Wednesday, November 19, 2025

বেআইনি বেজি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই, রোমভিত্তিক শনাক্তকরণ প্রকাশ ZSI-এর বিজ্ঞানীদের

Date:

Share post:

‘স্মল ইন্ডিয়ান মঙ্গুজ’, ‘ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুজ’, ‘ইন্ডিয়ান ব্রাউন মঙ্গুজ’, ‘রাড্ডি মঙ্গুজ’, ‘ক্র্যাব ইটিং মঙ্গুজ’ এবং ‘স্ট্রাইপ নেক্ড মঙ্গুজ’- ভারত (India) এই ৬ প্রজাতির বেজির (Mongoose) আবাসভূমি। এই ছোট মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ইঁদুর, সাপ, পাখি এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ভূমিকা পালন করে। তবে, এদের পরিবেশগত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও আঁকা কাজে ব্যবহৃত তুলি নির্মাণে বেজির রোমের চাহিদা থাকায় বেআইনি বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত বাণিজ্যে বিপদে এই প্রাণিকুল।

তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ বেজি (Mongoose) মারা যায়। তুলির জন্য ব্যবহারযোগ্য মাত্র এক কিলোগ্রাম রোম সংগ্রহ করতে প্রয়োজন হয় প্রায় ৫০টি বেজি। এই তুলিগুলি (Brush) ভারতে বিক্রি হয় এবং মধ্যপ্রাচ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চোরাপথে পাচার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা এর বেআইনি উৎসের ব্যাপারে অবগত থাকেন না। প্রধান পাচার পথগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ু। আন্তর্জাতিক চোরাচালান সাধারণত দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা এবং ভারত-নেপাল ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পরিচালিত হয়।

আইনি সুরক্ষা জোরদার করতে বেজির ৬টি প্রজাতিকে ধাপে ধাপে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২ অনুযায়ী সর্বোচ্চ সুরক্ষিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবুও, বাজেয়াপ্ত সামগ্রী থেকে বেজির রোম সঠিকভাবে শনাক্ত করতে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে বহু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আধুনিক তুলি প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় লোমের ‘ফলিকল’ ও তলার অংশ বর্জন করা হয়, ফলে, নিউক্লিয়ার ডিএনএ অবশিষ্ট থাকে না। রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ ও ক্ষয়ের কারণে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ পুনরুদ্ধারও প্রায়ই ব্যর্থ হয়। এই পরিস্থিতিতে রোমের গঠনভিত্তিক অধ্যয়ন অর্থাৎ ট্রাইকো ট্যাক্সোনমি দ্রুত, কার্যকর ও অক্ষত শনাক্তকরণের একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।

এই লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে ডিসকভার কনজারভেশন পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন গবেষণার মাধ্যমে। ভারতের ৬টি বেজি প্রজাতির জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ ট্রাইকো ট্যাক্সোনমিক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষণায় নথিভুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি বাজেয়াপ্ত বেজির লোম দ্রুত ও অক্ষতভাবে শনাক্ত করতে সহায়তা করবে এবং বেআইনি বন্যপ্রাণী পাচারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে আরও সক্ষম করবে। গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে জেডএসআই এর প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষিত নমুনা ব্যবহার করে।

ZSI-এর বিজ্ঞানী ড এম কামালাক্কান্নান বলেন, “এই গবেষণা ময়নাতদন্তে লোমের গঠনভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে প্রজাতি শনাক্তকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করেছে। এটি বাজেয়াপ্ত সামগ্রীতে বেজির লোম শনাক্ত করতে বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষকে বেআইনি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। গবেষণাটি ভারতে বেজি প্রজাতি শনাক্তকরণের জন্য একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী মানগত স্তর হিসেবেও কাজ করবে।”

দক্ষিণ কোরিয়ার পাকিয়ং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের  সহযোগী অধ্যাপক ড: শান্তনু কুণ্ডু বলেন, “আমাদের মাইক্রোস্কোপিক বিশ্লেষণ ও পরিসংখ্যান-ভিত্তিক মডেল এক সক্ষম বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করেছে। ভবিষ্যতের আণবিক বা ডিএনএ-ভিত্তিক বিশ্লেষণ এই পদ্ধতিকে আরও নিখুঁত করতে পারবে।”
আরও খবরবাংলা বললেই কীটপতঙ্গের মত ব্যবহার! ওড়িশায় পরিযায়ী শ্রমিকদের পুলিশি অত্যাচার

জেডএসআই-এর পরিচালক ড ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় গবেষণা দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীনস্থ ভারত সরকারের অনুমোদিত একটি সংস্থা হিসেবে জেডএসআই সারা দেশ থেকে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী, বিশেষত বেজির রোম থাকতে পারে এমন তুলি, প্রজাতি শনাক্তকরণের জন্য নিয়মিত গ্রহণ করে। বেআইনি বাণিজ্য রোধ করতে এবং তদন্তে যোগদান করতে জেডএসআই প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে। এই গবেষণা আমাদের বন্যপ্রাণী বিষয়ক তদন্তের সক্ষমতাকে বাড়াবে এবং ভারতের দেশজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়কের ভূমিকা পালন করবে।”

spot_img

Related articles

নিয়োগ মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন কল্যাণময়ের

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর এবার শিক্ষক নিয়োগ মামলায় জামিন পেলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় (Kalyanmoy Ganguly)। বুধবার...

মানিকের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে কোর্টের অনুমতি

নিয়োগ মামলায় তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর (Manik Bhattacharya) বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু...

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ! এবার আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে থানায় FIR দায়ের কল্যাণের

রাজভবনে (Raj Bhavan) বোমা-বন্দুক মন্তব্যের জেরে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন...

ভারতের বিমান ধ্বংসের মিথ্যে প্রচার চিনের: ট্রাম্পকে মিথ্যে প্রমাণ করে রিপোর্ট মার্কিন সংস্থার!

অপারেশন সিঁদুরের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার বার উঠে এসেছে ভারতীয় বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা। রাফাল নিয়ে বিবৃতি দিতেও...