Monday, November 17, 2025

ফিল্ম স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কমার্শিয়াল ছবি বানালে সে ক্ষেত্রে তাঁরা টলিউডের নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারেন কি? যখন সেই ছবির সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থা যুক্ত হয়েছে! এখন এই প্রশ্ন ঘিরেই সরগরম টলিউড। গত সপ্তাহে হইহই করে পালিত হয়েছে একত্রিশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। কিন্তু তারপরেই একটি ছবি ঘিরে জলঘোলা সিনেপাড়ায়। ছবির নাম ‘দ্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’, পরিচালক জয়ব্রত দাস। এখানেই শেষ নয়, এই ছবির সেন্সর সার্টিফিকেটে দেখা যাচ্ছে নাম রয়েছে প্রযোজকের এবং প্রযোজনা সংস্থার। লাখ লাখ টাকা খরচ করে তারা মাল্টিপ্লেক্সে ছবি মুক্তির ব্যবস্থা করছে এবং প্রচার করছে। তাহলে টলিউডের নিয়ম মেনে তারা টেকনিশিয়ানদের প্রাপ্য দেবে না কেন? প্রশ্ন তুলেছে ফেডারেশন এবং ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইম্পা)। তাহলে কি ছাত্রদের কাঁধে বন্দুক রেখে খেলাটা অন্য কোথাও হচ্ছে? যাঁরা আদালতে লড়াই করে বাস্তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সেই গোষ্ঠী কি রয়েছে জয়ব্রতদের উস্কানি দিতে- উঠছে প্রশ্ন।

সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্র জয়ব্রত দাসের ছবি ‘দ্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’। তাঁর দাবি, ছবিটি পড়ুয়াদের তৈরি। এখানে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেউ টাকা নেননি। এখন তাঁরা যখন ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি করতে চাইছেন, তখন বাধা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, ইম্পার পক্ষ থেকে নাকি টাকাও চাওয়া হয়েছে।

ইম্পার তরফে সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত বলেন, “’দ্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’-র টিম থেকে আমাকে বলা হয়েছিল যে ইম্পা-তে যে ছবি রেজিস্ট্রেশন করতে হয় সেটা তাঁরা জানেন না। অথচ সেইটা যে মুম্বই থেকে রেজিস্ট্রেশন করা যায় সেটা তাঁরা জানেন! তাঁরা মুম্বই থেকে রেজিস্ট্রেশন করালেন, এমনকী ছবির সেন্সর পর্যন্ত মুম্বই থেকে করালেন।” এরপর পিয়া জানান, তিনি এই ছবি সেন্সর সার্টিফিকেটে দেখেছেন। সেখানে স্পষ্টভাবে প্রযোজকের নাম দেওয়া রয়েছে প্রতীক চক্রবর্তী এবং প্রমোদ ফিল্মস।” পিয়ার কথায়, “আমার এটা নিয়ে অসুবিধা। যখন প্রযোজনা সংস্থা যুক্ত তবে কেন স্টুডেন্ট ফিল্ম বা প্রজেক্ট ফিল্ম বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে? আমি যদি প্রশ্নটা না তুলি তবে অন্যরা প্রশ্ন তুলবে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের কী অপরাধ ছিল তবে? কীভাবে একই কাজ করে আরেকজন ছাড়া পেয়ে গেল! আমি কী জবাব দেব?” সভাপতি স্পষ্ট জানান, ইম্পা মোটেই টাকা চায়নি। যে টাকা চাওয়া হয়েছে, সেটা তারা কলকাতায় দুদিন শুট করেছেন সেই হিসেবে। তাতে টেকনিশিয়ানদের যে বঞ্চিত করা হয়েছে তার কিছুটা ক্ষতিপূরণ হবে।

ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের কথায়, স্টুডেন্ট ফিল্ম আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মের সংজ্ঞাটাকে সকলের সামনে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টা বিস্তারিত বলি। স্টুডেন্ট ফিল্ম বা প্রজেক্ট ফিল্ম বা ডিপ্লোমা ফিল্ম বলতে যেটা বুঝি যে সেটা কোনও ফিল্ম স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেরা বানাবেন। একদম হাতে-কলমে কাজটার অভিজ্ঞতা দেওয়াটা মূল উদ্দেশ্য। যারা ফিল্মমেকিং পড়ছেন তারা প্রজেক্ট হিসেবে ফিল্মই বানাবেন, খুব স্বাভাবিক। এগুলো খুব কম বাজেটে, ছোট স্কেলে হয়। সাধারণত এই ছবিগুলো বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পাঠায় পড়ুয়ারা আর ইন্সটিটিউটের সেটআপে সাধারণত দেখানো হয়। সেই সব ছবি বড় করে ডিস্ট্রিবিউট করে কমার্শিয়াল রিলিজ হয় না। এ ক্ষেত্রে ফেডারেশন যথেষ্ট সাহায্য করে। আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম হল যখন স্টুডিওর বাইরে গিয়ে একজন পরিচালক নিজে অর্থ সংগ্রহ করে একটা ছবি বানান। ছবির সম্পূর্ণ ক্রিয়েটিভ কন্ট্রোল নিজের হাতে রাখেন। রিলিজও করান।”

