“বাবা যাবে বম্বে, আলিয়া যাবে সঙ্গে” অথবা ” ঝিঙ্কু নাকুড় নাক্কু নাকুড়, সুপারহিট শিব ঠাকুর” কিংবা “বাবা আমার পাগলা ভোলা দলে দলে তাই জল ঢালা” – শেওড়াফুলি থেকে তারকেশ্বরের রাস্তায় জলযাত্রীদের মুখে মুখে ঘুরছে এইসব বিচিত্র উক্তি। তারকনাথের কানে কতটা পৌছচ্ছে জানা নেই তবে পথ চলতি মানুষ কেউ থমকে যাচ্ছেন কেউ আবার ভিডিও রেকর্ড করে রাখছেন। ভক্তি কি তবে ব্যাকফুটে? উত্তর খোঁজার সময় কই? এখন যে কার্নিভালের মেজাজে চলছে শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরের জলযাত্রা।

শ্রীরামপুর থেকে জি টি রোড জুড়ে’ভোলেবাবা পার করেগা’র জনস্রোত। বাবা ভক্তদের বর্ণাঢ্য জলযাত্রায় দেব দেবীর মূর্তি থেকে অপারেশন সিন্দুরের (Operation Sindoor)মডেল।

বাঁকের নকশা বদলাতে শুরু করেছিল অনেক আগেই। সময়ের সঙ্গে মাটি থেকে প্লাস্টিকের ঘটের রমরমা বেড়েছে। কেউ আবার চিরাচরিত কমলা ড্রেস কোড ছেড়ে পোশাকে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। কিছু উস্কানিমূলক স্লোগানও ভাইরাল হয়েছে। কোথাও আবার বেড়েছে চটকদার গানের মেজাজ। গত কয়েকবছরে এভাবেই পরিবর্তিত শিব ঠাকুরের উদ্দেশে শ্রাবণ যাত্রা। হুগলির এই জনপদে পরিচিত কথা হচ্ছে ‘শ্রাবণ মাসে টাকা ওড়ে/ তারকেশ্বরে লক্ষ লক্ষ জোড়া পা পড়ে।’

১৪৩২ বঙ্গাব্দের শ্রাবণীমেলা যে পুরোটাই তার চেনা ছন্দের বাইরে গেছে তা নয়। তবে স্লোগানে বৈচিত্র্য তো এসেইছে। ‘জল নিয়েছি ঘটে, বাবা আছে পটে’; ‘মন কাঁদে না প্রেমের ব্যাথায়, বাবা আছে মোদের মাথায়’; ‘জয় মা তারা জয় মা কালী, আমরা হলাম বাবার শালী’। ওড়িয়া গান, ‘আমাকু সাইড দিও রে, আমি তো কাউরিবালা!’ এই গান এবারের তারকেশ্বর যাত্রায় নাকি সুপারহিট! সঙ্গে দোসর ‘ননী’।

সময়ের পরিবর্তনে এভাবেই বদলেছে তারকেশ্বর যাত্রার রূপ। বৈদ্যবাটি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার রাস্তায় পুণ্যার্থীদের সেবায় কেউ জল দেন, কেউ শরবত, কেউ লুচি-আলুর দম বা খিচুড়ি খাওয়ান। এবছর আবার মেনুতে জুড়েছে ভেজ বিরিয়ানি আর আলুর দম। অনেকে বলছেন গত দুদশকে নাকি ছবিটা অনেকটা বদলেছে। ভক্তিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ফূর্তি এবং দেখনদারি! যদিও ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে অর্থনৈতিক উন্নতি কিন্তু বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অসংগঠিত ক্ষেত্রের বহু শ্রমিক এই শ্রাবণে শনি-রবিবার নিজেদের কাজ ফেলে শ্রাবণীমেলায় যুক্ত হন। এই সময়টা হকারদের পোয়া বারো। পুজোর আগেই শ্রাবণী মেলা হুগলি জেলায় যেন কার্নিভালের ট্রেলার দেখাচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

–

–

–
–

–

–