প্রতিশ্রুতি রেখেই ফের উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন তিনি। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সোজা উত্তরকন্যায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী পর্যালোচনা শুরু করেন। দুর্গাপুজোর পর থেকেই উত্তরবঙ্গ জুড়ে টানা বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত হয়েছিল দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার। আগেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত তিনি নিজে তদারকি করবেন। সেই অনুযায়ী তৃতীয় দফায় ফের উত্তরবঙ্গে পৌঁছলেন তিনি।
সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগের সফরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে সরেজমিনে ত্রাণ, উদ্ধার, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের একজন সদস্যকে হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত ১১,৫৫৫টি পরিবারকে ও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩,২৩৯টি পরিবারকে বাড়ি পুনর্নির্মাণের অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
দার্জিলিং জেলায় ১,০৫০ জন কৃষককে কমলালেবু, আদা ও বড় এলাচের চারা বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা ও ধস কবলিত চার জেলার ৮০৭ জন কৃষককে প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আবার জমিতে চাষ শুরু করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ফসলহানির পূর্ণ মূল্যায়ন শেষে বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
উত্তরকন্যা থেকে এদিন রাজ্যের ৮টি জেলার ৩,৪৯১ জন উপভোক্তাকে জমির পাট্টা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩.১৭ লক্ষেরও বেশি গৃহপাট্টা, ১.৯৩ লক্ষ কৃষি পাট্টা, প্রায় ৬০ হাজার উদ্বাস্তু পাট্টা ও ৪৭ হাজার বনপাট্টা। এছাড়া, চা বাগান এলাকায় ৫৩টি নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, যার মধ্যে সোমবার ১৪টি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ১৫টি নতুন ক্রেশ চালু করা হয়েছে, পাশাপাশি বাগানের শিশুদের স্কুলে নিরাপদে পৌঁছনোর জন্য ১০টি বাস পরিষেবাও চালু করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের নামে একটি নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন। সেইসঙ্গে শিলিগুড়ির চাঁদমনি চা বাগানের ১৭.৪ একর জমি ‘মহাকাল মন্দির’-এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের নির্বিঘ্ন সম্পাদনের জন্য মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি ট্রাস্টও গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও, উত্তরবঙ্গের নদীগুলির বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারত–ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় ও বন্যা ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকরভাবে করা যায়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরবেন। তবে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন- রাজ্যের গ্রামে পৌঁছচ্ছে আধুনিক চিকিৎসা, মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে চালু ২১০টি মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট
_
_
_
_
_
