১৭ বছর বিএসএফ-এ (BSF) কর্মরত পূর্ণমকুমার সাউ। দুশ্চিন্তা থাকলেও তাঁকে নিয়ে এমন আশঙ্কার জীবন কোনওদিনও কাটাননি পরিবারের মানুষগুলো। এমন একটি ভুল তিনি করে ফেলেছেন যার জন্য ‘শত্রুদেশে’ বন্দি। এমন একটি সময়ে, যখন পাকিস্তানের (Pakistan) উপর প্রতিশোধের খেলায় ভারত। সহজে কী তারা ছেড়ে দেবে রিষড়ার (Rishra) পূর্ণমকুমারকে, প্রশ্ন পরিবারের। বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের পাশে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

বর্তমানে পঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরে পোস্টিংয়ে রয়েছেন হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা বিএসএফ পূর্ণমকুমার সাউ। বুধবার বিকেলে ‘ভুল করে’ তিনি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছিলেন। তারপরই তাঁকে আটক করে পাকিস্তানি সেনা। দুদেশের ফ্ল্যাগ মিটিং-ও (flag meeting) হয়েছে এনিয়ে। কিন্তু মেলেনি কোনও উত্তর। কাশ্মীরের পহেলগামে (Pahalgam) জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক মারা গিয়েছেন। সেই ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। পালটা প্রত্যাঘাতের বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। তার মধ্যেই ভারতীয় জওয়ানের পাকিস্তানে আটকে পড়ার খবর সামনে আসে। আর তাতেই তাঁর ঘরে ফেরা নিয়ে আশঙ্কায় বাড়িতে অকাল অরন্ধন।


স্ত্রী রজনী সাউ বলছেন, স্বামী ১৭ বছর ধরে বিএসএফের চাকরি করছেন। আমি চাই তিনি তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসুক। কাঁদতে কাঁদতে মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন পূর্ণমের মা দেবন্তী সাউ। নির্বিকার হয়ে বসে রয়েছেন স্ত্রী রজনীও। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। ‘ঘরের ছেলে ফিরবে কখন?’ দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে সকলেরই। পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ বলেন, ছেলেকে নিয়ে আমি এখন খুব চিন্তিত। ছেলের কোনও খবর আমি পাইনি। কারও সঙ্গে কথাও হয়নি। বিএসএফ (BSF) আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হয়নি।

হুগলি জেলা সভাপতি অরিন্দম গুই, রিষড়া পুরসভার চেয়ারম্যান বিজয়সাগর মিশ্র, হুগলি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শুভদীপ মুখোপাধ্যায়রা ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। রাজ্য সরকার ওই পরিবারের সঙ্গে সবসময় আছে। যে কোনও প্রয়োজনে রাজ্য সরকারকে পাওয়া যাবে, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। জওয়ানের স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। সবরকমভাবে ওই পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, সেই কথাও বলা হয়েছে। কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও ওই জওয়ানের বাড়িতে যান। রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সঙ্গেও ফোনে এই বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান।


কিন্তু পহেলগাম পরবর্তী পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় সেনাকে নিয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ চোখে পড়েনি কেন্দ্রের তরফে। তার থেকেও তাঁদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে বিএসএফ-এর নীরবতা। ভোলানাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah), প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর (Rajnath Singh) কাছে আবেদন করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। পাকিস্তানের উপরে কোনও ভরসা নেই, ছেলের সঙ্গে অনেক কিছুই হতে পারে। আমার ছেলেকে যে কোনও প্রকারে ভারতে নিয়ে আসা হোক। আবার দেশের হয়ে লড়ুক সে।

–

–

–

–

–

–
