রাজ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। বারবার বিরোধীদের চক্রান্তে বাধার মুখে পড়া এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম দিনের পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করল রাজ্য শিক্ষা দফতর। যোগ্য সহযোগিতা রাজ্য প্রশাসনের। বারবার মামলা করে, এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের চক্রান্ত করেও শিক্ষা দফতর ও রাজ্য প্রশাসনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এতটুকু প্রভাব ফেলতে পারল না বিরোধী চক্রান্তকারীরা।

পরীক্ষায় সফল কমিশন
প্রশ্ন পত্র নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছানো থেকে পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission)। সেই নিয়ম মেনে রবিবার প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যায় প্রশ্নপত্র ও নির্দিষ্ট ওএমআর শিট (OMR sheet)। নির্দিষ্ট সময়ের পরে বন্ধ হয়ে যায় পরীক্ষাকেন্দ্রের দরজা। তারই মধ্যে নিয়ম মেনে পরীক্ষার্থীদের যাচাই করে প্রবেশ করানো হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষা শেষে নিজেদের নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্র ও ওএমআর শিট নিয়ে বেরিয়ে আসেন পরীক্ষার্থীরা। সকলের মুখেই তৃপ্তির হাসি।

পরীক্ষার্থীদের জন্য পরিকাঠামো
গোটা রাজ্য প্রশাসনকে রবিবারের এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। প্রতিটি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ (Manoj Pant)। সেই মতো কলকাতা-সহ রাজ্যের সব জেলায় একটিও অভিযোগ ছাড়া সম্পন্ন হয় এসএসসির প্রথম পরীক্ষা। সচল রাখা হয়েছিল সব ধরনের পরিবহন। চালু ছিল সব সরকারি বাস। কলকাতায় পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৭২ শতাংশ। সব জেলায় উপস্থিতির হার ছিল ৭৬.৫ শতাংশ।

প্রায় ৩.৫ লক্ষ মানুষের সমন্বয়
রবিবারের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯১৯ জন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের অভিভাবক ও পরিবারের সহযোগীরা। কলকাতা শহরের প্রায় সব বড় কলেজ ও স্কুলে পড়েছিল পরীক্ষার সিট। উৎসবের মরশুমে রবিবারের ভিড় ও অন্যান্য প্রস্তুতি সত্ত্বেও নির্বিঘ্নে পরীক্ষার্থী ও তাঁদের পরিজনদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়া, সেখানে পরীক্ষা চলাকালীন থাকার সব ব্যবস্থা ও সমন্বয় তৈরিতে সফল প্রশাসন। একসঙ্গে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের সমন্বয় সাধনে একটিও অভিযোগের অবকাশ রাখেনি প্রশাসন।

ভিন রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের সুযোগ
এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষায় বাংলায় যেভাবে নিয়োগের পথ খুলেছে, তাতে রবিবার বিপুল উৎসাহ দেখা যায় ভিন রাজ্যের, বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের। এসএসসি-র (SSC) পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবারের পরীক্ষা ৩৬ হাজার ভিন রাজ্যের চাকরিপ্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার আয়োজনের ব্যবস্থাপনা ও গোটা পরীক্ষায় অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা। কোথাও ভিন রাজ্য থেকে এরাজ্যে পরীক্ষা দিতে আসার জন্য তাঁদের বাধার মুখে বা হেনস্তা যে তাঁদের হবে না, সেই প্রত্যাশাতেই বাংলায় নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিলেন ভিন রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে প্রমাণ করে দিলেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে নিয়োগের দৈন্যের বিষয়টি – যেখানে বছরের পর বছর নিয়োগের পরীক্ষা হয় না। ফর্ম ফিলাপ হলেও পরীক্ষা আটকে থাকে, অথবা প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর পিছিয়ে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া।

মামলাকারীদের চক্রান্ত ভেস্তে সফল পরীক্ষা
পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেও পরীক্ষা আটকে দিতে নানা চক্রান্ত চলেছে। এক শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীই সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টে গিয়ে পরীক্ষা আটকানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া জারি রাখতে অটল কমিশন কোনও বাধা না মেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে যায়। যার সফল রূপায়ন হল রবিবার। এদিন বারবার আদালতে গিয়ে নিয়োগ আটকানোর চেষ্টা করা চাকরিপ্রার্থীদেরও পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা যায়। এমনকি পরীক্ষা শেষে ব্যবস্থা ও প্রশ্ন নিয়ে তাঁরাও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন: রাজ্যের ৬৩৬ পরীক্ষাকেন্দ্রে নির্বিঘ্নে শেষ SSC নিয়োগ পরীক্ষা, আশায় চাকরিপ্রার্থীরা
প্রশ্নফাঁসের চক্রান্তকে পরাস্ত
পরীক্ষার দুদিন আগে থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বারবার দাবি করতে থাকেন এসএসসি-র প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। অথচ তিনি কোনও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখাতে পারেননি। রবিবারের পরীক্ষার শেষে মুখে কুলুপ শুভেন্দুরও। রাজ্যের একটিও কোণা থেকে প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি, এমনকি পরীক্ষা শেষে শুভেন্দুও সেই অভিযোগ করতে পারেনি। বাস্তবে যেভাবে প্রশ্নপত্র ও ওএমআর-এর সিকিউরিটি ফিচার যোগ করা হয়েছে, তাতে একটি প্রশ্নও বাইরে আসলে, তার আধঘণ্টার মধ্যে যে তা কমিশন চিহ্নিত করতে পারবে, কোন ওএমআর থেকে প্রশ্ন ফাঁস। সেই তথ্য শনিবারই কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার স্পষ্ট করে দেওয়ার পর আর দুষ্কৃতীদের সাহস হয়নি গোটা পদ্ধতিতে কারচুপি করার।
–

–