বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বর্বর আচরণে বিস্ফোরিত জনমত। মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়া বাংলার একাধিক শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে জোর করে সীমান্ত পার করে দিয়েছে বিএসএফ। অভিযোগ, বৈধ আধার ও প্যান কার্ড থাকা সত্ত্বেও বাংলায় কথা বলার অপরাধে এই নৃশংসতা।

মুর্শিদাবাদের মিনারুল শেখ, পূর্ব বর্ধমানের মুস্তাফা শেখ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফজের মণ্ডল—এঁদের সকলের বয়ানে উঠে এসেছে রোমহর্ষক ঘটনা। ১১ জুন মহারাষ্ট্র পুলিশ ভুলবশত তাঁদের গ্রেফতার করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তারপরই শুরু হয় ভয়াবহ ট্রমার অধ্যায়।

মিনারুল জানান, তাঁদের হাতে ৩০০ বাংলাদেশি টাকা গুঁজে দিয়ে বিএসএফ হুমকি দেয়—ফিরে এলে গুলি করা হবে। রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তাঁদের সীমান্ত পার করানো হয়। কিছু স্থানীয় বাসিন্দার সহায়তায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন তাঁরা।

মেহবুব শেখ, যিনি চায়ের দোকানে কাজ করতেন, জানান—মীরা রোড থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে মারধর করা হয়। টাকা ও ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তারপর সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে ভয় দেখায় বিএসএফ।

নালাসোপাড়া থেকে ধৃত পূর্ব বর্ধমানের মুস্তাফা শেখ বলেন, “আমার আধার-প্যান দেখেও পুলিশ বলল, জাল। মারধর করে বলল, ভারত ছেড়ে চলে যা। বিএসএফ ৩০০ বাংলাদেশি টাকা ধরিয়ে দিল।”

এই ঘটনাগুলি জানাজানি হওয়ার পরই মুর্শিদাবাদ পুলিশ নড়েচড়ে বসে। নাগরিকত্বের নথিপত্র নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এমন নির্মমতা কেন?

বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিরুদ্ধে উঠেছে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কারের সুর। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রশ্ন—বাংলা ভাষা কি আজ অপরাধ? ভোটের রাজনীতিতে বাংলা বিদ্বেষ কি এই চরম বর্বরতার রূপ নিয়েছে?

মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্তের দাবি তুলেছে। এই ঘটনা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, তা একপ্রকার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনেরও নজির। কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন – অবসরের দিনই রাজ্যের মুখ্যসচিবের পদে আরও ৬মাস মেয়াদ বাড়ল মনোজ পন্থের

_

_
_
_
_
_