“বিচারপতিরা কখনও রক্তপিপাসু হতে পারেন না”— এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে জলপাইগুড়ির একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত আফতাব আলমের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। পরিবর্তে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে, তবে কোনও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি না ঘটলে ২০ বছরের আগে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।

২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ধূপগুড়িতে মামার বাড়িতে পাঁচ সহযোগীকে নিয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে নিজের মামাকে খুন করে আফতাব। ওই ঘটনায় স্থানীয় দায়রা আদালত আফতাবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, এই অপরাধ ‘রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার’ গোত্রে পড়ে না।

বিচারপতি ভট্টাচার্য রায়ে বলেন, “শাস্তির মূল ভিত্তি প্রতিশোধ নয়, সংস্কার।” তিনি আরও বলেন, “মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়। ভবিষ্যতে নতুন তথ্য উঠে এলেও তা কাজে লাগানোর সুযোগ থাকে না। ফলে সংশোধনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।”

আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি— “অপরাধকে ঘৃণা করো, অপরাধীকে নয়।” বিচারপতিরা জানান, আফতাবের বয়স এখনও কুড়ির ঘরে। তাঁর বিরুদ্ধে এমন কোনও অতীত রেকর্ড নেই যা প্রমাণ করে যে তিনি সংশোধনের ঊর্ধ্বে। উপরন্তু, মামার বাড়ি থেকে বহু দূরে দিল্লিতে থাকতেন আফতাব, ফলে বিশ্বাসভঙ্গের যুক্তিও এখানে কার্যকর নয়।

আলমের আইনজীবী দাবি করেন, খুনটি তাৎক্ষণিক, কোনও পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। অন্যদিকে, রাজ্যের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মৃত্যুদণ্ড বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করলেও, হাইকোর্টের বেঞ্চ সেই যুক্তি গ্রহণ করেনি। রায়ে উল্লেখ করা হয় ১৯৮০ সালের ‘বচন সিং বনাম পাঞ্জাব সরকার’ মামলার, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, “বিচারপতিরা রক্তপিপাসু হতে পারেন না।” এই মামলায় সেই নীতির প্রতিফলন দেখা গেল বলেই মত আইনি মহলের।

আরও পড়ুন – গড়শালবনিতে কনভয় থামিয়ে কথা, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে অভিভূত স্কুল পড়ুয়া-শিক্ষিকারা

_

_
_

_

_
_
_
_
_