ভিড়ের চ্যালেঞ্জ সামলে প্রতি পুজোয় Successful কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ

Date:

Share post:

সৌভিক চক্রবর্তী, অফিসার ইন চার্জ, হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ড
ছোটবেলার দুর্গাপুজো (Durga Puja) ছিল নতুন জামা, নতুন জুতোয় পায়ে ফোসকা, ক্যাপ বন্দুক আর এগ রোল। গড়িয়া থেকে একডালিয়ায় পুজো দেখতে আসার পারমিশন বাড়ি থেকে পেলেই মনে হতো সেরা প্রাপ্তি। আর গড়িয়াহাট অঞ্চলের সব ঠাকুর দেখা হয়ে গেলে ভাবতাম সারা কলকাতা ঠাকুর দেখা হয়ে গেছে। সেই সময় পুজো আর এখনকার পুজোর বিস্তর তফাৎ। তবে এই কাজটাও খুবই এনজয় করি।

প্রথম বছরটা এরকম ছিল না। পড়তে পড়তেই পুলিশ (Police) সার্ভিসে ঢোকা। আর ট্রেনিং শুরু হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরে পুজো। প্রথম বছরটা একটু মিস করছিলাম বন্ধুদের। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম ডিউটির শপথ নেওয়া মানে সব ভুলে শুধু নিজেকে কর্তব্যে অবিচল রাখা তখন থেকে এটাই ভালোলাগা। এখন মনে হয় সবাই যদি পুজোর আনন্দে মেতে থাকে তাহলে এত বড় কর্মকাণ্ড সামলাবে কে? কেউ বিপদে পড়লে কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে? পথ নির্দেশ করবে কে? কিছু লোককে তো থাকতে হবে যাঁরা অন্যদের আনন্দের সলতেটা পাকিয়ে দেবে। আর এইভাবে কাজ করতে করতে এটাই এখন আমার বৃহত্তর পরিবার। এটাই আমার বৃহত্তর বন্ধুমহল। এখন এটা করতেই সবচেয়ে ভালো লাগে।

একটা দুর্গাপুজোর শেষ হতে না হতেই আমাদের পরের পুজোর প্ল্যানিং শুরু হয়ে যায়। এই পুজোতে কোনও খামতি ছিল কি না, আরও কী ভালো করা যায়? এই নিয়ে সিনিয়ররা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এটা চলতে থাকে। প্রতিটি পুজোমণ্ডপ কে কী থিম করছে, কোথায় মানুষ বেশি ভিড় জমাতে পারেন- সেই হিসেবে আমাদের প্ল্যানিং করা থাকে। পুজোর সময় কলকাতায় এমন অনেক মানুষই আসেন যাঁরা আগে কখনও মহানগরে পা রাখেননি। আমাদের মনে রাখতে হয়, মানুষ এখন উৎসবের মেজাজে রয়েছেন। তাঁরা হয়তো অনেক কিছুই খেয়াল করছেন না। ফলে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলানোর কথা প্রথম থেকেই আমাদের মাথায় থাকে। আর উৎসবের আনন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুখে থাকে হাসি।

পুজোর অনেক আগে থেকেই আমাদের যেহেতু প্ল্যান হয়ে থাকে, সেইমতো ব্রিফিং করে দেওয়া হয়। যাঁরা দায়িত্বে থাকেন তাঁদের ভালোভাবে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর শুধু পুলিশ (Police) কর্মীরা বা আমাদের মতো ওসিরাই নন, ডেপুটি কমিশনার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনাররা, এমনকী খোদ পুলিশ কমিশনারও রাস্তায় নেমে সব রাস্তা ঘুরে দেখেন। কলকাতায় পুজোর সময় রেকর্ড ভিড় হয়। সঙ্গে রাস্তা দখল করে থাকে অসংখ্য গাড়ি। এইটা সামলানো সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে প্রতিবার কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ এই পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়।

আমাদের পরিবার আত্মীয়-স্বজনরাও এখন আর পূজোয় আমাদের মিস করে না। তারাও বিষয়টার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। পুজোর সময় রাস্তা হয়তো ডিউটি করছি, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হল। তারা এসে বলল, তুই ডিউটি করছিস, এইতো আমরা এখান থেকে ঘুরে এলাম। আমার কিন্তু শুনে ভালো লাগে, যে আমরা কাজ করছি বলেই এরা সাবধানে সুষ্ঠুভাবে পুজোতে ঘুরছে। অনেক সময় আমার বোন রাস্তায় বেরিয়ে ফোনে জিজ্ঞাসা করে, “দাদা তুই কোথায়?” গাড়ি ঘুরিয়ে পুজোর মধ্যে একবার দেখে যায় আমাকে। দুর্গাপুজোতে পরিবারের সঙ্গে ঘোরাটা এখন আর মিস করি না। তবে পুজোর পরে আমাদের একটি ছুটি দেওয়া হয়। সেই সময় পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাই। পুলিশের কাজে এটাই শেখানো হয়, যেদিন তুমি ছুটি পাবে সেদিনই তোমার উৎসব।

সবাই কলকাতার পুজো দেখতে আসুন। আবহাওয়া, রাস্তা এসব নিয়ে কোনও চিন্তা করবেন না। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সব সাহায্য নিয়ে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আপনারা আসুন। সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে পুজো দেখুন। সবাই খুশি মনে বাড়ি যাবেন এটা গ্যারান্টি।

spot_img

Related articles

চাপ দিয়ে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়: বিস্ফোরক নারদ মামলার প্রথম তদন্তকারী CBI আধিকারিক

বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি নারদ (Narada Case) মামলার প্রথম তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিক রঞ্জিত কুমারের (Ranjit Kumar)। একটি অডিও সাক্ষাৎকারে তিনি...

ছটপুজোয় বন্ধ থাকবে রবীন্দ্র – সুভাষ সরোবর, বিকল্প ঘাটে আয়োজনের প্রস্তুতি 

ছটপুজো উপলক্ষে এ বছরও সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হবে রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর। জলদূষণ রোধ ও পরিবেশ...

বোনের কাছে ভাইফোঁটা শোভনদেবের, টলিনায়িকারা ফোঁটা দিলেন অরূপকে

বাংলা জুড়ে আজ উৎসবের আমেজ। সাধারণ মানুষ থেকে সেলিব্রেটি সকলেই মাতলেন ভাইফোঁটা উদযাপনে। সকাল গড়িয়ে বিকেল তবু এখনও...

জলাভূমির গুরুত্ব বোঝাতে নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার গড়া হবে নলবনে

পূর্ব কলকাতা (East Kolkata) জলাভূমির পরিবেশগত গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নলবন (Nalban) ভেরিতে একটি প্রকৃতি...