ঘন্টাকর্ণ একজন সরল , সাদাসিধে বোকাসোকা মানুষ। দেশের সমস্ত দুষ্কৃতী ও অপরাধীদের শাস্তি সে মাথা পেতে গ্রহণ করে । এটাই তার জীবিকা ।
পেটের দায়ে মানুষ কী না করে ! ভয়ঙ্কর সব অপকর্ম সেরে অপরাধীরা ঘন্টাকর্ণকে ভাড়া করে নিয়ে যায় এবং তার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপায় । ঘন্টাকর্ণও বিচারসভায় অম্লানবদনে বলে , ‘ সব দোষ আমার , আমায় শাস্তি দিন হুজুর ‘ । এমন একজন ভাড়াটে বোকার সন্ধান পেয়ে অপরাধীদের তো পোয়া বারো ! তারা পরম নিশ্চিন্তে নানা ধরনের দুষ্কর্ম করতে থাকে , আর ঘন্টাকর্ণের সাজা হয় । বেশিরভাগ সময়েই অবশ্য কোনো পারিশ্রমিক পায় না সে । বেগার খাটে । বাড়িতে আছে তার স্ত্রী । সেও তার বোকা স্বামীটির এই কাজ সমর্থন করে কিছু রোজগারের আশায় । নানা ধরনের অপরাধে নানা ধরনের শাস্তি হয় । মুখ বুজে মাথা পেতে সেইসব দণ্ড ভোগ করে ঘন্টাকর্ণ । কখনও বা চাবুকের বাড়ি খেতে হয় তাকে । গোটা শরীর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হয় । বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে ।
এইভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । কিন্তু একদিন হঠাৎই এই বোকাহাবা ঘন্টাকর্ণের বোধোদয় হয় । সে অপরের শাস্তি আর নিজের ঘাড়ে নিতে চায় না । কখন ? যখন পুতনা রাজ্যের রাজা স্বয়ং অপরাধী সাব্যস্ত হয় । সেদিন বেঁকে বসে এই বোকা মানুষটি । সে বলে , এখন থেকে সে আর অপরের শাস্তি ভোগ করতে রাজি নয় । বেঁচে থাকার জন্য অন্য কোনো পেশা খুঁজে নেবে সে ।কিন্তু অপরাধীদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কি এতই সহজ ? যা হোক , ঘন্টাকর্ণ বেঁচে যায় শেষমেশ । প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় যে , ঘন্টাকর্ণ মনোজ মিত্রের একটি নাটকের চরিত্র । নাটকের নাম : কিনু কাহারের থেটার ।
ঘন্টাকর্ণ অন্যের সাজা মাথা পেতে নিতে বাধ্য হতো উপার্জনের তাগিদে । কিন্তু নন্দ ঘোষের কাহিনী তেমন নয় , বরং একেবারে ভিন্ন । ‘ যত দোষ নন্দ ঘোষ ‘ , এই বাংলা প্রবাদটি অহরহ ব্যবহার করি আমরা । এর মানে , যে যা অপরাধ করুক না কেন , দোষটা একজনের ঘাড়েই পড়ে । কিংবা , দুর্বলের ঘাড়েই দোষ চাপানো হয় বারবার। কিন্তু কে এই নন্দ ঘোষ ? তার ঘাড়েই বা দোষ চাপে কেন বারবার ?
এই গল্পের প্রেক্ষাপট বৃন্দাবন। মথুরাপতি কংসের হাত থেকে শিশু কৃষ্ণকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণের জন্মের পরেই বৃন্দাবনের ঘোষপল্লিতে নন্দ ঘোষের বাড়িতে রেখে আসেন বাসুদেব । তারপর সেখানেই নন্দ ও যশোদার কোলে বেড়ে উঠতে থাকে দেবকীপুত্র কৃষ্ণ। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব দুরন্ত বালক কৃষ্ণ । কখনও লোকের বাড়ি থেকে মাখন-ননী চুরি করে খেয়ে নিচ্ছে , আবার কখনও বা হয়তো সরোবরে স্নান করতে নামা গোপবালাদের পোশাক লুকিয়ে ফেলছে । বালক কৃষ্ণের এই দুরন্তপনায় ঘুম ছুটে যায় বৃন্দাবনবাসীদের । প্রায় রোজই কেউ না কেউ নন্দলালের নামে নানা নালিশ ও অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় নন্দ ঘোষের কাছে । নন্দ ঘোষও খুব ধৈর্য্যের সঙ্গে এই সমস্ত নালিশ শুনতেন । কিন্তু তিনি ছিলেন পুত্রস্নেহে অন্ধ। ছোট্ট কৃষ্ণের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারতেন না । শাসন তো দূরের কথা । ফলে ওখানকার মানুষদের সব রাগ ও ক্ষোভ গিয়ে পড়তো স্নেহান্ধ নন্দ ঘোষের ওপর । বৃন্দাবনবাসীরা মনে করতেন , এই নন্দ ঘোষের প্রশ্রয় পেয়েই এতো বাড় বেড়েছে বালক কৃষ্ণের । আর নন্দ ঘোষও মাথা পেতে নিতেন সব দোষ । এখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই প্রবাদ : যত দোষ নন্দ ঘোষ ।
আরও পড়ুন – রাজ্যকে না জানিয়ে ফের জল ছাড়ল ডিভিসি! বন্যার আশঙ্কা, সতর্ক সেচ দফতর
_
_
_
_
_
_
_
_
_