বাংলার কোনও বৈধ ভোটারকে জোর করে অবৈধ করা যাবে না। বুধবার, কলকাতার চিফ ইলেকশন কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থান মঞ্চ থেকে দাবি জানাল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ (Desh Bachao Gana Manch। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু (Purnendu Bose) SIR নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। যদি শুধুমাত্র ভোটে কারচুপি করে ভোট জেতানোর জন্য বিজেপির প্ররোচনায় নির্বাচন কমিশন এসআইআর-এর মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চায়, তাহলে বাংলার মানুষ প্রতিবাদে বারবার রাস্তায় নামবে।

আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু ভোটের আগে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার, নাগরিকত্ব নিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রহসন শুরু করেছে। এই বিষয়ে নিন্দা করে এদিন কলকাতার চিফ ইলেকশন কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থান মঞ্চ থেকে সরব হল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। পুর্ণেন্দু বসু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী সুশান রায়, পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, সমাজকর্মী বাসুদেব ঘটক, সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র, নাজমুল হক, অমিত কালী, অভিনেতা রাহুল চক্রবর্তী, অভিনেতা ভিভান ঘোষ, অভিনেত্রী সোমা চক্রবর্তী, অধ্যাপক কুন্তল ঘোষ, অধ্যাপক দীপঙ্কর দে, জাতীয় বাংলা সম্মেলনের সভাপতি সিদ্ধব্রত দাস, সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, বাংলার কোনও বৈধ ভোটারকে যেন-তেন-প্রকারে করে অবৈধ ভোটারে পরিণত করা যাবে না। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে যেসব মানুষের ভোটে কেন্দ্রেীয় সরকার এসেছে, সেই ভোটার তালিকাকেই বহাল রাখতে হবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election)। একমাত্র যদি কোনও ব্যক্তি মারা যান, শুধুমাত্র সেই নামটিই ভোটার তালিকা থেকে বাতিল করতে হবে। ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ভিনরাজ্য থেকে যেসব ব্যক্তিদের ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড বা ভোটার কার্ড বানিয়ে ভোটে কারচুপি করার কুমতলবে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ঢোকানো হচ্ছে তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের জানায়, নির্বাচন কমিশন বৈধ ভোটার (Voter) তালিকা হিসেবে যে তালিকাটি প্রকাশ করেছিল, তা ২০০২ সালের ভোটার তালিকা। কেন ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরাই শুধু ভোটার দিতে পারবেন? তার পরবর্তী ভোটার তালিকায় থাকা ভোটারদের নাম কোনও নথির সাপেক্ষে বাদ গেল তার জবাব নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। যদি কোনও ব্যক্তিকে অবৈধ ভোটার হিসেবে গণ্য করা হয়, অনাগরিক হিসেবে গণ্যবকরা হয়, তাহলে তাদের সন্তানদেরও কি এই দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না? যারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বা বিহার থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছে তাদেরও কি নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না? SIR করে সেই ষড়যন্ত্র করেছে নির্বাচন কমিশন। বিহারের এমন বহু নাগরিকের নাগরিকত্ব শুধুমাত্র বাড়িতে না থাকার কারণে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এরকম পদক্ষেপ আশা করা যায় না।দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সদস্যদের মতে, নির্বাচন কমিশনারের পদ একটি নিরপেক্ষ পদ। এই পদে আসীন পদাধিকারী ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট দলের বা কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির নির্দেশানুযায়ী কাজ করতে পারেন না, এটি সম্পূর্ণ সংবিধান এক্তিয়ারভুক্ত, সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছেন যে, নির্বাচন কমিশনের এসআইআর যেসব দলিল না থাকলে ভোটাধিকার বাতিল বলছে, তার কোনওটাই তাঁর কাছে নেই, তাহলে কি তাঁকেও ভোটদান থেকে বিরত রাখা হবে? দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের একাধিক সদস্যের বক্তব্য, এমন করেই তিন লক্ষেরও বেশি মানুষের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছে এসআইআর, ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে বহু মানুষকে।

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সদস্যেরা মঞ্চ থেকে দাবি তুলেছেন কিছুতেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে রোহিঙ্গা, অনুপ্রবেশকারী, বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে বৈধ ভোটার বাতিল করা যাবে না, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশের মানুষদের নামে ভুয়ো এপিক কার্ড বানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় যোগ করা যাবে না। যদি শুধুমাত্র ভোটে কারচুপি করে ভোট জেতানোর জন্য বিজেপির প্ররোচনায় নির্বাচন কমিশন এসআইআর-এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চায়, তাহলে বাংলার মানুষ প্রতিবাদে বারবার রাস্তায় নামবে।

–

–

–

–

–

–