স্ত্রীর দায়ের করা পণ-নির্যাতনের মামলায় বারবার আদালতের দোরগোড়ায় গিয়েও বিচার পাননি কৃষ্ণকুমার ধাকড়। উলটে মিথ্যে মামলার অভিযোগে হারিয়েছেন সংসার, সম্মান, রুজি-রোজগার। অবশেষে প্রতিবাদের অভিনব পথ বেছে নিলেন রাজস্থানের এই যুবক। স্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির সামনেই খুলে ফেলেছেন চায়ের দোকান, নাম ‘৪৯৮এ টি ক্যাফে’ (498A T Café)— ঠিক সেই ধারার নামেই, যেই ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী।

চায়ের কাপেই প্রতিবাদের ধোঁয়া তুলে কৃষ্ণ জানান, “মিথ্যে মামলায় শুধু আমিই নয়, আমার বৃদ্ধা মা-ও ভেঙে পড়েছেন। আইনের অপব্যবহার কীভাবে জীবনের সবকিছু কেড়ে নিতে পারে, আমি তার সাক্ষ্য। তাই যেখান থেকে অপমান, সেখান থেকেই প্রতিবাদ শুরু করলাম।”

অদ্ভুত এক চিত্র দেখা যাচ্ছে ক্যাফের সামনে। দোকানে বসেই হাতে হাতকড়া পরে চা পরিবেশন করছেন কৃষ্ণ। বলছেন, “এই হাতকড়া আমার তিন বছরের যন্ত্রণার প্রতীক।” দোকানের বাইরে ঝুলছে নানা পোস্টার—

• “জব তক নহি মিলতা ন্যায়, তব তক উবলতি রহেগি চায়”
• “আও চায় পর করেঁ চর্চা, ১২৫ মেঁ কিতনা দেনা পড়েগা খরচা”


বিয়ের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৮ সালে কৃষ্ণর বিয়ে হয় মীনাক্ষি মালভ নামের তরুণীর সঙ্গে। দু’জনে মিলে মধু উৎপাদন ও মৌমাছি পালন ব্যবসা শুরু করেন, যা স্থানীয় মহিলাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়। এমনকী তাঁদের উদ্যোগ উদ্বোধন করতে এসেছিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান।


কিন্তু ২০২২ সালে সবকিছু বদলে যায়। হঠাৎই মীনাক্ষি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে পণ-নির্যাতন (ধারা ৪৯৮এ) এবং খোরপোশের (ধারা ১২৫) মামলা দায়ের করেন। কৃষ্ণর অভিযোগ, “এটা নিছক মিথ্যে মামলা, যাতে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
প্রতিবাদে তিনি চায়ের দোকান খোলেন শ্বশুরবাড়ির সামনে। সকাল সকাল রাজস্থানের অন্তাহ থেকে রোজ ২২০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে দোকানে পৌঁছন। বলছেন, “যদি চা বিক্রি করেই এই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়, তাও পিছিয়ে আসব না। আমি ক্লান্ত, কিন্তু হার মানব না।”

অন্যদিকে, স্ত্রী মীনাক্ষি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, “জমি কেনার জন্য আমার বাবার থেকে টাকা চেয়েছিল ও। রাজি না হওয়ায় আমাকে মারধর করে। আমি বিবাহবিচ্ছেদে রাজি, তবে আমার নামে নেওয়া ঋণ চোকাতে হবে।”
এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। কেউ বলছেন ‘আইনের অপব্যবহারে পুরুষ নিপীড়নের বাস্তব ছবি’, আবার কেউ মীনাক্ষির পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন ‘নারীর অধিকারের লড়াই’। তবে আপাতত কৃষ্ণর প্রতিবাদ চলবে চায়ের কাপে, আর পোস্টারে স্পষ্ট তাঁর বার্তা—“বিচার না মেলা পর্যন্ত… চা ফুটবেই।”
আরও পড়ুন – ‘অলৌকিক রক্ষা’য় বিশ্বাস যাত্রীদের! আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর চাহিদা বিমানের ১১এ সিটের

_

_

_

_

_
_
