Monday, November 10, 2025

পুরীর দেবদাসী ইতিহাস: গৌরব নাকি অবমাননার ছায়া!

Date:

Share post:

ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে এমন বেশ কিছু অধ্যায় আছে যা ঐতিহাসিক হলেও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তার মধ্যে পুরীর জগন্নাথধামের ‘দেবদাসী প্রথা’ অন্যতম। মন্দিরের দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য শূদ্রশ্রেনীর ঋতুমতী কন্যাদের দেবতার নামে উৎসর্গ করা হত। কিন্তু এই কুমারী কন্যারা ধীরে ধীরে হয়ে উঠত মন্দিরের পুরোহিত ও পারিষদ বর্গের বিকৃত যৌন লালসার শিকার।

যদিও সর্বসমক্ষে তাঁদের পরিচয় ‘দেবদাসী’ বা ‘নর্তকী’। ভারতে দেবদাসী প্রথার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। প্রায় ৮০০ বছর ধরে চলে আসা এই প্রথা শেষ হয় ২০১৫ সালে, শেষ দেবদাসী শশীমণির মৃত্যুর সঙ্গে। তবে নব্বইের দশকে মন্দির কর্তৃপক্ষ আরও একবার এই প্রথা জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করেছিল, কিন্ত তা সফল হয়নি।

পুরীর মন্দিরে দেবদাসীকে মহরি নামেও ডাকা হয়। ৩৬ নিয়োগের মধ্যে মহরি সেবা মূলত দেবদাসীদের সেবা। শুরুতে জগন্নাথদেবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরেই তাঁদের নাচগানের জন্য আগের দেবদাসীদের থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হত। তবে দেবদাসীদেরও বিভিন্ন কাজের ভাগ ছিল। গর্ভগৃহে জগন্নাথের খাওয়ার সময় যারা গান করতেন তাঁদের ‘গায়নী’ বলা হত। প্রেক্ষাগৃহে যাঁরা নাচতেন তাঁদের বলা হত ‘নাচুনি’, ‘পাতুয়ারি’ হলেন, যাঁরা ভগবানের যাত্রায় নাচতেন। এছাড়াও গর্ভগৃহের বাইরে গান করতেন তাঁদের বলা হত ‘বাহার গায়নী’।

বিশাল মন্দিরের সম্পত্তির মালিক হয়েও মৃত্যুর পর নিজের বস্ত্র ছাড়া আর কোন কিছুরই অধিকার থাকে না তাঁর। কথিত আছে জীবিত ৫ দেবদাসী প্রভু জগন্নাথের স্বপ্নাদেশে মন্দিরে আসেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। এরপর উক্ত বালিকারা বিভিন্ন প্রথার মাধ্যমে প্রভু জগন্নাথকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নেন। দীর্ঘদিন নৃত্যগীত চর্চা করে শিক্ষা শেষে তাঁরা নিজেদের প্রভু জগন্নাথের পায়ে নিবেদন করে দেন।দেবদাসীদের জন্য প্রচলিত একটি প্রথা ছিল, স্বামীরূপে জগন্নাথকে লাভ করার পর তাঁর সন্তানের জননী যাতে না হতে পারেন তার জন্য ছিন্ন করে দেওয়া হত দেবদাসীদের নাড়ি। প্রধান দেবদাসী অথবা মাহিরী শ্বেত শুভ্র বেশ পরিধান করেন। তাঁদের বাসস্থানের সর্বত্র সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা।

মিথ আছে, এঁদের মৃত্যু হয় বার্ধক্য জনিত কারণে। চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না তাঁদের। এমনকী কখনও কলের জলও ব্যবহার করেন না তাঁরা। রাতের তৃতীয় প্রহরে বস্ত্রে মুখ ঢেকে সমুদ্রের অজানা তটে স্নান সেরে নেন তাঁরা। মৃত্যুর পর দেবদাসীদের দেহ কখনও দাহ করা হয় না। প্রভু জগন্নাথের স্বপ্নাদেশেই তাঁদের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় সমুদ্রে।

এককালে দেবদাসীরা ছিলেন খুবই সম্মানীয়। তাঁদের ছিল না কোনও বৈধব্যের যন্ত্রনা। স্বাধীনতার আগে থেকেই বহু চেষ্টা করে এই প্রথা রদ করা হয়। মদনমহন মালব্য থেকে গান্ধীজি- সবাই দেবদাসীদের ‘পতিতা’ বলেই তুলনা করতেন। তবে, প্রথা উঠে গিয়েছে বলে শোনা গেলেও, এখনও মন্দিরে কান পাতলে শোনা যায় দেবদাসীদের কাহিনি।

আরও পড়ুন – ট্যাংরাকাণ্ডের ছায়া মার্কিন মুলুকে! স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী ভারতীয় উদ্যোগপতি

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

অচলায়তন ভেঙে মুক্ত চিন্তাভাবনার অঙ্গন হবে বাংলা: রাখি-রিয়াকে শুভেচ্ছা তরুণদের আইকন অভিষেকের

তিনি যুব সমাজের আইকন। তৃণমূলের (TMC) সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) ঘিরে সব সময়ই তরুণ প্রজন্মের জনজোয়ার। আর...

পাঁচবারের কাউন্সিলর, তবু নাম উড়ে গেল ভোটার তালিকা থেকে! চাঞ্চল্য খড়দহে

শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সেই তালিকায় তাঁর নাম যে ছিল, তার প্রমাণ, সেবার তিনি কাউন্সিলর (councilor) নির্বাচিত...

চেন্নাই ছেড়ে দিচ্ছে জাদেজাকে! জল্পনার মধ্যেই উধাও ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলও

আগামী ১৫ ডিসেম্বর আইপিএলের মিনি নিলাম(IPL Mini Auction 2026) হতে পারে। গত বছরই মেগা নিলাম হয়েছে। ফলে সব...

ইডেনে টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল! আশার সঙ্গে রয়েছে আশঙ্কাও

টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে বোর্ডের অন্দরে।  ইতিমধ্যেই প্রাথমিকভাবে কয়েকটি ভেন্যুকে বেছে নিয়েছে বিসিসিআই। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের...