বিজেপির থেকে টাকা, সিন্ডিকেটে যোগ! বহিষ্কারের পরেই CPIM-র বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বংশগোপাল

মহিলাঘটিত অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত দীর্ঘদিনের সিপিআইএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী (Banshagopal Chowdhury)। রবিবার সিপিআইএমের (CPIM) মুখপত্র ‘গণশক্তি’তে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার পরেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বংশগোপাল। বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিজেপি সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিআইএমের একাংশ। বিজেপির থেকে টাকাও নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বংশগোপালের অভিযোগ, সিন্ডিকেট ব্যবসা, বালি খাদান থেকে তোলাবাজি- সবই চালাচ্ছে দল। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলেও সাংবাদিকদের জানান বংশগোপাল চৌধুরী।

বারবার সংশোধনের চেষ্টা করার পরেও সংশোধিত না হওয়ায় গুরুতর অবক্ষয়ের কারণে রাজ্য কমিটির আইসিসির সুপারিশক্রমে বংশগোপাল চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হল- ‘গণশক্তি’তে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে সিপিএম। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শাণিয়েছেন বংশগোপাল। তাঁর দাবি, দল থেকে কেউ তাঁকে এ বিষয়ে জানায়নি। মধ্যরাতে সংবাদ মাধ্যম থেকে তিনি এ খবর জানতে পেরেছেন। সকালবেলায় ‘গণশক্তি’তে দেখেছেন বহিষ্কার হওয়ার খবর। এই ঘটনায় সরাসরি দলের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বংশগোপাল। তাঁর মতে, তাঁর রাজনৈতিক জীবন নষ্ট করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র। তিনি প্রতিহিংসার শিকার। দলের মধ্যে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বংশগোপালের।

কিন্তু বংশগোপালেকেই বা টার্গেট করা হচ্ছে কেন? এর উত্তরে বংশগোপাল বলেন, দলের অনেক অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করেছেন তিনি। এরপরই বিস্ফোরক অভিযোগ করেন দীর্ঘদিনের সিপিআইএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী। বিজেপির পাশে দাঁড়ানো, তাদের ঘর থেকে টাকা নিয়ে আসাটা কোথাকার নৈতিকতা- প্রশ্ন তোলেন বংশগোপাল। সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দলের একাংশ সেটা কোথাকার নৈতিকতা? দলের যুব প্রজন্মের নেতারা বালি খাদান থেকে তোলা তোলেন বলেও অভিযোগ করেছেন বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি এসবের প্রতিবাদ করেন। সেই কারণেই তাঁর ওপর একাংশের রাগ। তাঁকে বদনাম করতেই এই ষড়যন্ত্র বলে দাবি বংশগোপালের।

সমাজমাধ্যমে দলেরই এক নেত্রীর সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমানের বর্ষীয়ান সিপিএম নেতার ‘অশ্লীল’ চ্যা ট প্রকাশ্যে আসে (চ্যাটের সত্যতা যাচাই করেনি বিশ্ববাংলা সংবাদ)। এই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি সিপিআইএমে-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির প্রাক্তন কাউন্সিলর রত্না দাস। তাঁর ভরসা ছিল দলের উপর। যদিও বংশগোপালের দাবি ছিল, এটা তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ষড়যন্ত্র হয়েছে। দলের মধ্যে থেকেই বিরুদ্ধাচারণ হয়েছে। তিনিও বিষয়টি সেলিমকে জানিয়েছিলেন। দলের রাজ্য সম্পাদকের পরামর্শ মতোই চলছিলেন তিনি।

রত্না জানান, তাঁর ফেসবুক পোস্ট দেখে ফেসবুক মেসেঞ্জারে স্তুতি করতেন বংশগোপাল। জেলা নেত্রী তাতে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এর পরেই শুরু হয় মেসেঞ্জারে অশ্লীল মেসেজ-অভিযোগ রত্নার। এটা কি সত্যিই চেনা সিপিএম নেতা? রত্না বলেন, সেটা পরখ করতেই না কি হোয়াটস আপ নম্বর চান তিনি। এরপরই অশ্লীল মেসেজের বন্যা। আর সেটা সদ্য নয়, সূত্রপাত নভেম্বরে। তখনই দলকে জানান রত্না। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে যোগযোগ করেন সিপিএম নেত্রী। সেলিম তাঁকে বলেন, তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

দলীয় নেত্রীকে দেওয়া কথা রেখে বহিষ্কার করা হল বংশগোপাল চৌধুরীকে। তার বিরুদ্ধে ওটা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে ও জানিয়েছেন বংশগোপাল।