Thursday, August 21, 2025

বাংলার সঙ্গেই বিমাতৃসুলভ ব্যবহার: কেন্দ্রকে তুলোধনা মুখ্যমন্ত্রীর

Date:

Share post:

বিধানসভার অধিবেশনে কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার, বিধানসভায় (Bidhansabha) কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজের টাকা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখা হচ্ছে। বিধানসভা অধিবেশনে দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ‘চোরেদের সরকার’ বলে কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, “বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। অন্য রাজ্যগুলিতে একই ধরনের অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও টাকা আটকে রাখা হয় না। শুধু বাংলার সঙ্গেই বিমাতৃসুলভ ব্যবহার চলছে।”

মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ”গত চার বছরে গ্রামীণ রাস্তা, একশো দিনের কাজ ও আবাসন প্রকল্পে আমাদের এক পয়সাও দেওয়া হয়নি। আমাদের টাকা অন্যদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা অন্যায়। এই সময়ে ১৫৫/১৫৬ টি টিম পাঠানো হয়েছে। সব ক্লাসিফিকেশন দেওয়া সত্বেও তারা আমাদের বঞ্চিত করেছে। অভিযোগ মধ্যপ্রদেশে, গুজরাটে, উত্তরপ্রদেশে ও রয়েছে। সেখানে কটা টিম গিয়েছে? অথচ তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

মমতা বলেন, ”আমরা কিন্তু সবার টাকা দিয়ে দিয়েছি। ওনারা আমাদের টাকা দেবেন না, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।” এদিন অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্যে যখন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, তখনই হট্টগোল শুরু করে দেন বিজেপি বিধায়কেরা। আচমকাই উঠে দাঁড়িয়ে শ্লোগান তুলতে শুরু করেন শিখা চট্টোপাধ্যায় ও শঙ্কর ঘোষ-সহ একাধিক বিজেপি বিধায়ক। পাল্টা তোপ দাগেন মমতা। বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, “আগে কাউন্সিলর নির্বাচনে জিতে আসুন। আমি তো জোর করে হারানো হয়েও মানুষের সমর্থনে দাঁড়িয়ে আছি।”

মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যের মোট বকেয়া ৬৯১৯ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মজুরি বাবদ বাকি ৩৭৩১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। আনুষঙ্গিক টাকা বাকি ৩১৮৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। বাংলার বাড়ি ও ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি কেন্দ্র৷ এটা নৈতিক অন্যায়। আমাদের টাকা অন্য রাজ্যকে দিয়েছে৷ ওনারা কিছু কমপ্লেইন পেয়েছিলেন। প্রায় ১৬০ কেন্দ্রীয় দল এসেছিল৷ এর পরেও টাকা দেয়নি। এটা আমাদের দূর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি না। বিধানসভা সূত্রের খবর, আজ ও কাল মিলিয়ে একাধিক সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার কথা থাকলেও, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এদিন অধিবেশন কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে। কেন্দ্রের বঞ্চনার ইস্যু রাজ্য রাজনীতিতে নতুন কিছু না হলেও, বিধানসভা কক্ষে দাঁড়িয়ে ‘চোরদের সরকার’ তকমা—রাজনৈতিক শিষ্টাচারের নিরিখে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।

তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ”যেখানে যেখানে ডাবল ইঞ্জিন সরকার আছে সেখানে বাংলা ভাষায় কথা বললে, তাদের আধার কার্ড থাকলেও তাদের বাংলাদেশি বলে ভাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের লজ্জা থাকা উচিৎ।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিধানসভা থেকে এই বক্তব্য শুধু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি নয়, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার মানুষের আবেগকেও ছুঁয়ে যাওয়ার কৌশল। সরকারি প্রকল্পে প্রাপ্য অর্থ না-পাওয়া এবং সেই সূত্রে বাংলার মানুষের বঞ্চনার বার্তা দিয়েই তৃণমূল আবার রাজ্যের মাটিতে কেন্দ্র-বিরোধিতার জমি শক্ত করতে চাইছে।

spot_img

Related articles

যোগীরাজ্যের পাঠ্যপুস্তকে বাদ কেন রবীন্দ্রনাথকে? সাংসদ ঋতব্রতর প্রশ্নে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

উত্তরপ্রদেশের দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বাদ দেওয়া হয়েছে? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নে স্পষ্টতই...

প্রয়াত সিপিএম নেতা-প্রাক্তন মন্ত্রী দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া

প্রয়াত সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া। বুধবার এনআরএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।...

উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে ডাক মেলেনি! শীর্ষ আদালতে শান্তা দত্ত 

স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্বে ডাক পাননি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত। যোগ্য হয়েও তাঁকে সুযোগ দেওয়া...

১৫ দিনেই রেকর্ড সাফল্য! রাজ্যে সাড়া ফেলল ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি

মাত্র পনেরো দিনেই নজির গড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন কর্মসূচি, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’। রাজ্যের মানুষের হাতে উন্নয়নের...