২০১৬ সালের প্যানেলের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য রাজ্যের দেওয়া নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকেই মান্যতা দিল কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) ডিভিশন বেঞ্চ। ৩০মে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) দেওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং বিধিকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলায় যাবতীয় আবেদন খারিজ করল বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, SSC-এর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিই বহাল থাকছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না আদালত বুধবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে এসএসসির নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করার পথে আর কোনও আইনি বাধা থাকল না।

মামলায় আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অনিন্দ্য মিত্রের দাবি ছিল, ২০১৬ সালের প্যানেলের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধি ২০১৬ সালের মতোই করতে হবে। সেই অনুযায়ী বয়সের ছাড় এবং অতিরিক্ত ১০ নম্বর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, নয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিধিতে বলা হয়েছিল, এ বার ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে, আগে যা ৫৫ নম্বরের ছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে ৩৫ নম্বরের পরিবর্তে রাখা হয়েছিল সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে ১০ নম্বর, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর উপর সর্বোচ্চ ১০ নম্বর করে রাখা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির হিসাবে যাঁদের বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছর, তাঁরাই নিয়োগের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন বলেও জানিয়েছিল এসএসসি। বুধবার শেষমেশ এসএসসির সেই সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিল উচ্চ আদালত।

অন্যদিকে, সোমবার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি ছিল, ২০১৯ ও ২০২৫ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী নতুন নিয়োগবিধি তৈরি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি, ২০১৬ সালের নিয়মেই নিয়োগ করতে হবে। রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত (Kishore Dutta) জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট পুরনো নিয়োগ বাতিল করে নতুন প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু কোথাও বলেনি ২০১৬ সালের বিধিমতোই তা করতে হবে। তিনি বলেন, “শীর্ষ আদালত শূন্যপদ পূরণ করতে বলেছে। সেই নির্দেশ মেনেই নতুন বিধি তৈরি করে এসএসসি (SSC) নিয়োগ চালু করেছে। হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট শুধু শূন্যপদ পূরণ করতে বলেছে।’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসি নতুন বিধি তৈরি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করছে। যদি মামলাকারীদের মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করা হয়েছে তারা সেখানে গিয়ে বলুন। যদি ভুল থাকে শীর্ষ আদালত তা বলে দেবে। ইতিমধ্যে এসএসসির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতে। সেখানে প্রায় ১৮০টি রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে।”

একইসঙ্গে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, “কী ভাবে কমিশনের আইনকে চ্যালেঞ্জকে করা যায়? হাই কোর্টের ডিভিশন নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে। কিন্তু কোন বিধি মেনে হবে তা উল্লেখ করেনি। শুধু বলেছে ঘোষিত শূন্যপদে নিয়োগ করতে হবে। এটা ২০১৯ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়াও হতে পারে। আবার নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও হতে পারে। ফলে কোথাও বলে দেওয়া নেই ২০১৬ সালের বিধি মেনেই নিয়োগ করতে হবে।’ নতুন চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে সাওয়াল করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, ‘গত ন’বছর ধরে নতুনেরা সুযোগ পাননি। আপনার যদি যোগ্যতা থাকে কেন মামলা করছেন? নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিন। উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি করুন। আসল সমস্যা ১৫০০ ধরে ময়দানে বসে ছিলেন। এখন এটা চাই, ওটা চাই বলছেন।”

তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের বিধি মেনে বয়সে ছাড় দেওয়া সম্ভব ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মান্যতা দিয়ে ওই বিধি সংশোধন করতে হত। বয়সে ছাড় দিয়ে হলে ২০১৬ সালের বিধি সংশোধন অথবা নতুন বিধি তৈরির প্রয়োজনীয়তা ছিল। আবার আদালত যদি নতুন বিধি খারিজ করে দেয় তবে ২০১৬ সালের বিধিতে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

বুধবার রায় ঘোষণার পর স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা রাজ্যের বড় জয়। রাজ্যের অধিকারকে মান্যতা দিল আদালত। সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলে দেয়নি ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অযৌক্তিক আবেদন আদালত মেনে নেয়নি। গত ন’বছরের মধ্যে কত জন এসেছেন, তাঁদের কথাও বিবেচনা করতে হবে।”
আরও খবর: পরিযায়ী শ্রমিক মামলা! কেন্দ্রকে রিপোর্ট জমার নির্দেশ হাইকোর্টের

–

–

–

–

–
–
–