জয়িতা মৌলিক
‘রক্তবীজ ২’ রেটিং – 8/10
প্রথমেই বলে রাখা ভালো রক্তবীজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘রক্তবীজ ২’ দেখতে যাবেন না। কারণ এর ধামাকা আরও অনেক বড়। পুজোয় খেল্ দেখাবেন ‘পঙ্কজ-সংযুক্তা’। তবে এবার কিন্তু মুনিরকে অর্থাৎ অঙ্কুশকেও আর বাইরে রাখা যাবে না। “গোবিন্দ দাঁত মাজে”! কেন বললাম দেখলে বুঝবেন।
এবার আসি ছবির গল্পে। রক্তবীজ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন এটা দেশের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে তৈরি ছবি। আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্র। গতবার তিনি নিজের গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজোয় গিয়েছিলেন, যেমন যেতেন প্রণববাবু। সেখানেই বিস্ফোরণ। বাস্তবে সেটাকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ছায়া বলেই মনে হয়। তারপর গল্প এগিয়েছে বিভিন্ন শাখা প্রশাখায়। বেঁচে গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এবার তিনি চলেছেন বাংলাদেশে। স্বাভাবিক প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সময়কার বাংলাদেশ রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আদলে এই তৈরি সীমা বিশ্বাসের অভিনীত চরিত্রটি। সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ীর বইয়ের সূত্র ধরে গল্পটি লিখেছেন জিনিয়া। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার জুটির পরিচালনার আর একটি মাইল ফলক ‘রক্তবীজ ২’।
সেখানে সক্রিয় মুনির। আবার খুনের ছক, গভীর ষড়যন্ত্র। একের পর এক রহস্য আর রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন। মুখোমুখি নায়ক-খলনায়ক অর্থাৎ আবির এবং অঙ্কুশ।

বেখাপ্পা মেকিংয়ে ফ্লপ ‘রঘু ডাকাত’

এতটা পড়ে যদি মনে হয়, বাব্বা পুজোর মধ্যে এত চাপ নিতে হবে! তাহলে বলি, না, রোমান্স আছে। সেই যে রক্তবীজের শেষে পঙ্কজ জিজ্ঞাসা করেছিল সংযুক্তা মাকে তাঁর কথা বলেছে কি না? তার উত্তর জানতে হবে তো। নীল বিকিনিতে হট অবতারে মিমি কেমন? তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে দিনে দিনে কাউন্সিলার অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে পুলিশ হয়ে উঠছেন, তাতে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট না তাঁকে ডেকে পদে বসিয়ে দেয়। একেবারে পারফেক্ট।
এবার আসি অঙ্কুশ হাজরার কথায়। নায়ক থেকে ভিলেন, কমেডি থেকে নাচ- যেভাবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন তাই দেখে মনে হয় বাংলা ছবি তাঁকে খুব কমই ব্যবহার করছে।
ভিলেনের কথা আগে বললে যদি হিরো রাগ করেন তাহলে বলব, আবির যথাযথ। ভারসাম্য রাখতে আবিরের মতো খুব কম লোকই পারেন। কড়া পুলিশ আধিকারিক পঙ্কজ যেমন দুষ্টুলোকদের রক্ত জল করে দিচ্ছে, তেমনি সংযুক্তার সঙ্গে ১০০ ভাগ প্রেমিক আবির থুড়ি পঙ্কজ। সিক্স প্যাক নয়, মস্তিষ্ক দিয়ে অভিনয়। ঠিক যেমন ফেলুদা বলেছিলেন, “মগজাস্ত্র”। বাস্তবের পুলিশের কিন্তু সেটাই অস্ত্র।

অবাক করছেন কৌশানী। হিরোইন থেকে ক্রমশ হয়ে উঠছেন প্রকৃত অভিনেত্রী। যে কোনও চরিত্র- গ্ল্যামারাস বা আটপৌরে সবেতেই সমান সাবলীল। আগেরবারের মতো এবারও ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় যেন আসল প্রণববাবু।

সবশেষে বলি, এই ছবিতেও আইটেম ডান্স আছে। অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রস করেনি নুসরত। তবে যেভাবে ‘রক্তবীজ’-এর শেষে অঙ্কুশ এসেছিলেন আইটেম ডান্সার হিসেবে, একই ভাবে এলেন নুসরতও।

তাহলে কি এবার শিবু-নন্দিতা নুসরতকে ‘অর্ডার’ দিবেন ভিলেন হতে? হয়ে যাক না। বাংলা ছবি বহুদিন কোনও দুর্ধর্ষ খলনায়িকা পায়নি। সেই ছিলেন অনামিকা সাহা ‘বিন্দুমাসি’। তারপর আর সেভাবে মহিলা ভিলেন এলো কোথায়? শিবু-নন্দিতা-জিনিয়া মিলে সেটাও হয়ে যাক। কারণ হল থেকে বেরিয়ে একটাই কথা মনে হচ্ছে, “এ দিল মাঙ্গে মোর”। সুতরাং এই পুজোয় রক্তবীজ ২। আর পরের পুজোয় ‘রক্তবীজ ৩’।

–

–

–

–
–