এই নাকি গণতন্ত্রের মন্দির! আর সেখানে ভারতের জাতীয় গানের অংশ উচ্চারণ করা যাবে না। বলা যাবে না নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন (Parliament Winter Session) আগেই বুলেটিন (Bulletin) প্রকাশ করে এই নিদান দিল কেন্দ্র। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে শীতকালীন অধিবেশন। তার আগে বুলেটিন প্রকাশ করে রাজ্যসভার সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদে ‘জয় হিন্দ’ (Jai Hind) বা ‘বন্দেমাতরম’ (Vandemataram) স্লোগান দেওয়া যাবে না। এই শব্দগুলি নাকি শালীনতা বিরোধী!

৭ নভেম্বর ঘটা করে ‘বন্দেমাতরম’র সার্ধশতবর্ষ পালন করেছে বিজেপি (BJP) তথা মোদি সরকার। অথচ সেই ‘বন্দেমাতরম’ই বলা যাবে না সংসদে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (Bankimchandra Chatterjee) লেখা আনন্দমঠ-এর বন্দেমাতরম ধ্বনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে। ১৯৫০ সালে সংবিধান সভায় ‘বন্দেমাতরম’-কে ‘জাতীয় গীত’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেটাই ব্রাত্য! একইভাবে ব্রাত্য নেতাজির (Netaji Subhashchandra Bose) ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান।

বুলেটিনে দাবি করা হয়েছে, এই শব্দগুলির ব্যবহার শালীনতা বিরুদ্ধ। সংসদের কার্যপ্রণালীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিরোধী। শীতকালীন অধিবেশনে প্রথমবার রাজ্যসভা পরিচালনা করবেন চেয়ারম্যান তথা দেশের নতুন উপরাষ্ট্রপতি সিপি রাধাকৃষ্ণান। তিনিই শেষ কথা বলবেন বলে বুলেটিনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ফতোয়া নিয়ে আগেই গর্জে উঠেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার, সংবিধান দিবসে (Constitution Day) বাবা সাহেব আম্বেদকরের (Baba Saheb Ambedkar) মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে গর্জে ওঠেন মমতা। তীব্র কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “বন্দে মাতরম তো জাতীয় গান। তাহলে কি বাংলার আইডেনটিটি নষ্ট করতে চাইছে? ওরা ভুলে যাচ্ছে বাংলা ভারতের বাইরে নয়। ক্ষমতায় আছে বলে বিজেপি ভাবছে যা খুশি করবে, তা আমরা বরদাস্ত করব না।”

সংসদের অধিবেশনের সমাপ্তিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবির সময় বেজে ওঠে বন্দেমাতরম (Vandemataram)। সংসদ সচিবালয় কি সেই রীতিও ভুলে গিয়েছে! স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে বন্দেমাতরম ধ্বনিতে, সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন, সেই মন্ত্রকে শালীনতা বিরোধী তকমা দিচ্ছে!

তাদের এই ফতোয়া নিয়ে শোরগোলের মধ্যে মুখ বাঁচাতে রাজ্যসভা সচিবলায়ের জানিয়েছে, গান হিসেবে কেউ নিষিদ্ধ করেনি। স্লোগান হিসেবে তা ব্যবহার করা যাবে না। বলা যাবে না, থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্কস জাতীয় শব্দও। এমনকী, সংসদে বক্তব্য রাখার সময় কারও নামে অভিযোগ করলে, সেই সংক্রান্ত প্রমাণ দিতে হবে। তথ্যের সত্যতা সংশ্লিষ্ট সাংসদকে ‘অথেনটিকেট’ করাতে হবে। সভার ভিতরে বা বাইরে লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের নির্দেশের কোনও সমালোচনা করা যাবে না। এমনকী, সংসদ চত্বরে কোনও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন চলবে না।
আরও খবর: সংবিধান মানব, বিজেপির গাইডলাইন নয়: সংবিধান হাতে আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে গর্জে উঠলেন মমতা

রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, গণতন্ত্রকে বুলডোজ করা মোদি সরকার বিরুদ্ধ মত শুনতে পারছে না। সেই কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা।

–

–

–


