তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে উঠে এল দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ভয়াবহ পরিসংখ্যান। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর)-এর প্রকাশিত ‘হেট ক্রাইম রিপোর্ট : ম্যাপিং ফার্স্ট ইয়ার অব মোদি-জ থার্ড গভর্নমেন্ট’ নামক সমীক্ষা বলছে, ২০২৪ সালের ৭ জুন থেকে ২০২৫-এর ৭ জুন পর্যন্ত এক বছরে দেশে ঘটেছে ৯৪৭টি বিদ্বেষ ও নির্যাতনের ঘটনা। এই ঘটনাগুলির মধ্যে ৩৪৫টি সরাসরি বিদ্বেষমূলক অপরাধ এবং বাকি ঘটনায় সংখ্যালঘুদের উপর নেমে এসেছে ভয়ঙ্কর নির্যাতন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল, এই অপরাধগুলির প্রায় ১৮ শতাংশ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন বিজেপি নেতারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে পাঁচটি অভিযোগে, অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন দুই বিচারপতি, এক রাজ্যপাল ও একাধিক বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী।
অত্যাচারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, যোগী আদিত্যনাথের শাসিত রাজ্য। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ— দু’টিই বিজেপি-শাসিত রাজ্য। তালিকায় রয়েছে আরও দুটি রাজ্য— ওড়িশা ও ছত্তিশগড়।
এই এক বছরে ২৫ জন মুসলিম সংখ্যালঘুর মৃত্যু হয়েছে এই ধরনের হামলায়। অত্যাচারের শিকার হয়েছেন শুধু মুসলিমরাই নন, দলিত, আদিবাসী, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুরা।রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসেই ঘটেছে সর্বাধিক ৮০টি ঘটনা— উৎসবের সময়কালেই সংখ্যালঘুদের উপর নেমে এসেছে বিদ্বেষের ঝড়। মধ্যপ্রদেশের পান্নায় মুসলিমদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়, মহারাষ্ট্রের থানে-তে হামলা চালানো হয় মুসলিম বসতিতে, আর উত্তরপ্রদেশের বাঘপতে এক মুসলিম যুবক হোলির অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ায় আক্রান্ত হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বিদ্বেষমূলক অপরাধে শুধু আক্রান্তের সংখ্যা নয়, এর গভীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়াও ভয়াবহ। একদিকে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর স্লোগান, অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের উপর এহেন নির্যাতনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
এপিসিআরের রিপোর্ট বলছে, প্রশাসন একাধিক ক্ষেত্রে নীরব থেকেছে, অনেক ক্ষেত্রেই মামলা দায়ের হয়নি। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, এই নীরবতা আসলে অনুমোদনেরই নামান্তর। সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমবর্ধমান হামলা দেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্তম্ভকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিরোধীদের দাবি, “এই রিপোর্টই প্রমাণ করছে, বিজেপির শাসিত রাজ্যগুলিতেই সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। উন্নয়নের মুখোশের আড়ালে চলছে বিদ্বেষের রাজনীতি।
আরও পড়ুন – কল্যাণের বক্তব্যের অপব্যাখ্যা! বাকযুদ্ধে সাংসদ মহুয়া
_
_
_
_
_
_
_
_
_