মহিলারাই বেশি মদ্যপান (Drinking) করেন। সেটা ভালো দেখায় না। ইত্যাদি নানা মন্তব্য করে বিতর্ক জড়ালেন নদিয়ার রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (Add Superintendent Of Police) লাল্টু হালদার (Laltu Haldar)। এখন সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর কথা। সেই ভিডিও দেখে তীব্র নিন্দা শুধু নয়, দায়িত্বশীল পদে থেকে এই ধরনের মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। বিতর্ক ধামাচাপা দিতে লাল্টুর সাফাই, ”আমি শুধুমাত্র শান্তিপুরের কালীপুজো নিয়ে বলেছি।”

সদ্য কালীপুজো (Kali Pujo) পেরিয়ে এখন চলছে জগদ্ধাত্রীপুজো। সেই পুজোর ভাসানের আগে স্থানীয় পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে বৈঠক করে পুলিশ-প্রশাসন। আর সেখানেই লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে চরম বিতর্কে জড়িয়েছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার। তাঁর কথায়, ”আমার বলতে লজ্জা করছে। আপনাদের শোভাযাত্রায় (Procession) রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইয়ং মেয়েরা মদ খেয়েছেন। এটা যদি শোভাযাত্রার শোভা হয়, আমি এই শোভাযাত্রার নিন্দা করি। বাড়ির মেয়েরা যদি এ রকম হয়ে যান, তবে সমাজ উচ্ছন্নে চলে যায়। মহিলাদের বাগে আনা যাচ্ছে না।”

এখানেই শেষ নয়, বাড়ির মহিলাদের রীতিমতো শাসনে রাখার নিদান দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ”মহিলারা যে ভাবে অত্যাচার করছেন, অন্যায় ভাবে প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন, আপনারা এটা খেয়াল রাখুন। আপনারা ভাববেন না যে, পুলিশের সঙ্গে হচ্ছে, আমাদের কী! এটা ঘরে ফিরবে। ফিরছেও। উৎসব এক দিনের। তার পর ঘরে ফিরে দাম্পত্যকলহ। এ সব কিন্তু একদিনে আসেনি। প্রশ্রয় পেয়ে এই সব হচ্ছে।” মহিলারা মদ্যপান (Drinking) করলে না কি তাঁর খারাপ লাগে। লাল্টুর কথায়, ”মেয়েরা বাড়িতে মদ খেয়ে এসে পুলিশের (Police) সঙ্গে কথা বলছে। মুখ দিয়ে ভক ভক করে গন্ধ বেরোচ্ছে। এটা দেখতে খারাপ লাগে। সত্যি কথা বলতে, ছেলেদের থেকে মেয়েরাই বেশি মদ খাচ্ছে। এ বছর কালীপুজোর শোভাযাত্রায় মেয়েরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছে। এটা লজ্জার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।”

এই মন্তব্য সামনে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শান্তিপুরের রাধারানি নারী শিক্ষা মন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা (Head Mistress ) তপতী দাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের এই মন্তব্য সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। শুধুমাত্র মহিলাদের মদ্যপানেই সমাজ উচ্ছন্নে যায়— এই ব্যাপারটা এত সরলীকরণ করা ঠিক নয়। এক জন মহিলার সংসারের জন্য কতটা লড়াই করেন কল্পনাও করা যায় না। কোথাও কেউ আইন ভঙ্গ করলে, গোটা সমাজের বিরুদ্ধে এ ভাবে নীতিপুলিশগিরি করা ঠিক নয়। পুলিশকর্তার এই মন্তব্য কাঙ্ক্ষিত নয়।“

লেখিকা (Writer) প্রিয়দর্শিনী বসুর মতে, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বক্তব্যে ভীষণ রকম সুপ্ত পুরুষতান্ত্রিক মনস্তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। প্রশাসনের এ রকম উচ্চপদে থেকে মহিলাদের প্রতি এই ধরনের মন্তব্য করা যায়? সাহস-স্পর্ধা-ক্ষমতার নিশ্চয়তা না থাকলে উনি হয়তো করতেন না। অবিলম্বে ওঁর এই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। কারণ, গার্হস্থ্যহিংসা বা মহিলা নির্যাতনের কোনও ঘটনায় ওঁর কাছে কেউ এলে উনি ধরেই নেবেন, এর নেপথ্যে মহিলাদের মদ্যপানের প্রবণতাই দায়ী। এর পরেও এই পুলিশ আধিকারিক কী করে এই পদে থাকতে পারেন, জানি না।“

নৃত্যশিল্পী (Dancer) রমা মজুমদারের কথায়, “এটা শান্তিপুর, কাবুল বা কান্দাহার নয়। অ্যাডিশনাল সাহেব গুলিয়ে ফেলেছেন। মহিলাদের অযাচিত জ্ঞান না দিয়ে, অবৈধ মদের ঠেক গুলো বন্ধ করুন।“

রানাঘাট কলেজের (College Student) ছাত্রী শ্রুতি মুখোপাধ্যায়ের বলেন, “মহিলাদের জন্য কি সরকার মদ্যপান নিষিদ্ধ করেছে? বিশ্বের কিছু দেশে এই ধরনের মানসিকতা রয়েছে। সে দেশগুলিকে আমরা অন্ধকারের দেশ বলি। অবিলম্বে এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়া উচিত।“

সমালোচনার মুখে অতিরিক্ত সুপারের (Laltu Haldar) সাফাই, “আমি শুধুমাত্র শান্তিপুরের কালীপুজো নিয়ে বলেছি। সেখানে তরুণীরা যে ভাবে প্রকাশ্যে মদ খেয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছি। শান্তিপুরে বামা কালী ভাসানের সময় যা দেখেছি, তা-ই বলেছি। মদ খেয়ে অসভ্যতা করলে পুলিশ কিছু বলতে পারবে না?“ এই ভিডিও কীকরে প্রকাশ পেল- তা নিয়েও বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।

–
–


