কারোয়ারে পাথর কুঁদে বানানো অনুপম শিল্পকৃতির নাম ‘পাষাণহৃদয়’ (The Heart Stone)। সালটা ১৮৮৩, রবি ঠাকুরের (Rabindranath Tagore)বয়স তখন বাইশ বছর। সপরিবারে কারোয়ার ভ্রমণে গিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত ঝাউবন আর প্রশস্ত বালুতটের মাঝে একটি কোয়ার্টজাইট পাথর খুঁজে পেয়েছিলেন কবি। সৃজনশীল মন বছরেই তাতে লিখে ফেলেছিল কয়েকটা লাইন, ‘পাষাণ হৃদয় কেটে/ খোদিনু নিজের হাতে/ আর কি মুছিবে লেখা/ অশ্রুবারিধারাপাতে?’ রবীন্দ্রনাথ নিজেই হৃদয়ের আকারে পাথরটি কেটেছিলেন। কবি তাঁর জীবদ্দশায় সাহিত্য সংস্কৃতির একাধিক সুধারস সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তাঁর হাতে সৃষ্ট ভাস্কর্য এই একটাই (Tagore’s Only Sculpture ), যার নাম ‘পাষাণহৃদয়’। অথচ সেই অনুপম কীর্তি যার কিনা জাতীয় সম্পদ হয়ে ওঠার কথা ছিল, আজ তা বেহাত হওয়ার পথে। নিলাম হচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের হাতে তৈরি একমাত্র ভাস্কর্য (Rabindranath Tagore’s Only Sculpture Set to Go for auction)।
কারোয়ারে পাথর কুঁদে বানানো শিল্পকৃতি ‘পাষাণহৃদয়’ (The Heart Stone) অক্ষয় চৌধুরীকে উপহার দেন কবিগুরু। অক্ষয় চৌধুরী বয়সে বড় হলেও রবীন্দ্রনাথের পরম সুহৃদ ছিলেন।এই ভাস্কর্য পাওয়ার পর তিনি তা দিয়ে যান স্ত্রী শরৎকুমারী চৌধুরানীকে। এরপর তা কন্যা উমারানির হস্তগত হয়।উত্তরাধিকার সূত্রে দম্পতির কন্যা দেবযানী পাথরটির মালিকানা পান। এরপর অনেকটা কালের নিয়ম মেনেই তিনি আবার তাঁর বড় ছেলে অভিজিতের স্ত্রী ইলোরার হাতে পাষাণহৃদয়ের স্বত্ব তুলে দেন। আমেরিকাবাসী অভিজিৎ দেশে ফেরেন বছর দুয়েক আগে। এরপর ২০২৪ সালের ২৬ মে শহরের একটি আর্ট গ্যালারিতে সেই ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়। রবি ঠাকুরের হাতে তৈরি একমাত্র ভাস্কর্যের পরবর্তী ঠিকানা হয় মুম্বই। আজ থেকে সেখানকার অষ্টগুরু নিলামঘরে থাকবে ‘পাষাণহৃদয়’। এরপর দাম দিয়ে তা কিনে নেওয়ার পালা। অমূল্য সম্পদের দাম নাকি ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে নিলামঘর শর্ত দিয়েছে যে, কেউ এই ভাস্কর্য কিনলেও কোনভাবেই তা দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু সেসব তো পরের কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে তৈরি একমাত্র ভাস্কর্য আজ নিলাম হবে অথচ এত বড় সম্পদ বেহাত হয়ে যাওয়া নিয়ে জাতীয় স্তরে কোনও পদক্ষেপ করা হল না কেন? টাকার জন্য এই গৌরব কি এভাবেই বেহাত হয়ে যেতে পারে? প্রশ্নগুলো অতীতের অনেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে হয়তো বুঝিয়ে দেবে, সম্ভবপরের জন্য প্রস্তুত থাকার নামই সভ্যতা।
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–