কিছু কিছু কবিতা, উৎপল সিনহার কলম 

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

তুমুল বৃষ্টির রাতে
যে ছেলেটি মায়ের
মুখাগ্নি করেছিল ,
বর্ষা এলে তার মনে হয় ,
— মা একা ভিজে যাচ্ছে ।
( অদিতি বসুরায় )

এমন গরমে
আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি
তুমিও নিশ্চয়ই শেষ হচ্ছো
অন্য কোনও তল্লাটে
আমরা তো প্রেমচ্ছিন্ন
শুধু শেষ হওয়াতে যৌথ
( পিয়াস মজিদ )

আমি জন্মের প্রয়োজনে
ছোট হয়েছিলাম,
এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে
বড় হচ্ছি !
( নির্মলেন্দু গুণ )

একদিন যাঁর বুকে
ছিল আগুন
আজ তিনি আগুনের বুকে
একদিন যাঁর বুকে
ছিল মানুষ
আজ তিনি মানুষের বুকে ।
( বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে লিখেছিলেন কোনো এক কবি । কবিতাটি হুবহু মনে আছে । কিন্তু হায় , কবির নামটি মনে নেই।)

অথচ এইসব মর্মভেদী কবিতা পড়লে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয় । কবি একসময় নির্বাপিত হন , কিন্তু কবিতা অনির্বাণ । কিছু কিছু কবিতা দু’চার লাইনে একটা গোটা জীবন ধারণ করে রাখে । গোটা বিশ্বপ্রকৃতিকে , কখনও বা মানবসভ্যতার সমগ্র অস্তিত্বকে অনায়াসে ব্যাখ্যা করে ফেলে কয়েকটা মাত্র নিরীহ শব্দ ।

সঙ্গীত মহাবিশ্বকে
আত্মা দেয় ,
মস্তিষ্ককে ডানা দেয় ,
কল্পনাকে উড়ান দেয় এবং
সবকিছুকে প্রাণ দেয় ।
( প্লেটো )

ভেঙে পড়া একজন
মানুষকে দেখে
কবিতা লেখার কথা
মাথায় আসে না

দু- পায়ের পাতা থেকে
মাথা অব্দি
উনি নিজেই একটি
প্রকাশিত বইয়ের মতো !
তখন পড়তে ইচ্ছে করে —
(পাঠক , সংবেদন চক্রবর্তী)

মরে গেছি
ভেবেছিল যারা,
দেখে নাও
বেঁচে আছি —
সোজা শিরদাঁড়া ।
(সোয়েব আল হাসান)

বাড়িটি থাকবে
নদীর কিনারে, চৌকো
থাকবে শ্যাওলা- রাঙানো
একটি নৌকো
ফিরে এসে খুব
আলতো ডাকবো , বউ কই …
রাজি ?
( প্রথম স্তবক , বিবাহপ্রস্তাব, মৃদুল দাশগুপ্ত )

সাইকেলে চেপে কেউ হয়তো
ফিরে আসছে
বিরহ থেকে
পিঠে হাত রাখছে নিঃসঙ্গতা
( গোলাম রসুল )

কী সব অসামান্য কবিতা লেখা হয়ে গেছে বাংলা ভাষায় ! উৎকর্ষতা ও আবেদনে আধুনিক কবিতার ভুবনে সসম্মানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলা কবিতা । শুধু যে মুগ্ধ করে তা-ই নয় , আশ্বাস দেয় , আশ্রয় দেয় , ভালবেসে বুকে জড়িয়ে নেয়।

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই
দুইকে আমি এক করিনা
এক কে করি দুই ।
( নির্মলেন্দু গুণ )

বিপ্লবী নই , কবিতায় গানে
চিৎকার ক’রে কাঁদি
দু’চোখে শুধুই অগ্নি গড়ায়–
সাধ্যি নেই যে বাঁধি
( বিপুল চক্রবর্তী )
মৃত্যুর সাথে সম্বন্ধ করে বিয়ে

লুকিয়ে দেখেছি যাকে
আজীবন
তার নাম জীবন
( জীবন , শবরী শর্মা রায় )
দাদু মারা গেল বলে
ভাজামাছ সব ফেলে
দিতে হল
কাঁটা পর্যন্ত চেটেপুটে
খেল ভুলু
এখন মাছভাজা হলেই
কেঁদে ওঠে
যদিও কান্না দিয়ে
সুখ দুঃখ আলাদা করতে
পারি না
( অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় )

আরও পড়ুন – পাঁশকুড়ায় ১৬ চাকার লরি পিষে দিলে একের পরের দোকান, মৃত্যু একাধিকের 

spot_img

Related articles

ধুলো ঝেড়ে প্রস্তুত কাশ্মীর, শুধু যাদের অপেক্ষা তারাই নেই

শাওনী দত্ত, গুলমার্গঅফ সিজন হোক বা ফুল, সুযোগ পেলেই বাঙালি কাশ্মীর-দর্শনটা সেরে ফেলতে পছন্দ করে। তবে এপ্রিলের পরে...

অহিংসা-শান্তি-একতা-সম্প্রীতির বাণী: গান্ধীজিকে স্মরণ মমতা ও অভিষেকের

২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী (Gandhi Jayanti)। দেশজুড়ে জাতির জনকের ১৫৬তম জন্মনবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। আজ শুধুমাত্র জাতীয় ছুটিই নয়,...

অদ্য পুজোর শেষ লগ্ন, নবমীতেই আগামী বছরের দুর্গোৎসবের কাউন্টডাউন শুরু

নবমী তিথি (Maha Navami) মানে আনন্দের মাঝেও আকাশে বাতাসে বিষাদের সুর। আবার এক বছরের প্রতীক্ষার পর উমাকে এভাবে...

অন্তহীন জুবিন, উৎপল সিনহার কলম 

মোর কোনো জাতি নাই মোর কোনো ধর্ম নাই মোর কোনো ভগবান নাই মই মুক্ত ময়েই কাঞ্চনজংঘা ...জাত-ধর্ম-ভগবান না মানা দামাল বেপরোয়া জুবিন...