কী হয়েছিল কসবা ডিআই অফিসে, কেন বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল কসবা থানার পুলিশকে। প্রকাশ্যে সেই ভিডিও সময় অনুযায়ী তুলে ধরে ডিআই অফিসে শিক্ষকদের গুণ্ডাগিরির তথ্য পেশ করল কলকাতা পুলিশ। জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) রূপেশ কুমার একের পর এক ভিডিও, ছবি প্রকাশ করে স্পষ্ট করে দেন কীভাবে শিক্ষকের আন্দোলনে বহিরাগত মিশে গিয়ে কার্যত পুলিশের উপরই হামলা চালায় শিক্ষক সমাজ। ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ কলকাতা পুলিশ কর্মী। এরপরেও পুলিশকে মারধরের পরে কেউ সেই দায় স্বীকার করেনি, স্পষ্ট দাবি করেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তা সত্ত্বেও পুলিশের পক্ষ থেকে লাথি মারার ঘটনা অভিপ্রেত ছিল না, একথা কলকাতা পুলিশ আগেও জানিয়েছে। সেই মতো কসবা ডিআই অফিসের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী আধিকারিকের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কসবা থাকার আধিকারিক রিটন দাসকে। তার বদলে তদন্তকারী আধিকারিকের দায়িত্বে আসেন সঞ্জয় সিং। এই ঘটনায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ডাক দেওয়া শিক্ষককে গ্রেফতারের দাবি জানায় রাজ্যের শাসকদল।

শিক্ষকদের লাথি মারা নিয়ে যে প্রশ্ন বারবার তুলে গোটা অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করেছিল শিক্ষক সমাজ, সেই আন্দোলনের পিছনে শিক্ষকদের মিথ্যাচারকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হল কলকাতা পুলিশের তরফে। পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা স্পষ্ট বলেন, কর্মসূচি ছিল তালা লাগানোর। তারপরেও তালা ভাঙতে কসবার ডিআই অফিসে কেন গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। সাধারণত রাজনৈতিক আন্দোলনের থেকে শিক্ষকদের আন্দোলনের চারিত্রিক মূল পার্থক্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সিপি। তিনি স্পষ্ট বলেন, যাঁরা সমাজকে শিক্ষা দেন, তাঁদের থেকে এরকম হিংসাত্মক আচরণ কখনই প্রত্যাশিত ছিল না।

তবে শিক্ষকদের আন্দোলনে এমন হিংসার তদন্তে নেমেই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে কলকাতা পুলিশের। কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি রূপেশ কুমার দাবি করেন, আমাদের কাছে ভিডিও রয়েছে যে ওই হামলাকারীদের মধ্যে শিক্ষকদের পাশাপাশি বহিরাগতরা ছিলেন। এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই তাঁদের নাম পরিচয়ও পুলিশ প্রকাশ্যে আনবে বলে জানান তিনি।

ঠিক কীভাবে কসবা ডিআই অফিসের আন্দোলন হামলার চেহারা নিয়েছিল, তা পেশ করতে গিয়ে সময় ধরে ধরে তথ্য পেশ করা হয় কলকাতা পুলিশের তরফে। প্রথমে গার্ডরেল ব্যারিকেড ভাঙা হয় ১২.১৪ নাগাদ। এরপর রীতিমত জঙ্গি কায়দায় কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে ভাঙা হয় গেটে প্যাডলক ১২.১৮ মিনিট নাগাদ। সেখান থেকে হামলাকারীরা ধেয়ে যায় শেষ প্রতিরক্ষায় থাকা কোলাপসিবল গেটের দিকে। এই গেটের তালা ভেঙে দ্বিতীয় তলায় উঠে গেলেই ডিআই অফিসের সব কাগজের নাগাল পেয়ে যেত হামলাকারীরা। পুলিশের কর্তব্য ছিল সেই নথিপত্র হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা।



বেলা ১২.২৫ থেকে তালা ভাঙার একের পর এক চেষ্টা চালাতে থাকে হামলাকারীরা। আর সেখানেই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় কসবা থানার পুলিশ। ছিলেন আধিকারিক রিটন দাস। ১২.৩০ মিনিট নাগাদ পুলিশের উপর হামলা চালায় তথাকথিত শিক্ষক সমাজ। আহত হন সেই রিটন দাস। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের লাথি মারার অভিযোগ ওঠে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বল প্রয়োগ করে বলে দাবি করেন জয়েন্ট সিপি ক্রাইম। সেই সঙ্গে তিনি জানান, কলকাতা পুলিশের ১৩ কর্মী ওইদিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন। বুধবারের ঘটনায় কসবার ডিআই অফিসে হামলায় দায়ের হয়েছে দুটি মামলা। তবে এখনও কেন কোনও গ্রেফতারি হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তরে সিপি মনোজ ভার্মা জানান, কলকাতা পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। গ্রেফতারি তদন্ত প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। প্রয়োজন হলেই গ্রেফতার করা হবে।


তবে কসবার ঘটনায় যারা হিংসাত্মক ভূমিকা নিয়েছিলেন সেই বামনেতাদের গ্রেফতারির দাবি জানান তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি জানান, শিক্ষকরা পেট্রোল এনে জ্বালাবার কথা বলেছে। যিনি পেট্রোল ঢালার কথা বলেছেন তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। আবেগতাড়িত জনতাকে যিনি উত্তেজিত করেছেন তাঁকে একশো শতাংশ গ্রেফতার করা উচিত। তিনি প্রতাপ রায়চৌধুরী। সিপিআইএমের ক্যাডার।

–

–

–
–

–
