তেরঙ্গা উড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীরে চেনাব রেল সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কৃতিত্ব নিতে করেন ফোটো শুটও। কিন্তু জানেন কি, এই কাজের কৃতিত্বের দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী (Rail Minister) থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) বাজেট বক্তৃতায় এই কাটরা-কাজিগুন্ড বিভাগের পর্যালোচনা কাজ শুরুর কথা ঘোষণা করেন। সূচনাটা সেই দিনই তিনি করে দেন। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, তথ্য প্রমাণ বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই এই প্রকল্পের সূচনা।


জম্মু কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার চন্দ্রভাগা স্থানীয় নাম চিনাব নদীর উপর তৈরি হয়েছে চেনাব ব্রিজ। তার উপর দিয়ে চলা রেলপথের মাধ্যমে সরাসরি জুড়ে গিয়েছে শ্রীনগর এবং কাটরা। নতুন লাইনে ছুটছে একজোড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ফলে মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছনো যাচ্ছে শ্রীনগর থেকে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে নিকটবর্তী কাটরা স্টেশন। শুক্রবার, নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেন এই উধমপুর-কাটরা-শ্রীনগর-বারামুলা রেলপথ প্রকল্প। যেটা তিনি উদ্বোধন করেন সেটি কাটরা-কাজিগুন্ড বিভাগের অংশ। রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ২০০৯-র বাজেট বক্তৃতায় এই কাটরা-কাজিগুন্ড বিভাগের পর্যালোচনা কাজ শুরুর কথা ঘোষণা করেন। জানান, শীঘ্রই অনন্তনাগ-কাজিগুন্ড অংশটি উদ্বোধন হবে।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে প্রথমবার কাশ্মীর ভ্যালিতে ঢোকে রেল। সেই সময় উদ্বোধন হয় অনন্তনাগ-কাজিগন্ড অংশ। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতার হাত ধরেই এই প্রকল্প নতুন পথ পায়।

এর পরে, ২০১০ সালের বাজেট বক্তৃতায় কাজটি পর্যালোচনার পরে অনুমোদন করেন। জানান, উধমপুর-কাটরা অংশের কাজ জোরকদমে শুরু হবে।
আরও খবর: জাতীয় সড়কে নামল হেলিকপ্টার! কেদারনাথ যাওয়ার পথে ফের বড়সড় বিপত্তি

২০১১ সালের বাজেট বক্তৃতায় জম্মু ও কাশ্মীরে ব্রিজ ফ্যাক্টরি এবং জম্মুতে ইনস্টিটিউট ফর টানেল অ্যান্ড ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরি করার কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। কারণ ওই এলাকায় রেল লাইন পাতার জন্য অনেক টানেল নির্মাণের দরকার ছিল। এর পাশাপাশি, কাশ্মীরে একটি ইনস্টিটিউট অফ টানেল অ্যান্ড ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংর কথাও জানান মমতা।

২০১২- তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী। তিনি রেল বাজেটে ঘোষণা করেন যে কাশ্মীর রেল প্রকল্প বৈদ্যুতিকরণের করা হবে। তার জন্য ৮২৮ কোটি বরাদ্দও করেন তিনি।

এই পথ ধরেই চেনাব ব্রিজ নির্মাণ ও উদ্বোধন হল। সুতরাং যে ভাবে মোদি এটিকে নিজের সাফল্য বলে ঢাক বাজাচ্ছেন, ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলে জানা যাবে এই পুরো সূচনাই হয়েছিল রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। সুতরাং, বিজেপি মোদিকে কৃতিত্ব দেওয়ার আগে পিছন ফিরে দেখুন- মত তৃণমূলের। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, তথ্য প্রমাণ বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই এই প্রকল্পের সূচনা। সংসদের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্পের অগ্রগতির কথা জানান তৎকালীন রেলমন্ত্রী। শুধু এটাই নয়, মমতা সেই সময় বহু রেলপথই চালু করেন বা প্রকল্পের সূচনা করেন। সময়ের সঙ্গে সেগুলি পরিণতি পেয়েছে। সুতরাং এই দাবি ন্যায্য যে মোদির হাতে উদ্বোধন হওয়া রেলপথের সূচনা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতাই। 

দলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন চেনাব রেল প্রকল্প সম্পর্কে ছ’টি বিষয় যা কখনও কেউ বলেনি বা মিডিয়াও তুলে ধরেনি। সেগুলি হল—
১. ঐতিহাসিক এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২. এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করেছেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩. অনন্তনাগ থেকে কাজিগুন্ড (২০০৯) সেকশনের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪. ২০১০ সালে কাটরা-কাজিগুন্ড সেকশনের পর্যালোচনা করে পুরোদমে কাজ শুরুর অনুমোদন দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫. চেনাব রেলসেতু তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক জোর দিয়েছেন এবং তাকে নতুন জীবন দিয়েছেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬. ২০০৯ সালে কাটরা-কাজিগুন্ড সেকশনের উদ্বোধন এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি পাঠিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৯-২০১০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদকে সমস্ত তথ্য পরিসংখ্যান এবং নথি দিয়ে জানিয়েছিলেন চেনাব রেলপ্রকল্প এবং তৎসংলগ্ন টানেল সহ কাটরা-কাজিগুন্ড রেলসেতু নির্মাণ বিশেষজ্ঞ কমিটি পাঠানো এবং তার খরচ সম্পর্কে। কাজিগুন্ড-বারামুলা রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর। এই প্রোজেক্টের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে। যার পরিমাণ ছিল ১৯৪৯ কোটি টাকা। এই সমস্ত তথ্য সংসদে থাকা সত্ত্বেও নির্লজ্জভাবে তার সবটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার মতো করে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সরকার এই প্রকল্পের সমস্ত ক্রেডিট নিজেরা নিয়েছেন। অথচ কাজ করে এসেছেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

–

–
–
–
–
–
–
–


