সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে জরুরি সার্কুলার পাঠিয়ে দল সতর্কতা জারি করেছিল তৃণমূল (TMC)। সার্কুলারে বলা হয়েছিল, সম্প্রতি একদল লোক বাড়ি বাড়ি ঘুরে NGO বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে নানা সামগ্রী যেমন মশলা বা অন্যান্য দ্রব্য বিনামূল্যে বিতরণ করছে। বিনিময়ে সংগ্রহ করছে ভোটারদের নাম, ফোন নম্বর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই অভিযোগই সত্যি হল। বাঁকুড়ায় হাতেনাতে ধরা পড়লেন দুই মহিলা- সহ মোট পাঁচ জন। পুলিশ সূত্রে খবর, বাঁকুড়ার (Bankura) ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

হরিয়ানার একটি সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে ওই পাঁচজন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নাম করে তাঁরা স্থানীয়দের আধার এবং ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। এতেই সন্দেহ হয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক টুটুন দাসের। তিনি বিষয়টি বাঁকুড়া (Bankura) সদর থানায় জানান। পুলিশ এলাকায় গিয়ে ৫ জনকে আটক করে। পরে গ্রেফতার করা হয়।

টুটুন বলেন, “পাঁচ জন বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার ও আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করছিল। সন্দেহ হওয়ায় থানায় লিখিত অভিযোগ করি।“ পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম শিখা মাজি, আরতি মোদক, হারাধন লোহার প্রবীর ঘোষ, ও সুদীপ মণ্ডল। সুদীপের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল এলাকায়। প্রবীর এবং হারাধনের বাড়ি বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার ভগবানপুর গ্রামে। ধৃত দুই মহিলা বাঁকুড়া শহরের বিবেকানন্দপল্লি এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সুরক্ষা সংহিতার ১৮০ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩২৯(৪), ৩১৯(২), ৩১৮(৪), ৩৫১(২), ৩(৫), ৬১(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃতদের সোমবার বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হল বিচারক ২ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি জানান, “ধৃতেরা নিজেদের সমীক্ষক বলে দাবি করে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নাম করে ওই এলাকার মানুষদের কাছ থেকে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি ও তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। অভিযোগ পেয়ে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতেরা যে সংস্থার নাম করে এই কাজ করছিলেন, সেই সংস্থার এখনও কোনও হদিস মেলেনি। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে আরও বিশদ তথ্য জানার চেষ্টা করছি।“ যদিও সুদীপ বলেন, “একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী হিসাবে জনমত সমীক্ষা করতে বাঁকুড়ায় এসেছিলাম। সমীক্ষার অনুমতি চাইতে গেলে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে। কেন আমাদের গ্রেফতার করেছে, তা আমরা জানি না।“
আরও খবর: ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য পাকিস্তানে পাচারের অভিযোগ! দিল্লি থেকে গ্রেফতার CRPF জওয়ান

বহিরাগতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজ্য ঢুকে যেন বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে, তার জন্য় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। সোমবার, সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আগেই এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন। দলের তরফ থেকেই সব জায়গার নেতা-কর্মীকে সার্কুলার দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এলাকায় অপরিচিত মুখ দেখলে, তাঁর পরিচয় যাচাই করে নেওয়া উচিৎ। কারণ, বেশ কিছু লোক অসৎ উদ্দেশ্যে ঘোরফেরা করছে। কুণালের অভিযোগ, এর আগেই এই ধরনের কাজের জন্যে বিনপুরে যাঁরা ধরা পড়েছিলেন, তাঁরা আরএসএস-এর সদস্য। এঁরা কেউ এসে বলছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সি থেকে এসেছি, কেউ বলছেন এনজিও থেকে এসেছি। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোথাও মশলা, আবার কোথাও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করে পরিবর্তে তাঁদের নাম, ফোন নম্বর ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছেন। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। পাশাপাশি, দলের তরফ থেকেই সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

–

–

–

–

–

–
–
–
–