সারা বছর বইয়ের প্রচার চালাতে নতুন উদ্যোগ বামেদের। নিজেদের প্রকাশনা সংস্থার বই নিয়ে দুর্গাপুজো থেকে বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে এখনও সিপিআইএম থেকে বাম জোট সঙ্গী দলগুলিকে বইয়ের স্টল দিতে দেখা যায় আজও। তবে এবার আলাদাভাবে বইয়ের হাটের আয়োজন করছে সিপিআইএম (CPIM)। জনসংযোগের নতুন উদ্যোগে ১৯৩৯ সালের বামপন্থী প্রকাশনা সংস্থা ন্যাশানাল বুক এজেন্সি (NBA) মারফৎ সেই বই ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে তুলে দিতে ১৪ দিন ধরে ‘বইয়ের হাট’ আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষায় যখন গোটা দেশে প্রতিরোধের পথে নেমেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, সেই সময়ে বইয়ের মাধ্যমে ভাষার ঐতিহ্য রক্ষায় বামেদের এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সম্প্রতি বাঙালিদের শুধুমাত্র ভাষার জন্য বেছে বেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে হেনস্থা করার পথে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সব রকমভাবে ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়াতে তৎপর তৃণমূল ও রাজ্য প্রশাসন। সেই সময়ে বাঙালিদের ভাষার ঐতিহ্য রক্ষার লড়াইয়ে পথে নামছে বামেরাও। তাদের মাধ্যম – বই। রাজ্যের মানুষকে বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ফের মনে করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সারা বছর বইয়ের চর্চার পথে সিপিআইএম।

যেভাবে বিজেপির নেতারা বাংলার অস্মিতার কথা ভোটের প্রচার মঞ্চ থেকে করছেন, ঠিক তার বিপরীত পথে হেঁটে বাঙালিদের অপমান, অত্যাচার, জেলে ভরার কাজ তারা নিজেদের রাজ্যগুলিতে চালাচ্ছে। প্রমাণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বাংলাকে হীনভাবে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ সেই প্রচারও একেবারে বিপরীত পথে চালাচ্ছে বিজেপির স্বৈরাচারী সরকার। এবার এর প্রতিবাদ বামেদের তরফ থেকেও। পুরোনো বইয়ের পাশাপাশি নতুন বই ও অনলাইন ব্যবস্থায় (online media) বইকে তুলে ধরতে ২২ জুলাই থেকে শুরু করা হচ্ছে ‘বইয়ের হাট’ (Boiyer Haat)।

সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী জানান, মূলত তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে ‘বইয়ের হাট’ আয়োজনের। একসময় যেভাবে উৎসব অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়ার রীতি ছিল, সেই রীতিকে ফিরিয়ে আনা। বই পড়ার চর্চা বাড়ানো। সেই সঙ্গে নতুন লেখকসহ সব ধরনের লেখকদের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা-সাহিত্য-ভাষার চর্চার উদ্যোগ। মঙ্গলবার থেকে চারটি সেন্টার – বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিট, সল্টলেক ও দুর্গাপুরে শুরু হচ্ছে বইয়ের হাট (Boiyer Haat)। চলবে ৪ অগাস্ট পর্যন্ত। মঙ্গলবার কলেজস্ট্রিটের কাউন্টারে বই উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন বর্ষীয়ান বাম নেতা বিমান বসু (Biman Bose)।

আরও পড়ুন: একুশে জুলাই কোন মঞ্চে দিলীপ? জল্পনার অবসান ঘটালেন পদ্মনেতা নিজেই
বামেদের দাবি, নতুন ‘নলেজ সোসাইটি’র মাধ্যম হিসাবে সব থেকে ভালো হতে পারে বই। তাই নতুন বইয়েরও প্রচার প্রয়োজন। তার জন্য যেভাবে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ডিজিটাল (digital) মাধ্যমে এগিয়েছে, এবার মুজফফর আহমেদ প্রতিষ্ঠিত এনবিএ-ও সেই পথে। সেই সঙ্গে হাট-এ তুলে ধরা হবে পুরোনো দুষ্প্রাপ্য বই, যা একসময় এনবিএ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। থাকবে বাংলা ভাষার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, ইংরাজি সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজনীতির বইও। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশিত দুষ্প্রাপ্য বইও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ৫০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই মিলবে এনবিএ আয়োজিত ‘বইয়ের হাট’-এ।

সারা বছর এখনও প্রায় ৭০০ বুক স্টলের আয়োজন করা হয় সিপিআইএম-এর তরফে। আর সেই স্টলগুলিতে বইয়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ বই প্রকাশ করে বামেরা। সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, বর্তমান নলেজ সোসাইটির প্রয়োজন অনুসারে নতুন বই তুলে দিতে পুরোনো স্টক ক্লিয়ার করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুন বইয়ের যে চাহিদা তার কথা মাথায় রেখে নতুন বইয়ের প্রকাশনা বাড়ানোর জন্য পুরোনো ও দুষ্প্রাপ্য বই অল্প দামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত এনবিএ-র। প্রাথমিকভাবে বইয়ের হাট সেই কাজ করবে। পরবর্তীকালে স্টলের মাধ্যমেও মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে এই বই।

–

–
–
–

–

–
–