পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে জল বন্ধের নীতির ঘোষণা করেছিল ভারত। আদতে প্রাকৃতিক কারণে সেই সিন্ধু জল চুক্তি খুব বেশি ভাঙা ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে সেই জল-পথেই এবার ভারতকে সায়েস্তা করার পথে চিন। সম্প্রতি ভারতের একাধিক কূটনীতিক থেকে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar) নিজে চিনে গিয়েছেন, কথা হয়েছে রাষ্ট্রপতি সি জিনপিংয়ের (Xi jinping) সঙ্গেও। তবে তা নিতান্তই ভারত-চিন চুক্তি নির্ভর কথা। এরপরই ভারতকে না জানিয়ে তিব্বতে (Tibet) ব্রহ্মপুত্রের (Brahmaputra) উপর বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করে দিল চিন (China)। অরুণাচল (Arunachal Pradesh) সীমান্ত থেকে সামান্য দূরের এই বাঁধ নতুন প্রশ্ন তুলে ধরল মোদির ভ্রান্ত উত্তর-পূর্ব নীতি (north east policy) নিয়ে।

ব্রহ্মপুত্রের উপর বাঁধ তৈরি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। তিব্বতের যে অংশে ব্রহ্মপুত্র অত্যন্ত খরস্রোতা সেখানে বাঁধ তৈরি হলে একদিকে নিচের অংশ জল নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সেই সঙ্গে এই বাঁধ থেকে তৈরি করার ফলে বিশ্বের সবথেকে বড় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (hydel power project) তৈরি করা সম্ভব হবে। চিনের (China) দাবি এই বাঁধ নিচের অববাহিকা এলাকায় নদীর স্রোত নিয়ন্ত্রণের কাজ সম্ভব হবে।

তবে ভারত ও বাংলাদেশের কাছে ব্রহ্মপুত্রের উপর চিনের তৈরি বাঁধ একটি বড় হুঁশিয়ারি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নদীর উপরের উপত্যকায় বাঁধ তৈরি বানালে স্বাভাবিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশ জল পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় থাকবেই। তৈরি হতে পারে খাদ্য সংকটও। সেই সঙ্গে বর্ষায় প্রবল বন্যার রূপ নেওয়া ব্রহ্মপুত্রের নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে করা হলে থাকবে বন্যার আরও ভয়াবহতার আশঙ্কা। সবথেকে বড় ব্যাপার, যে নদীর উপর উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশ (Bangladesh) নির্ভর করে, সেই নদীর তীব্বতের অংশে বাঁধ হলে চিন এই নদীর উপর নিয়ন্ত্রণে চিনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এই বাঁধ তৈরি হলে জনতত্ত্বগত পরিবর্তন হবে উত্তর-পূর্ব ভারতসহ তীব্বত এলাকাতেও।

ভারতের তরফ থেকে বারবার আশঙ্কা প্রকাশ ও অরুণাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিনের সঙ্গে সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অরুণাচলে বাঁধ তৈরি নিয়ে চিনের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংঘাতও হয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনার পরে যদিও চিন যে নিজের পথে চলার পথই নিয়েছে, তা প্রমাণিত তিব্বতে। নাইংচিতে ব্রহ্মপুত্রের উপরের অববাহিকা সাংপোর (Tsangpo) উপর মেগা ড্যামের প্রকল্প উদ্বোধন করেন মন্ত্রী লি কুয়াং। পাঁচ বছর ধরে এই বাঁধ তৈরি হবে। সেখানে থাকবে তিনটি বাঁধ যা থেকে জলবিদ্যুৎ (hydel power project) তৈরি হবে। বছরে সেখানে ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা চলার মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

আরও পড়ুন: ১৯ বছর কোমায় থাকার পর প্রয়াত সৌদির ‘ঘুমন্ত’ রাজকুমার

অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত থেকে এই বাঁধের দূরত্ব হবে মাত্র ৪০ কিমি। আর এখানেই আশঙ্কা ভারতের জন্য। কয়েক দশক ধরে অরুণাচলকে তীব্বতের (Tibet) অংশ বলে চিনের যে দাবি, তার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে ভারতকে। একদিকে সাম্প্রতিক সময়ের কেন্দ্রের বিজেপি সরকার উত্তর-পূর্ব নিয়ে একেবারেই যে চিন্তিত নয়, তা নরেন্দ্র মোদির উত্তর পূর্ব নীতি থেকেই প্রমাণিত। সেই পরিস্থিতিতে চিনের (China) প্রস্তাবিত বাঁধ তৈরির কাজও শুরু হয়ে গেল। অথচ কোনও বিবৃতিই প্রকাশ করা হল না ভারতের তরফে। এভাবে অরুণাচলের উপর চিন যে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে, তা নিয়েও নীরব মোদি।

–

–

–

–
–
–
–
–