
… কেউ থামে না
কোনোদিন কখনো এখানে
একটি নিমেষ কেউ
হবে না উতল ভেবে
আমি নেই আমি নেই …
কিশোর কুমার নতুন বাংলা গান তৈরি করবেন লতা মঙ্গেশকরের জন্য । সুর তো হয়ে যাবে , কিন্তু গান লিখবেন কে ? চিন্তা নেই , মুকুল দত্ত আছেন।

এবার লতা মঙ্গেশকরের সুরে গাইবেন কিশোর কুমার । কিন্তু গান লিখবেন কে ? কে আবার ! মুকুল দত্ত আছেন তো । তিনিই লিখবেন। শুধু লতা বা কিশোর নয় , টানা কয়েক যুগ ধরে তৎকালীন বোম্বে ও কলকাতার খ্যাতনামা সুরস্রষ্টাদের মুশকিল আসান ছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার মুকুল দত্ত । আর , কী সব কালজয়ী অবিস্মরণীয় গান তিনি লিখে গেছেন !

রবীন্দ্রোত্তর মৌলিক বাংলা গানের ইতিহাসে মুকুল দত্ত এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় । শুধু কি গীতিকার ? মুকুল দত্ত একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও স্বনামধন্য । বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের অজস্র জনপ্রিয় গানের কথা লিখে কয়েক দশক জুড়ে বাংলা গানের ভাণ্ডার মণিমুক্তোয় ভরে দিয়ে গেছেন তিনি । মধ্যপ্রদেশের রেওয়া তাঁর জন্মভূমি । ছোট থেকেই মেধাবী মুকুল দত্তের ( ২৭ নভেম্বর ১৯৩৩ — ১৫ জুলাই ২০১১ ) কৈশোর কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের খড়্গপুরে ।

একদিন পাখি উড়ে
যাবে যে আকাশে
ফিরবে না সে তো আর
কারো আকাশে ।

পড়াশোনার প্রথম পাঠ শেষ হলে তাঁর ইন্টারমিডিয়েট পড়াশোনা মধ্যপ্রদেশের বিলাসপুরে । বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন ।

এম এ করেন কলকাতায় । পরে খড়্গপুরে সিলভার জুবিলি হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন । তাঁর স্ত্রী চাঁদ উসমানী ।

কোন পাখি ধরা দিতে চায়
অসীম আকাশ ফেলে
সোনার খাঁচায়
তুমি তার নাম বলে দাও …

বিমল রায় ও হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের মতো খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর । তাঁর লেখা অধিকাংশ গানই ভীষণ জনপ্রিয় । বাংলা আধুনিক এবং সিনেমার জন্য লেখা তাঁর গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে । মুকুল দত্তের জীবনের অল্প অংশ জুড়ে বাংলা । তবু তিনি বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আজও বিরাজ করেন তাঁর লেখা অসামান্য সব গানে ।

চলে যেতে যেতে
দিন বলে যায়
আঁধারের শেষে ভোর হবে …
প্রসঙ্গত , মহম্মদ রফির জন্য লিখেছিলেন , ‘ সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে … ‘ রফি সাহেব ভেবেছিলেন গানটি গাইবেন মহানায়ক উত্তম কুমারের স্মৃতিতে । কিন্তু দুর্ভাগ্য , মহম্মদ রফি হঠাৎই প্রয়াত হন । এই ঘটনা মুকুল দত্তের মুখে শোনেন কিশোর কুমার এবং গানটি রেকর্ড করেন । গান সুপারহিট হয় ।
তুমি এলে
অনেকদিনের পরে যেন
বৃষ্টি এলো …
বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে মুকুল দত্তের অবদান অনস্বীকার্য । কি লিখি তোমায় , ওগো নিরুপমা , চঞ্চল মন আনমনা হয় , জীবন পুরের পথিক , নয়ন সরসী কেন , এই যে নদী যায় সাগরে ইত্যাদি সব কালজয়ী গান মুকুল দত্তের লেখা । সেতো এল না , চলেছি একা কোন অজানায় , তারে আমি চোখে দেখিনি , আমার পূজার ফুল , কেন রে তুই চড়লি ওরে , চোখের জলের হয় না কোনো রঙ , মন জানলা খুলে দে না , আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবো না আমি ইত্যাদি গানগুলিও লেখা হয়েছে মুকুল দত্তের সোনার কলমে । আর , ‘চলে যেতে যেতে দিন বলে যায় ‘ থেকে শুরু করে’ যেও না দাঁড়াও বন্ধু ‘ পর্যন্ত অসংখ্য শাশ্বত গানের বাণী চলচ্চিত্রের জন্য লিখে গেছেন স্বনামধন্য মুকুল দত্ত , যে গানগুলি চিরকাল শুনবেন বাংলা গানের শ্রোতারা ।
আরও পড়ুন – মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য: আদালতের নোটিশ বিজেপি নেতা কৌস্তভকে
_


