একা সেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন ওই চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরাই।

ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পার্থসারথি মিশ্র চাকরিহারা শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের এমন মানবিকতায় বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ শোনার পর উদ্বিগ্ন ছিলাম কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাবে। ওদের উদার মানসিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরীক্ষার পর খাতাগুলি কে দেখবেন, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কারা নেবেন, স্কুলের গেট খোলা, ঘণ্টা বাজানো, গেট বন্ধ করা এবং অফিসিয়াল কাজকর্ম এসব কে করবেন ভেবেই ঘোর দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

এরই পাশাপাশি, শহর-শহরতলি, জেলার স্কুলগুলিতে প্রাইভেট টিউটরদের আনাগোনা বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত দু’দিন বহু স্কুল–কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই অনেক প্রাইভেট টিউটর যোগাযোগ করেছেন, যারা এই সঙ্কটের সময়ে স্কুলগুলির পাশে দাঁড়াতে চান। প্রয়োজনে বিনা পারিশ্রমিকে বা যৎসামান্য পারিশ্রমিকে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করাতে রাজি আছেন তারা।দমদম, কলকাতা, হলদিয়া, কোচবিহার, মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, রাজ্যের নানা জায়গায় একই ছবি।এদের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত, কেউ কেউ এমফিল, এমনকী পিএইচডি পর্যন্ত করেছেন। শুধুমাত্র শিক্ষার স্বার্থেই স্কুলগুলির পাশে দাঁড়াতে চান। ছাত্রস্বার্থেই তাদের এই উদ্যোগ।

এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে প্রাইভেট টিউশনের হার দেশের মধ্যে সর্বাধিক। ২০০৯ সালে এসসিইআরটি–র রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট পড়ুয়ার ৮০ শতাংশের বেশিই প্রাইভেট টিউশনের উপরে নির্ভরশীল। শহরের তুলনায় গ্রামে এই ট্রেন্ড বেশি। তারপর ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় রিপোর্টে জানা যায়, এ রাজ্যে প্রাইভেট টিউশনের চাহিদা আরও বেড়েছে।এই পরিস্থিতিতে সবাই তাকিয়ে আছে আগামী দিনের দিকে।

 

 

Related articles

গ্রুপ সি ও ডি নিয়োগে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করল এসএসসি

রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করল। কমিশনের প্রকাশিত...

তিন জেলায় চলবে নজরদারি! এসআইআর পরিদর্শনে আসছে কমিশনের বিশেষ দল

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজ্যে আসছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পরিদর্শক দল। কমিশন সূত্রে জানা...

এসআইআর চলাকালীন এলাকায় থাকতে হবে মন্ত্রীদের, কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া (এসআইআর)। এই প্রক্রিয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের...

বিশ্বকাপ জিতেই মোটা অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার, আয়ে পলাশকে কতটা টেক্কা দিলেন স্মৃতি?

বিশ্বকাপ জিতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্মৃতি মান্ধানা (Smriti Mandhana) । আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস...
Exit mobile version