এটাই সুযোগ: হামলার দায় না এড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জেদ দেখালেন ওমর আবদুল্লা

কাশ্মীরের কাঠুয়া থেকে কুপওয়ারা পর্যন্ত এমন কোনও গ্রাম নেই যেখানে অন্তত চারজন পথে বেরিয়ে এই কথা বলেনি, আমরা হামলা চাইনি, আমাদের নামে হামলা চাইনি

জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুতে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার থেকে বেশি সমব্যথী আর কোনও বিধানসভা হতে পারে না। ২৫ বছর আগে এই বিধানসভা চত্বরেই গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাই এই বিধানসভাই পহেলগাম হামলা (Pahalgam attack) পরবর্তীতে বিশেষ অধিবেশনের মর্ম বোঝে, সোমবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে মনে করিয়ে দিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা (Omar Abdullah)। কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা থেকে কাশ্মীরবাসীর ঘুরে দাঁড়ানোর, দিন বদলের লড়াইকে ঠিক যেন কোনও চলচ্চিত্রের মতো ভরা বিধানসভায় তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে দিলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যা বদলাতে চাওয়া কাশ্মীরবাসীর ইচ্ছাশক্তিকে আঘাত করে।

পহেলগাম হামলা পরবর্তী পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিগির তুলে হাওয়া গরম করার চেষ্টায় কেন্দ্রের মোদি সরকার। সেই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরবাসীর অভিভাবকের ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁর অতিথি হয়ে আসা আসমুদ্র হিমাচলের মানুষকে সুস্থভাবে ঘরে ফিরিয়ে না দিতে পারার দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন এদিন ওমর। যদিও কাশ্মীরের নিরাপত্তা থেকে শাসক পরিচালন ব্যবস্থা তাঁর হাতে নেই, তবু তাঁরই আমন্ত্রণে কাশ্মীরের অতিথি ছিলেন তাঁরা, প্রত্যেকের নাম বিধানসভায় তুলে ধরে ক্ষমা চেয়ে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই হত্যার প্রতিবাদে এক অন্য কাশ্মীরের দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর। তাঁর কথায়, কাশ্মীরের কাঠুয়া থেকে কুপওয়ারা পর্যন্ত এমন কোনও গ্রাম নেই যেখানে অন্তত চারজন পথে বেরিয়ে এই কথা বলেনি, আমরা হামলা চাইনি, আমাদের নামে হামলা চাইনি। এই কাশ্মীরিদের কেউ প্রভাবিত করেনি, তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়েছেন। আর এই স্বতঃস্ফূর্ততাতেই নতুন আশার আলো দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।

বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে (special session) ওমর দাবি করেন, আতঙ্কবাদ তখনই থামবে যখন মানুষ প্রশাসনের পাশে থাকবে। আর এটাই সেই সময়। যখন মানুষ প্রকাশ্যে জঙ্গি হামলার (terrorist attack) নিন্দা করে বলছে এই হামলা আর যার লাভের জন্যই হোক, আমার জন্য হয়নি। এই পরিস্থিতিতে এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না যা এই মানুষগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে বিপথে চালিত করে। তাঁদের আবেগকে আঘাত করে।

পক্ষান্তরে কাশ্মীরে যথেচ্ছ সাধারণ মানুষের উপর উৎপীড়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সরকারকে সাবধান করে দেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন নিজের দাবির কথা। তিনি জানান, এই পরিস্থিতি বা ২৬ জনের মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে কখনই আমি কাশ্মীরের রাজ্যের (statehood) দাবি তুলব না। কারণ এটা সময় কাশ্মীরের দীর্ঘমেয়াদী জঙ্গি সমস্যার সমাধানের। যাতে আর কোনও কাশ্মীরি নিজেদের মাথায় জঙ্গি কলঙ্ক নিয়ে না এগোয়।