মাস চারেক আগেই নিজের মৃত্যুর কথা বলে গেছিলেন ২৮ বছরের সাংবাদিক (Anas Al Sharif)। রেখে গেছিলেন বিদায় বার্তা। ইজরায়েলের আক্রমণে রবিবার আলজাজিরার (Al Jazeera) সাংবাদিক আনাস আল-শরিফের মৃত্যুর (Israel Strike on Journalists) পর তার বলে যাওয়া শেষ কথাগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে। এও কি সম্ভব? ইজরায়েলি সেনার (IDF ) হামলায় তাঁর মৃত্যুর ইঙ্গিত কীভাবে এতদিন আগে আন্দাজ করেছিলেন আনাস?

নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য পশ্চিম এশিয়ায় পরিচিত এবং জনপ্রিয় নাম হয়ে উঠেছিলেন আনাস আল-শরিফ। বরাবরই স্পষ্ট বক্তা এই সাংবাদিক তাঁর কাজের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনের অধিকারের কথা বলতেন। আল জাজিরার হয়ে উত্তর গাজা থেকে তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। রবিবার গাজা সিটির আল-সিফা হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের একটি তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা (IDF)। তাতেই আনাস-সহ পাঁচ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। এর কয়েক ঘণ্টা আগেও গাজায় ইজরায়েলি হামলা এবং বোমাবর্ষণের খবর জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর আসতেই শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হল আনাসের বিদায় বার্তা। এরপরই রীতিমত শোরগোল পড়ে গেছে। কারণেই মেসেজটি চার মাস আগেই লিখেছিলেন তিনি। তাহলে কি ইজরায়েলি সেনার হামলায় নিজের মৃত্যুর আভাস এপ্রিলেই পেয়ে গেছিলেন? শেষ মেসেজে নিজের পরিবারের কথা বলার পাশাপাশি প্যালেস্টাইনের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা উল্লেখ করেছেন আনাস। লিখেছেন, ‘‘এটা আমার শেষ বার্তা। যদি এটা তোমাদের কাছে পৌঁছোয়, জেনো আমাকে মারতে সফল হয়েছে ইজরায়েল। আমার কণ্ঠরোধ করে দিয়েছে। তোমরা শান্তিতে থাকো। ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন। আসকালানে আমার পরিবার রয়েছে। প্রিয়জনেরা রয়েছেন। আশা করেছিলাম, তাঁদের কাছে ফিরতে পারব। ঈশ্বর আমাকে তত দিন বাঁচিয়ে রাখবেন। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। অনেক যন্ত্রণা আমি সহ্য করেছি। কিন্তু কখনও সত্যের পথ থেকে সরে আসিনি। আমার পুত্র সালাহকে রেখে গেলাম। আশা করি, ও আমার অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ওকে বড় হতে দেখতে পারলাম না। আমার মাকে রেখে গেলাম। আমি যেখানে যাই, মায়ের আশীর্বাদ আমার সঙ্গে থাকে। আর রেখে গেলাম আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। এই যুদ্ধ বহু দিন আমাদের আলাদা করে রেখেছে। ঈশ্বর আমার সমস্ত পাপ ক্ষমা করুন। গাজাকে আপনারা ভুলবেন না। আমাকে মনে রাখবেন।’’

IDF আনাসকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিলেও আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইজরায়েলি সেনার হামলায় যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনই তাঁর কর্মী। আর এদের মধ্যেই রয়েছে আনাসের নাম। সাংবাদিক হামলার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু নেতানিয়াহু থামতে নারাজ। আনাসের লেখায় যুদ্ধক্লান্ত গাজা (Gaza) এবং প্যালেস্টাইনের কথা পড়ে চোখ ভিজেছে নেট প্রভাবীদের। ঠিক কতটা দূরদর্শিতা ও মানসিক জোর থাকলে থাকলে একজন সাংবাদিক এত আগে থেকে নিজের শেষ পরিণতির কথা কল্পনা করে নোট লিখে যেতে পারেন তা ভেবেই অবাক হচ্ছেন মনস্তাত্ত্বিকরা।

–

–

–

–

–
–

–

–