নির্বাচন নিয়ে কমিশনের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEO) জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। নির্বাচনী ভোটার তালিকা রিভিউ-এর নামে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে তা নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলার শাসক দল। শেষ পর্যন্ত পুরোনো ভোটারদের ক্ষেত্রে কোনও জন্ম সংশাপত্রের প্রয়োজন হবে না, এই আশ্বাসই দেয় নির্বাচন কমিশন।

মূলত পাঁচটি বিষয় নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan Banerjee) নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল যার সদস্য ছিলেন তিন মন্ত্রী – চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক। বৈঠক শেষে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, একাধিক বিষয়গুলিতে কমিশন পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে।

কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) জানান, কমিশনের যেটা উদ্দেশ্য কোনও ভোটার (voter) যাতে বাদ না যায়। কিন্তু এখন কতগুলি সার্কুলারে মনে হচ্ছে যে যোগ্যতা আগে, অন্তর্ভুক্তিকরণ পরে। রিভিশন রোল করে আমরা যা পরামর্শ দিয়েছি, বিহারের ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। রিভিশন রোলে সর্বোচ্চ লেভেল হওয়া উচিত ২০২৪। ২০২৪-এর যে যে ভোটার আছে সেই সব ভোটার থাকবেই। কোনও শর্ত ছাড়া। সেটা ওরা নোট নিয়েছে। জানিয়েছে ওরা এটা বিবেচনা করে দেখব।

বিহার নির্বাচনের আগে কমিশনের রিভিউ বিজ্ঞপ্তিতে সবথেকে বেশি বিতর্কিত ইস্যু জন্ম সংশাপত্র (birth certificate)। সেই প্রসঙ্গে কল্যাণ জানান, সেখানে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জন্ম সংশাপত্র। তাতে কমিশন জানিয়েছে তাঁরা জন্ম সংশাপত্রে নির্ভর করবেন না। যাঁরা ভোটার আছেন তাঁরা ভোটার থাকবেন। এরপর অন্তর্ভুক্তিকরণ যদি হয় তা প্রমাণের ভিত্তিতে হবে। সেই সঙ্গে যোগ করেন, নতুন ভোটারের ক্ষেত্রে যাচাইয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ৫০ বছরের লোক আচমকা ৪০ হাজার কী করে যাচাই হবে। কমিশন জানিয়েছে বিষয়টি তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

তৃণমূলের পক্ষ থেকে আগেও যে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল ভোটার তালিকা (voter list) নিয়ে, এদিন সেই প্রশ্ন আবারও কমিশনার (CEO) জ্ঞানেশ কুমারের সামনে করেন তৃণমূল প্রতিনিধি দল। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভারতবর্ষ জুড়ে যেটা হয়েছে এক থেকে দেড় মাস আগে বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম যুক্ত হয়েছে। তাতে নির্বাচন দফতরে একটি সমস্যা তৈরি হয়। কমিশনের প্রথা অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারির ১০ দিন আগে পর্যন্ত নাম তোলা যায়। তৃণমূল জানায় সেক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়। দুমাস বা চারমাস আগে তালিকায় সংযুক্ত হওয়ার অধিকার যেমন ভোটারের রয়েছে, তেমনই রাজনৈতিক দলেরও অধিকার রয়েছে সেই ভোটারের অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা যাচাই করার। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের তিন বা চার মাস আগে কোনও নতুন ভোটার সংযুক্ত করা যাবে না রাজনৈতিক দলকে না জানিয়ে। এই বিষয়টিও কমিশন বিশেষভাবে দেখছেন বলে জানান।

ভোটার কার্ডের (Aadhaar) সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণ ইস্যুতেও সদর্থক জবাব দেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। কল্যাণ জানান, আধার কার্ড লিঙ্কের বিষয়ে কথা বলা হয়। কমিশন জানিয়েছে আধার কার্য সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক নয়। কমিশন সেই নিয়ম করছে না।

এছাড়াও প্রশ্ন তোলা হয় বিএলএ-দের (BLA) সচিত্র পরিচয়পত্র সংক্রান্ত নির্দেশিকা নিয়ে। সেই বিষয়ে বৈঠক শেষে তৃণমূল প্রতিনিধিদল জানায়, বিএলএ সংক্রান্ত বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের পরিচয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হলে অনেক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। কমিশন বিষয়টি শোনে গুরুত্ব দিয়ে।

আরও পড়ুন: মন্ত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা! কুৎসার জবাব দিলেন মানস ভুঁইয়া

গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে নির্বাচনে প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপ নিজেও প্রশ্ন তোলা হয়। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নির্বাচন চলাকালীন প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয় তোলা হয়। সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের প্রসঙ্গ তোলা হয়। কমিশন জানায়, সি ভি আনন্দ বোস যখন ঘুরতে গিয়েছিল তৃণমূলের অভিযোগ পাওয়ার পরে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তিনি আর যাননি।

–

–
–
–
–