প্রধানমন্ত্রী যদি উপস্থিতও থাকেন, তাহলেও ২২ অগাস্ট দমদমে রেলের আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নীতিগত কয়েকটি কারণে অনুষ্ঠানে যাবেন না তিনি। রেলসূত্রে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও রেলের ওই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন। কিন্তু রবিবারের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক, বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী!
জানা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পিছনে অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করছে। সেগুলি হল:-
এক) বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষী ভারতীয় বাঙালীদের উপর ভাষাসন্ত্রাস চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি। প্রতিবাদে চলছে আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে ওই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাদের সঙ্গে একাসনে বসতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার প্রতি আর্থিক বঞ্চনার পাশাপাশি এখন ভাষাসন্ত্রাস চলছে কুৎসিতভাবে।
দুই) রেলের এই প্রকল্পগুলি সবই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা করা। অর্থবরাদ্দও তিনিই করেছিলেন। এতদিন ধরে ঢিলে গতিতে কাজ করে এখন ভোটের আগে উদ্বোধন করে নিজেদের নাম লেখাতে চাইছে বিজেপি (BJP)। সেখানে স্রেফ একটা চিঠি পাঠিয়ে রুটিন আমন্ত্রণ করছে মুখ্যমন্ত্রীকে। বাংলায় রেলের অনেক বড় বড় কাজ মমতা করেছেন। মানুষ সুফল পাচ্ছে। আবার তাঁর শুরু করা বহু প্রকল্প কেন্দ্রের দোষে নষ্ট হয়েছে। এখন তাঁর সময়ে শুরু কিছু কাজ, এতদিন দেরির পর ভোটের আগে উদ্বোধন করাচ্ছে বিজেপি।
তিন) এর আগে সাংবিধানিক পদকে সম্মান দিয়ে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিজেপি সমর্থকরা সেখানে সরকারি অনুষ্ঠানেই পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খল, অপমানজনক আচরণ করেছিলেন। যে অনুষ্ঠানে যেটা মানানসই নয়, সস্তা রাজনীতি করতে গিয়ে সেসবই করেছিল বিজেপি। এরা জানে না কোন অনুষ্ঠানে কী রীতি। ফলে তাদের নতুন করে সেই ধরণের আপত্তিকর, নিন্দণীয় কাজের সুযোগই দেওয়া হবে না।
বস্তুত, বাংলার বিরুদ্ধে বিজেপির চক্রান্ত এখন সব সীমা লঙ্ঘন করছে। বাংলায় যেহেতু ওরা ভোটে পরাজিত হয়, তাই বাংলাকে বঞ্চনা, প্রাপ্য টাকা বন্ধ, এসব বিভিন্ন প্রতিহিংসাপরায়ণ পদক্ষেপ তো ছিলই; এখন যোগ হয়েছে বাঙলা ভাষার প্রতি সন্ত্রাস। বাংলা বললেই তাঁকে ‘বাংলাদেশী’ বলে দেওয়া হচ্ছে। অনুপ্রবেশ রোখার দায় কেন্দ্রের, অথচ নির্মমভাবে হয়রান করা হচ্ছে বাংলাভাষী ভারতীয় বাঙালীদের। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার করণীয় করছে। তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সংসদে এবং রাজপথে আন্দোলনে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিজেপির চিত্রনাট্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া রেলমন্ত্রী হিসেবে তিনি বাংলাকে যা দিয়ে গেছেন, সেই দীর্ঘ তালিকাই নজিরবিহীন। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পাহাড়-ডুয়ার্স থেকে সাগর, মমতা যত নতুন রেল, নতুন রুট, নতুন লাইন, নতুন স্টেশন, নতুন প্রকল্প দিয়েছেন, এত কর্মসংস্থান করেছেন, যা এক দৃষ্টান্ত। এখন তাঁরই শুরু করা প্রকল্পে, বরাদ্দ করা টাকায় এতকাল পর যদি বিজেপি ভোটের মুখে উদ্বোধন করে নিজেদের নাম লেখানো ফলক বসাতে চায়, সেটা বিশুদ্ধ কৌশলী সংকীর্ণ রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যাবেন না। তৃণমূল কংগ্রেস সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে প্রচার করে বাস্তব তুলে ধরবে। কমবয়সীদের কাছে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল কাজের বহর তুলে ধরবে। শুধু এই এলাকাই নয়, রেলমন্ত্রী হিসেবে তিনি গোটা বাংলার সব জেলার জন্য যে ঢালাও কাজ করে গেছেন, তা নিয়ে আরেকদফা প্রচার করবে দল।
–
–
–
–
–