কোনও পাসপোর্ট নেই, আছে জালিয়াতের অভিযোগ! সোহিনীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বিতানের দাদা বিভু

জালিয়াতির মামলা চলছে আদালতে। কোনও বৈধ পাসপোর্ট নেই। নেই ভারতে থাকার নাগরিকত্বের নথিও। উল্টে ভোটার কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে বিতান অধিকারী (Bitan Adhikari) স্ত্রী সোহিনীর বিরুদ্ধে। সোহিনীর মায়ের বিরুদ্ধে রয়েছে পরোয়ানা। বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সদ্য কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত বিতানের দাদা বিভু অধিকারী (Bibhu Adhikari)।

মঙ্গলবার পহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিহত হন বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা বিতান। তাঁর সঙ্গেই বেড়াতে গিয়েছিলেন স্ত্রী সোহিনী ও সাড়ে তিন বছরের পুত্র সন্তান। তাঁরা নিরাপদেই ফিরে এসেছেন। তবে ভাইয়ের বউয়ের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ বিভুর।

কী অভিযোগ
বিভুর কথায়, সোহিনী বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁর ভারতে থাকার কোনও বৈধ পরিচয়পত্র নেই। সেই কারণেই ফ্লোরিডায় থাকার ভিসা বাতিল হয়ে গিয়েছে। ২০২৩-এর জানুয়ারিতেই কলকাতায় ফিরতে  বাধ্য হন সোহিনী। তখন থেকেই ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু সেই আবেদনও খারিজ হয়েছে বলে অভিযোগ।

সোহিনীর সব ভারতে থাকার নথি নকল
পেশায় আইনজীবী বিতানের দাদা জানান, সোহিনীর (Sohini Adhikari) সব ভারতে থাকার নথি নকল। তাঁর বিরুদ্ধে পাসপোর্ট বাতিল-সহ একাধিক ফৌজদারি ধারায় মামলা চলছে। পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণেই ফ্লোরিডা থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হোন সোহিনী। এরপর বারবার তাঁকে পাসপোর্ট অফিসের সামনে সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই হাজিরা এড়িয়ে যান সোহিনী। উল্টে হাইকোর্টে মামলা করেন। কিন্তু সেই মামলাতেও সোহিনীকে পাসপোর্ট অফিসের সামনে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা যায় এবং সেই মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে বলে দাবি বিভুর। ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে ভারতে থাকার জন্য যে আবেদন সোহিনী করেছিলেন, সেটাও খারিজ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

সোহিনীর মায়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ
বিভুর দাবি, ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি জাল করে বৈষ্ণবঘাটার ফ্ল্যাটটি কেনেন সোহিনীর মা ভারতী রায়। কিন্তু সেটা ধরা পড়ে যায়। বাংলাদেশের কোনও নাগরিক নিয়ম অনুযায়ী ভারতে সম্পত্তি কিনতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধেও জালিয়াতির মামলা হওয়ায় বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন ভারতী- অভিযোগ বিভুর (Bibhu Adhikari)। ভারতী রয়েছেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে।

সোহিনী ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে দাবি বিভুর
২০১৭ সালের যখন বিতানের সঙ্গে সোহিনীর বিয়ে হয় তখন ভারতের থাকার ভুয়ো নথি দেখানো হয়েছিল। সোহিনী পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিভু। তাঁর কথার, ২০১৯ এই ঘটনা সামনে আসে। বিষয়টি নিয়ে তিনি আপত্তি জানালে মা-বাবার সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে বাঘাযতীনে থাকেন বিভু। আর বাবা-মা থাকেন বৈশালীপার্কের কৈলাস ঘোষ রোডে। তবে ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গেও বাবা-মায়ের যোগাযোগ ক্ষীণ বলে ইঙ্গিত দেন বিভু।

সোহিনীর বয়ান নিয়েও সন্দেহ
পহেলগামে জঙ্গি হামলার বিষয় নিয়েও বারবার সোহিনী বয়ান বদল করছেন বলে অভিযোগ বিভুর। তিনি বলছেন, প্রথমে যেটা বলা হয়েছিল, জঙ্গি এসে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, সেটাই হয়ত ঠিক। পরে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে বয়ান বদল করছেন সোহিনী। দুদিন পরে গেলে ফের বয়ান বদল করবেন- অভিযোগ বিতানের দাদার।

নিহত বিতানের পরিবারকে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে যে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে, তা স্ত্রী ও বাবা-মাকে ভাগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। এই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। অতীতের উদাহরণ টেনে এক্ষেত্রে দরিদ্র বাবা-মাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য কুণালের। এই প্রেক্ষিতে একই দাবি জানিয়েছেন বিতানের দাদাও। তাঁর দাবি, বাবা-মাও যেন আর্থিক সাহায্য পান।

শুভেন্দুর কাছে আর্জি কেন?
সদ্য স্বামীহারা সোহিনীর প্রতি সমবেদনা রয়েছে বিভুর। বিভুর দাবি, বারবার নিজের নিরাপত্তার আর্জি জানাচ্ছেন সোহিনী। কিন্তু যেখানে কলকাতায় রাস্তায় রাত ১০-১১টাতেও মহিলারা নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করতে পারেন, সেখানে সোহিনীর ভয় কীসের! আসলে তাঁর কাছে ভারতে থাকার কোনও বৈধ নথি নেই। বারবার ভারতের নাগরিকত্বের আর্জির খারিজ হয়েছে। সেই কারণেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন সোহিনী। যদি তাঁকে ধরে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। বিভুর কথায়, হয়ত শুভেন্দুও এই বাংলাদেশের নাগরিকত্বর বিষয়টি জানেন না।

আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন না কেন?
বিশ্ব বাংলা সংবাদের পক্ষ থেকে বিভুর কাছে প্রশ্ন ছিল, তিনি এই পুরো বিষয়টা নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন না কেন? তাঁর কথায় পরিবারের উপর দিয়ে একটি ঝড় বয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের কাছে সোহিনীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিই যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। তাঁর অভিযোগের সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথি রয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিভু অধিকারী।