এরপরেই স্বরূপ বলেন, “স্টুডেন্টরা ছবিটা করেছে এই নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য বা অভিযোগ নেই। কিন্তু ছবি মুক্তির সময় এসে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা পিভিআর-আইনক্স-এর মাধ্যমে রিলিজ করাতে চাইছেন, ইউএফও, কিউবের খরচ এবং আরো বিভিন্ন টেকনিক্যাল খরচা ধরলে রিলিজের সময়ে সবমিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ করছেন। এরপরে ছবি স্যাটেলাইট বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিক্রিও হবে। পোস্টার থেকে সেন্সর সার্টিফিকেট সমস্ত জায়গায় প্রযোজকের নাম রয়েছে প্রতীক চক্রবর্তী ও প্রমোদ ফিল্মসের। প্রযোজনা সংস্থা যখন যুক্ত হয়ে যায় তখন কি সেটা স্টুডেন্ট ফিল্ম বা ডিপ্লোমা ফিল্ম থাকে? আমার মতে, সেটা থাকে না। তাই যতক্ষণ না এই বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি দেখছি আমার টেকনিশিয়ানদের স্বার্থের জায়গাটা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেটা সভাপতি হিসেবে আমি কি করে করতে পারি? টেকনিশিয়ানদের কাছে জবাবদিহি তো আমাকেই করতে হয়। তাদের জবাবদিহি করার জন্য জবাবটা যদি আমি ছবির পরিচালক এবং প্রযোজকের কাছ থেকে পেয়ে যাই, তাহলেই আমার আর কোন অসুবিধা থাকবে না।”

এই প্রসঙ্গে রূপকলা কেন্দ্র, সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট, পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষক তথা পরিচালক শেখর দাশ বলেন, পড়ুয়ারা ছবি বানাতেই পারেন। তবে তার বাণিজ্যিকীকরণ করতে গেলে অবশ্যই টলিউডের নিয়ম মানতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফেডারেশন, ইম্পার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। শেখরের কথায়, পড়ুয়াদের ছবির সঙ্গে কোনও প্রযোজনা সংস্থার নাম যুক্ত হলে, প্রযোজক কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাঁকেও নিয়ম মানতে হবে। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি মানেই টলিউডে কার্যকর নিয়মবিধি মানতে সবাই বাধ্য।

এই বিষয়ে সিনেমা হলের একাংশের মত, প্রশ্নটা পড়ুয়ারা কমার্শিয়াল ছবি বানাতে পারেন বা পারেন না- তা নিয়ে নয়। তাঁদের ছবি আটকানো হচ্ছে তাও নয়। বিষয়টা বাণিজ্যিক ছবি যেই বানান না কেন তাঁকে টলিউডের নিয়ম মানতে হবে। এখানে সেই নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে বলেই ফেডারেশন ও ইম্পা আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু স্টুডেন্ট সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে একাংশ এই দুই সংস্থাকে কালিমালিপ্ত করার খেলায় মেতেছে বলে অভিযোগ। এখন আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয় কি না সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন – বৈঠকে নীতীশ-চিরাগ! বিহারে মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত

_

 

_

 

_

Related articles

ঝাড়খণ্ডের দুমকায় বিধবাকে পুড়িয়ে খুন! প্রেমিক গ্রেফতার, পলাতক স্ত্রী

ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড! শিকারিপাড়া থানা এলাকার সীতাশাল গ্রামে তিন বছরের সম্পর্কে থাকার পর ২১ বছরের বিধবা...

অসাংবিধানিক মন্তব্য! রাজ্যপালকে ধুয়ে দিলেন কল্যাণ, দিলেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ

চূড়ান্ত অসাংবিধানিক এবং কুরুচিকর মন্তব্য বিজেপির ‘দলদাস’ রাজ্যপাল বোসের! একজন রাজ্যপাল কীভাবে এমন কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারেন? শ্রীরামপুরের...

ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে শিক্ষক নিয়োগ, মঙ্গলবার শুরু এসএসসির ইন্টারভিউ 

স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে প্রায় ২০ হাজার নামের প্রার্থী তালিকা। আগামীকাল, ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু...

অবাস্তব কাজের চাপ: বাংলার পর কেরল, আত্মঘাতী BLO, কাঠগড়ায় কমিশন

দেশের ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এক অবাস্তব পদ্ধতিতে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (Election...
Exit mobile version