ফিরছেন ‘বেলা’। তাঁর রান্নার ঝুলি আর হেরে গিয়েও জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসার গল্প নিয়ে। তিনি অবশ্য ‘বোস’ নন, তিনি বেলা দে। রান্নাঘর থেকে বইয়ের পাতায় রকমারি পদ তুলে আনতে পেরেছিলেন যিনি, ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকা প্রতিটা মেয়ের কাহিনীকে ঘিরে বেতার জগতে ‘মহিলা মহল’ গড়ে তুলেছিলেন যিনি – সেই বেলা দে এবার বড়পর্দায় ধরা দিচ্ছেন। নস্টালজিক বাঙালি মননে ফেলে আসা দিনের স্মৃতি ফেরাতে এবার ‘বেলা’ বেশে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)। ক্যানভাস গড়ে দিলেন পরিচালক অনিলাভ চট্টোপাধ্যায় (Anilabha Chattapadhyay)।

আজ থেকে প্রায় ৭০-৮০ বছর ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে তখনকার মহিলা জীবনযাত্রার যে ধরা দেবে তা জেন জি (Gen Z) প্রজন্মের কাছে কল্পনার বাইরে। সারাক্ষণ অন্দরমহলে থাকা মহিলাদের অন্তরের কথাগুলোকে শোনার এবং শোনানোর ব্যবস্থা করেছিলেন যিনি, মহিলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মহিলা মহল তৈরি করার ধৃষ্টতা ও দক্ষতা দেখাতে পেরেছিলেন যিনি, তাঁর নাম বেলা দে (Bela Dey)। এই প্রজন্মের হয়তো অনেকে তাঁকে ‘রান্নার জিনিয়াস’ বলে চিনলেও চিনতে পারেন। কলকাতা বইমেলাতে আজও তাঁর লেখা রান্নার বইয়ের প্রতি আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। এখনকার দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফুড ব্লগিংয়ের রমরমা বাজারে যখন চালকের আসনে মহিলাদের দেখা যায়, তখন অচিরেই সেই বিপ্লবের রূপকারের নামটা মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে মধ্যবয়সীদের। আকাশবাণী-র বেলা দে একসময় হয়ে ওঠেন বাঙালির মহিলাদের একান্ত আপন একজন। এই মানুষটি তৎকালীন সময়ে রেডিওতে ‘মহিলা মহল’ শুরু করেছিলেন। মেয়েদের না বলা কথা কিংবা লুকিয়ে থাকা প্রতিভার অন্বেষণে তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নিজের অনুষ্ঠানে। সেই মানুষের জীবনী নিয়ে জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম করছেন অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়। নাম ভূমিকায় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

রান্না করা সহজ কাজ নয়। এর জন্য লাগে ট্যালেন্ট, প্রয়োজন অগাধ ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাসের। শুধু রান্না শেখা নয়, রান্নাঘরের সঙ্গে সমার্থক শব্দ হয়ে যাওয়া মহিলাদের চেনা জীবনযাত্রার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রাপ্য অধিকারের কথা বলেছিলেন বেলা। স্বীকৃতি আদায় সহজ ছিল না। তবে যে মহিলা পরিবারের চারজনের রান্না করছেন, তিনি চাইলেই বা প্রয়োজনে হোম সার্ভিস বা রেস্তরাঁও করতে পারেন বলেই বিশ্বাস করতেন বেলা। সে যুগে একথা জোরালো গলায় উচ্চারণে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। তাই আজ যে মহিলারা অফিস থেকে বাড়ি, মাঠ ময়দান থেকে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড, ঘরের রান্না থেকে পাড়ার অনুষ্ঠানে ফাংশন করতে পারছেন তা সম্ভব হয়েছে আজ থেকে বেশ কয়েক দশক আগের আলোকোজ্জ্বল সাহসী কিছু মহিলার কারণে, যাঁদের মধ্যে অন্যতম বেলা দে। এটা উদযাপন করতেই এই ছবি বানিয়েছেন অনিলাভ। ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, গল্পটা দারুণ। বেলা দে আসলে একজন রেবেল। ওঁনার ব্যক্তিগত জীবনের ওঠা-নামা পেরিয়েও বেলা দে যেভাবে লড়াই জারি রেখেছিলেন সেটা শিক্ষণীয়। স্বাধীনতার মাসেই এ ছবির মুক্তি। টিজার থেকে ট্রেলার, নস্টালজিয়া ফিরছে। কারণ ফিরছেন বেলা দে, সঙ্গে সেই ভীষণ প্রিয় মহিলা মহল।

–

–

–

–

–
–

–

–
–
–