বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে মহিলাদের জন্য ভাতার প্রকল্প ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিজেপি জোটসঙ্গী পরিচালিত মহাযুতি সরকার। প্রকল্পের সাফল্য দেখিয়ে অন্যত্র ভোটব্যাঙ্ক পেতে প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ্যা বাড়িয়ে প্রচারও চালায় বিজেপি। কিন্তু কীভাবে বাড়ানো হয়েছিল মহারাষ্ট্রের মাঝি লড়কি বহিন যোজনার (Majhi Ladki Bahin Yojana) উপভোক্তার সংখ্যা? অডিট রিপোর্ট (audit report) প্রকাশ হতেই ফাঁস দেবেন্দ্র ফাড়নবিশ-একনাথ শিণ্ডে জোটের চরম দুর্নীতি (scam)। পুরুষদের নামেই উঠে গিয়েছে মহিলাদের জন্য তৈরি প্রকল্পের টাকা। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও, যে প্রকল্পের বয়স মাত্র ১০ মাস, সেখানেই ১৪ হাজারের বেশি পুরুষকে মহিলা হিসাবে দেখিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রকল্পের টাকা।
লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে মহিল ভোটারদের টানতে বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-কে নকল করা শুরু করেছিল একাধিক বিজেপি প্রশাসন। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরেই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন হওয়ায় সেখানেও বাংলার জনমুখী প্রকল্প টুকে ভোট জেতার কৌশল করে একনাথ শিণ্ডে-দেবেন্দ্র ফাড়নবিশ জুটি। ২০২৪ সালের জুলাইতে প্রকল্প ঘোষণা হওয়ার পরে তাতে ব্যাপক সাড়ার দাবি জানিয়েছিল মহাযুতি প্রশাসন। সেই প্রকল্পে প্রথমেই এক বছরের কম সময়ে সামনে এসেছিল ব্যাপক দুর্নীতি। ২,২৮৯ জন সরকারি কর্মী প্রকল্পের উপভোক্তা সরকারি কর্মচারি, জানিয়েছিলেন খোদ মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী।
এই দুর্নীতি যে হিমশৈলের চূঁড়া মাত্র ছিল, তা এবার প্রকাশ্যে এলো। উপভোক্তার সংখ্যা বাড়াতে কীভাবে জালিয়াতি তা প্রকাশ্যে অডিট রিপোর্টে। সেখানে দেখা যায়, অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে ব্যাপক জালিয়াতি। ১৪,২৯৮ জন পুরুষ সেই রেজিস্ট্রেশনে কারচুপি করে নিজেদের মহিলা প্রমাণিত করে ভাতার (allowance) টাকা উপভোগ করেছেন গত ১০ মাস ধরে। আদতে সরকার প্রকল্প মাঠে নামানোর আগে কোনও ব্যবস্থাই রাখেনি যাতে এই দুর্নীতি আটকানো যায়।
এখানেই শেষ নয়। রাজ্যের ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার মহিলা এমন যুক্ত হয়েছেন প্রকল্পের টাকা পেতে, যারা কোনও একটি পরিবারের তৃতীয় মহিলা হিসাবে ভাতার (allowance) টাকা পেয়েছেন। সরকারি নিয়মে পরিবারের একজন মহিলা এই ভাতার পাওয়ার উপযুক্ত। অর্থাৎ নিয়ম সত্ত্বেও নজরদারির অভাবে একই পরিবারের তিনজন করে মাঝি লড়কি বহিন যোজনার সুবিধা পেয়েছেন।
এছাড়াও অডিটে (audit report) ধরা পড়েছে ২ লক্ষ ৮৭ হাজার মহিলা এমন আছে যাঁরা ভাতার (allowance) টাকা পেয়েছেন অথচ তাঁদের বয়স ৬৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল মাঝি লড়কি বহিন যোজনার উপভোক্তা হতে পারবেন ২১বছর বয়স থেকে ৬৫ বছরের মহিলারা।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব যাচাইয়ের অধিকার নেই কমিশনের: সুপ্রিম কোর্টে দাবি ADR-এর
শুধুমাত্র যে উপভোক্তার সংখ্যার জলিয়াতি করাই মহারাষ্ট্র প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল, এমনটা নয়। তাড়াহুড়ে করে শুরু করা প্রকল্পের অব্যবস্থার জন্য বিস্তর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে মহারাষ্ট্র সরকারকে। পুরুষদের প্রকল্পে টাকা দিয়ে ২১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে সরকারের। একইভাবে একই পরিবারের একাধিক মহিলাকে টাকা দেওয়ার জন্য লোকসান হয়েছে ১,১৮৬ কোটি টাকা। আবার বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রকল্পের টাকা দেওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৪৩১.৭ কোটি টাকা।
–
–
–
–
–
–
–