পারমাণবিক পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে সম্প্রতি গোটা বিশ্বকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। এবার পাল্টা ভারতের পারমাণবিক শক্তি নিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে খোলসা করলেন খোদ রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) পাশে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে দিলেন ভারতের সবথেকে বড় পারমাণবিক পরীক্ষাকেন্দ্র বানাতে চলেছে রাশিয়া।
বাস্তবে নরেন্দ্র মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পরে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল। শুক্রবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট ঘোষণা করলেন ভারত-রাশিয়া যৌথ সম্পর্ক আর্থিকভাবে ১২ শতাংশ শুধুমাত্র গত বছরে বেড়েছে। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার (Russia) বর্তমান আর্থিক লেনদেন ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এবার সেই আর্থিক সম্পর্ককে (economic partnership) বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বড় ঘোষণা করে দিলেন পুতিন।

যেভাবে মার্কিন শুল্কের চাপে ভারত ২০২৫ সালে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, তাকেই যেন তুলে ধরার বার্তা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শেষে দিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি। এমনকি তিনি এও দাবি করেন, ভারত ও রাশিয়া নিজস্ব মুদ্রাকে বাণিজ্যের মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যা ইতিমধ্যেই ৯৬ শতাংশ লেনদেনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। অর্থাৎ সেখানে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরশীলতাকে মুছে ফেলার প্রয়াস এশিয়ার দুই শক্তির। গত ব্রিকস (BRICS) সম্মেলনে এই বার্তা উঠে এসেছিল। গোটা বিশ্বের প্রত্যাশা, আগামী ব্রিকস সম্মেলনে সেই বার্তা আবার উঠে আসবে। আবার আসন্ন ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজক ভারত। সেই আয়োজনে রাশিয়া (Russia) সর্বোতভাবে ভারতের পাশে থাকবে বলেও দাবি করেন পুতিন (Vladimir Putin)। কাজেই ফের ব্রিকস সম্মেলনে আবার মার্কিন ডলারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যম থেকে মুছে ফেলার জোরালো বার্তাও ভারত সফর থেকে দিয়ে ফেললেন পুতিন।

যেভাবে মার্কিন চাপে ভারতের অর্থনীতি বেকায়দায়, পুতিনকে দিয়ে কার্যত সেই পরিস্থিতি ফেরানোর চেষ্টায় মোদি। সেখানেই পুতিন ঘোষণা করেন, দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য করিডোরের। তিনি জানান, নতুন আন্তর্জাতিক পরিবহন করিডোর তৈরির কাজ চলছে। উত্তর-দক্ষিণ এই করিডোরে জুড়বে রাশিয়া থেকে বেলারুশ। ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই করিডোরে রাশিয়া কাজ চালাচ্ছে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। এই পথেই যে এবার ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য আরও বাড়তে চলেছে, বলাই বাহুল্য।

সেক্ষেত্রে বাকি নেই সামরিক ক্ষেত্রও। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সাংবাদিক বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন দাবি করেন, ভারতের সামরিক বাহিনীকে আধুনিক করার কাজ রাশিয়াই করছে। ভারতীয় সেনা (Indian Army), এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (air defence system), বায়ু সেনা থেকে নৌসেনার আধুনিকীকরণে প্রভূত কাজ হচ্ছে। দুই দেশই এই ফলাফলে সন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন : ‘বন্ধু’ পুতিনকে শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতা উপহার মোদির, সফরে বিশেষ নজর ভারত-রুশ জ্বালানি সম্পর্কে

কার্যত রাশিয়া যে সব ক্ষেত্রে ভারতের পাশে থাকার কথা জানায় মোদি-পুতিন বৈঠক শেষে, সেই সব ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন নির্ভরশীলতা ভারতের। সেই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় ভারতের হারানো বাজার রাশিয়া ফিরিয়ে দিতে পারবে কি না, তা সময়ই বলবে। সেই সঙ্গে যে সামরিক সহযোগিতার কথা জানাচ্ছেন পুতিন, সেই প্রতিরক্ষায় কীভাবে ভারত লাভবান হচ্ছে, তা বোঝা যাবে যে কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতিতেই।

–

–

–


