সেদিন পহেলগামের ঘটনা। মুসলিম যুবক নিজের জীবন বাজি রেখে বাঁচিয়েছিলেন বিজেপি (BJP) নেতার স্ত্রী ও কন্যাকে। তখন পরপর গুলি চলছে। জঙ্গিরা ২০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে। ‘গাইড’ নাজাকাত পরোয়া করেননি সেসব। অকুতোভয়ে জঙ্গিদের চোখে ধুলো দিয়ে সাইকেলে চাপিয়ে বিজেপি নেতার স্ত্রী-কন্যাকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। বিজেপি নেতারা এরপরও আপনারা বিভাজনের খেলা খেলবেন? হিন্দু-মুসলিম পৃথক করবেন? ধর্ম নিয়ে উস্কানি দেবেন? বিজেপি নেতার মুখে সেদিনের ঘটনার বিবরণ শুনলে আর অন্তত ধর্মীয় মেরুকরণের খেলা খেলবেন না মনুষ্যত্ব থাকলে। পহেলগামে যখন পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল জঙ্গিরা, তখন জীবন বাজি রেখে দেবদূতের মতো বিজেপি নেতার স্ত্রী-কন্যার সামনে হাজির হন স্থানীয় গাইড নজাকাত আহমেদ শাহ (Najakat Ahmed Shah)। নাজাকাতের সেই বীরত্বের কথা জানিয়েছেন খোদ ছত্তিশগড় বিজেপির (BJP) যুব মোর্চার নেতা অরবিন্দ আগরওয়াল।

সেদিনের ঘটনার পূর্ণ বিবরণ শোনার আগে জেনে নিন কে এই নাজাকাত (Najakat Ahmed Shah)। নাজাকাত শুধু স্থানীয় গাইড নন, তাঁর আরও একটা পরিচয় হল তিনি সইদ আদিল হুসেন শাহের খুড়তুতো ভাই। পর্যটকদের বাঁচাতে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণ হারিয়েছেন যে আদিল। পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে তিনি যেতেন বৈশরণ ভ্যালিতে। আর নাজাকাত ছিলেন গাইড। বিজেপি নেতা অরবিন্দ বন্ধুদের সঙ্গে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন।মঙ্গলবার সপরিবারে ছিলেন বৈশরণ ভ্যালিতে। তাঁদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন নাজাকাত। অতর্কিতে জঙ্গি-হামলা শুরু হতেই কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে নিরাপদ জায়গায় ছিলেন অরবিন্দ। তাঁর স্ত্রী-কন্যা ছিলেন ঘটনাস্থলে। সেই মুহূর্তে বছর আঠাশের স্থানীয় গাইড নাজাকত আহমেদ শাহ তাঁদের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন।


ছত্তিশগড়ের চিরিমিরি শহরের বাসিন্দা বছর ৩৫-এর অরবিন্দ জানান, আমি তখন ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ গুলি চলা শুরু হতেই আশপাশের পর্যটকরাই আমাকে টেনে সরিয়ে নেয়। আমি বেঁচে যাই। কিন্তু স্ত্রী ও মেয়ে তখন কিছুটা দূরে। নাজাকত সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেন। আমার মেয়ে ও আমার বন্ধুর ছেলেকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেন। যতক্ষণ গুলি চলে, মাটিতে মিশে জাপটে ধরে রাখেন ওদের। তারপর নাজাকত কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে তাদের বার করে সাইকেলে চাপিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। আবারও ফিরে আসেন বৈসরনে। অরবিন্দর স্ত্রী পূজার তখনও খোঁজ নেই। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে পূজাকে উদ্ধার করে অরবিন্দর পরিবারকে নিরাপদে শ্রীনগরে পৌঁছে দেন নাজাকাত। বিজেপি নেতাই বলছেন, নাজাকাত না থাকলে যে কী হত জানি না। স্ত্রীর জামাকাপড় ছিঁড়ে গিয়েছিল, নতুন পোশাক দেন স্থানীয়রাই। এই সাহসিকতার পরও নাজাকাত নির্বিকার। এরপর অন্তত বিজেপি নেতারা একটু বুঝুন। বন্ধ করুন ধর্মীয় বিভাজনের খেলা।

–


–

–

–

–

–

–
