
সুধা : অমল ।
রাজকবিরাজ : ও ঘুমিয়ে পড়েছে ।
সুধা: আমি যে ওর জন্য ফুল এনেছি — ওর হাতে কি দিতে পারবো না ?
রাজকবিরাজ : আচ্ছা , দাও তোমার ফুল ।
সুধা : ও কখন জাগবে ?
রাজকবিরাজ : এখনই , যখন রাজা এসে ওকে ডাকবেন ।
সুধা : তখন তোমরা ওকে একটি কথা কানে কানে বলে দেবে ?
রাজকবিরাজ : কী বলবো ?
সুধা : বোলো যে , ‘ সুধা তোমাকে ভোলে নি ‘ ।

মৃত্যুময় ‘ ডাকঘর ‘ – এ সুধার উজ্জ্বল উপস্থিতিই যা একটু প্রাণ আনে , আরো আরও প্রাণ তো দিতে পারে না সে , ছোট্ট মেয়ে তার সবটুকু প্রাণ উজাড় করে দিয়ে আশ্বস্ত করে অসুস্থ ঘরবন্দী অমলকে। এটুকুই তো ভরসা।
সুধাসঙ্গ , সঙ্গসুধা ।

ছোটবেলায় ডাক্তারের কঠোর নির্দেশে গৃহবন্দী অমলের সঙ্গে পাঁচমুড়ো পাহাড়ের গায়ে শামলি নদীর ধারের এক গ্রাম থেকে আসা দইওয়ালার বার্তালাপ শুনে খুব মনখারাপ হতো । আজ প্রৌঢ়ত্বের দরজায় দাঁড়িয়েও সেই আশ্চর্য মনখারাপ এক ফোঁটাও কমে না । শৈশবে মনে হতো অমলের নিশ্চয়ই কোনো কঠিন অসুখ হয়েছে ।

একমাত্র রাজার আদেশ ছাড়া সে অসুখ সারবে না । রাজা স্বয়ং যেদিন আসবেন অমলের কাছে , সেদিন বন্দীদশা ঘুচবে তার । বড়ো হয়ে বুঝতে পারা যায় সেই আকাঙ্খিত ‘ রাজাটি ‘ কে !

অতি অল্প পরমায়ু নিয়ে সংসারে আসা ছোট্ট বালকটির বড়ো বেশি ভরসা বালিকা সুধার উপর । সুধারও নিশ্চয় ভালো লাগে অমলকে।

বনের পাখিরা এসে বারবার ডাকে খাঁচার পাখি অমলকে। সে ডাক শুনে ভেতরে ভেতরে ছটফট করে অমল । কিন্তু সে নিরুপায় । কবিরাজের কঠোর বিধান ।

সুধা : আচ্ছা বেশ । তুমি দুষ্টুমি কোরো না , লক্ষ্মী ছেলে হয়ে এইখানে স্থির হয়ে বসে থাকো , আমি ফুল তুলে ফেরবার পথে তোমার সঙ্গে গল্প করে যাবো ।

অমল : আর আমাকে একটি ফুল দিয়ে যাবে ?
সুধা : ফুল অমনি কেমন করে দেবো ? দাম দিতে হবে যে ।
অমল : আমি যখন বড়ো হবো তখন তোমাকে দাম দেবো । আমি কাজ খুঁজতে চলে যাব ওই ঝর্ণা পার হয়ে , তখন তোমাকে দাম দিয়ে যাব ।

সুধা : আচ্ছা বেশ ।
অমল : তুমি তাহলে ফুল তুলে আসবে ?
সুধা : আসব ।
অমল : আসবে ?
সুধা : আসব ।
অমল : আমাকে ভুলে যাবে না ? আমার নাম অমল , মনে থাকবে তোমার ?

সুধা : না , ভুলব না । দেখো , মনে থাকবে ।
মনে থাকা আর মনে রাখা।
এটুকুই তো বেঁচে থাকা ।

নইলে আহার , নিদ্রা আর রোগব্যাধিবেষ্টিত জীবন বড়োই একঘেয়ে । সুধা তাকে ভুলে গেলে যে মরেও শান্তি নেই অমলের । সুধারা মনে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় বলেই তো পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে অসহায় অমলেরা । ঘুমোও অমল , ঘুমোও । সুধা তোমাকে ভুলবে না ।
আরও পড়ুন – মাছ চাষে নয়া দিশা! ই-অকশনের মাধ্যমে ৫ একরের বড় জলাভূমি লিজের সিদ্ধান্ত রাজ্যের