দুবছরে ৩ থেকে ৩০! স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে প্রধান শিক্ষকের লড়াইকে কুর্নিশ

Date:

Share post:

“স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী/ আমরা কি আর বইতে পারি?”- সত্যি ছোটবেলায় আমাদের সবারই মনে হয় এই স্কুল, পড়াশোনার চাপ যেন বড্ড বেশিই ভারী। স্কুলছুটও আমরা অনেকে অনেক সময় হয়েছি। আবার অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্র, পারিবারিক চাপ স্তব্ধ করে দিয়েছে পেন-পেন্সিল ধরা হাতগুলোকে। আর সেখান থেকেই শুরু এই গল্প, এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে শিক্ষার আলো পোঁছে দেওয়ার অদম্য লড়াইয়ের গল্প।

পলতার নবপল্লীর ‘সুকান্ত স্মৃতি জি.এস.এফ.পি সরকারি স্কুল’, যেখানে পড়ুয়ারা সকলেই দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলি থেকে আসে। ২০১৯-এর করোনা পরিস্থিতির পর এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র তিন-চারে। ২০২৩ সালে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি এসে স্কুলের এই পরিস্থিতি দেখে অবাক হন, এবং এরপরই শুরু হয় তাঁর লড়াই।

স্কুলের বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় লেগে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে, এবং দ্রুত সফলও হন। মাত্র দুবছরে এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দশগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-এ।

প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের কথায় তাঁর এই স্কুল বর্তমানে অনেক বেসরকারি ইংরেজী মাধ্যম স্কুলকেও টেক্কা দিতে পারে শিক্ষা পরিকাঠামো দিয়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে চালু করা হয়েছে স্মার্ট ক্লাসের ব্যবস্থা, যার ফলে খেলার ছলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বাড়ছে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ। এছাড়া ছাত্র ছাত্রীদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে জোর দেওয়া হয়েছে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মিড ডে মিলের উপরও।

আরও পড়ুন: বনগাঁ রুটে ছুটল এসি লোকাল: সুরাহা কতটা, ধন্দে নিত্যযাত্রীরা

শুক্রবার শিক্ষক দিবসের দিন বিশেষ স্মার্ট ক্লাসের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় শিক্ষক দিবস সম্পর্কে জ্ঞান, ছিল খুদে ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – নাচ, গান, আবৃত্তি। এর সঙ্গে সবশেষে ছিল লুচি ও চিকেন কারির মতো স্পেশাল মিড ডে মিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়- ‘এই স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরাই আসে সমাজের অত্যন্ত নিম্নবিত্ত দিনআনা-দিনখাওয়া পরিবারগুলি থেকে, যাদের অনেকেরই হয়তো একবেলা খাবার জোটে না। সেখানে দাঁড়িয়ে ভাত সঙ্গে কোনোদিন মাছ, কোনোদিন মুরগির মাংস, কখনো পাঠার মাংস কিংবা ডিমের মতো মিড ডে মিল, এছাড়াও লুচি, পরোটা এমনকি বিরিয়ানির মতো সুস্বাদু মুখরোচক খাবার ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে সাহায্য করছে। এছাড়াও পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, স্পোকেন ইংলিশ, যোগব্যায়াম শেখানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে। এই পরিকাঠামো অনেক বেসরকারি ইংরেজী মাধ্যম স্কুলকেও টেক্কা দিতে পারে।’ সবকিছু ঠিকঠাক চললে খুব শীঘ্র স্কুলটিকে সরকারি ভাবে ইংরেজী মাধ্যম স্কুল করে দেওয়া হতে পারে বলে আশা প্রধান শিক্ষকের।

spot_img

Related articles

হাই কোর্টের রায়ে বড়সড় ধাক্কা! খারিজ শুভেন্দুর রক্ষাকবচ, সরকার-দলের বক্তব্যকেই মান্যতা: মত তৃণমূলের

কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) রায়ে বড়সড় ধাক্কা খেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Shubhendu Adhikari)। ২০২২ থেকে...

এসএসকেএমে নাবালিকার ‘শ্লীলতাহানি’র ঘটনায় রিপোর্ট তলব স্বাস্থ্যভবনের

কলকাতা তথা রাজ্যের গর্ব এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে নাবালিকা রোগীকে 'শ্লীলতাহানি'র (Minor girl Assault case)...

সর্দারজির পর পুলিশ-বাইকার! বিজ্ঞাপণের চরিত্রে সুপারহিট সৌরভ

আবার দাদাগিরি মহারাজের। নিত্য নতুন লুকে চমক দিচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়( Sourav Ganguly)। কয়েকদিন আগে সর্দারজির লুকে দেখা গিয়েছিল...

রাজধানীতে আইইডি বিস্ফোরণের ছক বানচাল, গ্রেফতার ২ আইসিস জঙ্গি!

দিল্লিতে (Delhi) ফিদাঁয়ে হামলার ছক পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর! পর্দা ফাঁস করল দিল্লি পুলিশ (Delhi Police)। শুক্রবার সকালে আইসিসের...