Saturday, August 23, 2025
উৎপল সিনহা

ঘন্টাকর্ণ একজন সরল , সাদাসিধে বোকাসোকা মানুষ। দেশের সমস্ত দুষ্কৃতী ও অপরাধীদের শাস্তি সে মাথা পেতে গ্রহণ করে । এটাই তার জীবিকা ।

পেটের দায়ে মানুষ কী না করে ! ভয়ঙ্কর সব অপকর্ম সেরে অপরাধীরা ঘন্টাকর্ণকে ভাড়া করে নিয়ে যায় এবং তার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপায় । ঘন্টাকর্ণও বিচারসভায় অম্লানবদনে বলে , ‘ সব দোষ আমার , আমায় শাস্তি দিন হুজুর ‘ । এমন একজন ভাড়াটে বোকার সন্ধান পেয়ে অপরাধীদের তো পোয়া বারো ! তারা পরম নিশ্চিন্তে নানা ধরনের দুষ্কর্ম করতে থাকে , আর ঘন্টাকর্ণের সাজা হয় । বেশিরভাগ সময়েই অবশ্য কোনো পারিশ্রমিক পায় না সে । বেগার খাটে । বাড়িতে আছে তার স্ত্রী । সেও তার বোকা স্বামীটির এই কাজ সমর্থন করে কিছু রোজগারের আশায় । নানা ধরনের অপরাধে নানা ধরনের শাস্তি হয় । মুখ বুজে মাথা পেতে সেইসব দণ্ড ভোগ করে ঘন্টাকর্ণ । কখনও বা চাবুকের বাড়ি খেতে হয় তাকে । গোটা শরীর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হয় । বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে ।

এইভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । কিন্তু একদিন হঠাৎই এই বোকাহাবা ঘন্টাকর্ণের বোধোদয় হয় । সে অপরের শাস্তি আর নিজের ঘাড়ে নিতে চায় না । কখন ? যখন পুতনা রাজ্যের রাজা স্বয়ং অপরাধী সাব্যস্ত হয় । সেদিন বেঁকে বসে এই বোকা মানুষটি । সে বলে , এখন থেকে সে আর অপরের শাস্তি ভোগ করতে রাজি নয় । বেঁচে থাকার জন্য অন্য কোনো পেশা খুঁজে নেবে সে ।কিন্তু অপরাধীদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কি এতই সহজ ? যা হোক , ঘন্টাকর্ণ বেঁচে যায় শেষমেশ । প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় যে , ঘন্টাকর্ণ মনোজ মিত্রের একটি নাটকের চরিত্র । নাটকের নাম : কিনু কাহারের থেটার ।

ঘন্টাকর্ণ অন্যের সাজা মাথা পেতে নিতে বাধ্য হতো উপার্জনের তাগিদে । কিন্তু নন্দ ঘোষের কাহিনী তেমন নয় , বরং একেবারে ভিন্ন । ‘ যত দোষ নন্দ ঘোষ ‘ , এই বাংলা প্রবাদটি অহরহ ব্যবহার করি আমরা । এর মানে , যে যা অপরাধ করুক না কেন , দোষটা একজনের ঘাড়েই পড়ে । কিংবা , দুর্বলের ঘাড়েই দোষ চাপানো হয় বারবার। কিন্তু কে এই নন্দ ঘোষ ? তার ঘাড়েই বা দোষ চাপে কেন বারবার ?

এই গল্পের প্রেক্ষাপট বৃন্দাবন। মথুরাপতি কংসের হাত থেকে শিশু কৃষ্ণকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণের জন্মের পরেই বৃন্দাবনের ঘোষপল্লিতে নন্দ ঘোষের বাড়িতে রেখে আসেন বাসুদেব । তারপর সেখানেই নন্দ ও যশোদার কোলে বেড়ে উঠতে থাকে দেবকীপুত্র কৃষ্ণ। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব দুরন্ত বালক কৃষ্ণ । কখনও লোকের বাড়ি থেকে মাখন-ননী চুরি করে খেয়ে নিচ্ছে , আবার কখনও বা হয়তো সরোবরে স্নান করতে নামা গোপবালাদের পোশাক লুকিয়ে ফেলছে । বালক কৃষ্ণের এই দুরন্তপনায় ঘুম ছুটে যায় বৃন্দাবনবাসীদের । প্রায় রোজই কেউ না কেউ নন্দলালের নামে নানা নালিশ ও অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় নন্দ ঘোষের কাছে । নন্দ ঘোষও খুব ধৈর্য্যের সঙ্গে এই সমস্ত নালিশ শুনতেন । কিন্তু তিনি ছিলেন পুত্রস্নেহে অন্ধ। ছোট্ট কৃষ্ণের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারতেন না । শাসন তো দূরের কথা । ফলে ওখানকার মানুষদের সব রাগ ও ক্ষোভ গিয়ে পড়তো স্নেহান্ধ নন্দ ঘোষের ওপর । বৃন্দাবনবাসীরা মনে করতেন , এই নন্দ ঘোষের প্রশ্রয় পেয়েই এতো বাড় বেড়েছে বালক কৃষ্ণের । আর নন্দ ঘোষও মাথা পেতে নিতেন সব দোষ । এখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই প্রবাদ : যত দোষ নন্দ ঘোষ ।

আরও পড়ুন – রাজ্যকে না জানিয়ে ফের জল ছাড়ল ডিভিসি! বন্যার আশঙ্কা, সতর্ক সেচ দফতর 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...
Exit mobile version