Monday, December 22, 2025

৪৬টি প্রাণহানি, ‘খোকাবাবুদের আবদারে’ বৈধ নাম বাদের ষড়যন্ত্রের কমিশনের! BLA-এর চূড়ান্ত সতর্ক-সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ তৃণমূল সুপ্রিমোর

Date:

Share post:

এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে (Netaji Indoor Stadium) বিএলএ (BLA) এবং বিএলএ-২ দের নিয়ে বৈঠকে সতর্ক-সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন দলনেত্রী। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, “বিজেপি সব এজেন্সিকে দালাল বানিয়েছে। আরও দেড় কোটি নাম নাকি বাদ দিতে হবে, খোকাবাবুদের আবদার!” নির্বাচন কমিশনের ম্যাপিং-ই ভুল বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলের ৪০ টি বিধানসভার বিএলএ-দের নিয়ে এদিন বৈঠক করেন তৃণমূল সভানেত্রী। এসআইআর-এর খসড়া তালিকায় বাংলা থেকে প্রায় ৫৯ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। বিজেপি নেতাদের কথায় দেড় কোটি নাম বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে নির্বাচন কমিশন।  এ বিষয়ে সতর্ক করে মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, “হাত ঘোরালে নাড়ু পাব। নাড়ু নিয়ে ভোটে জিতব, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগাব। আর বাংলাকে দখল করব, বাংলাকে অপমান করব, বাংলার ইতিহাস ভুলিয়ে দেব। নানান রকম চালাকি। চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না।”

কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “বিজেপি (BJP) সব এজেন্সিকে দালাল বানিয়েছে। আরও দেড় কোটি নাম নাকি বাদ দিতে হবে, খোকাবাবুদের আবদার! বিজেপি তুমি আমাদের সাথে খেলে পারবে না। বাংলাকে জব্দ করতে এলে তোমাদের স্তব্ধ করে দেব! গায়ের জোরে দু বছরের কাজ দুমাসে করতে চাইছে। প্রতিদিন নির্বাচন কমিশন নির্দেশ বদল করছে। নির্বাচন কমিশনের ম্যাপিং-ই ভুল।”

এসআইআর আতঙ্কে আর কাজের চাপে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বলেন, “৪৬ টা প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। এর দায় কে নেবে? কমিশন তো এর দায় এড়াতে পারবে না। ডিলিমিটেশনে ঠিকানা বদলেছে, বাতিল। বিয়ে হয়ে অন্য বাড়িতে গিয়েছে, বাতিল। বাংলা ও ইংরেজিতে নামের বানানে ফারাক রয়েছে, বাতিল। এই অধিকার কে দিল? এলাকায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল চলবে। বিএলএ-১, বিএলএ-২ যাঁরা আছেন, তাঁদের ডিসটার্ব করা চলবে না।”

কমিশনের ম্যাপিং সম্পূর্ণ ভুল বলে অভিযোগ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “যখন ডিলিমিটেশন হল, একটা ভোটার আর একটা নির্বাচনী ক্ষেত্রে চলে গেল। মানে আগে ভবানীপুরটা ছিল আলিপুর। এখন হয়ে গিয়েছে ভবানীপুর। যুক্ত হল অন্য নতুন ওয়ার্ড। সব বিধানসভায় তাই হয়েছে। ম্যাপিংটাই তো ভুল। আপনাদের ম্যাপিং সম্পূর্ণ ভুল। এটি গ্রেট ব্লান্ডার। ২০০২ সালের পরে যে ডিলিমিটেশন হয়েছিল, সেটি কি বিবেচনায় রাখা হয়েছিল? কিন্তু পুনর্বিন্যাসের পর ওয়ার্ড বদলেছে ঠিকানাও বদলেছে। এখন তো আবার AI হয়েছে। একই নাম দিয়ে রাখছে। বিএলওদের দোষ নেই। কলকাতা (Kolkata) জেলা আগে অন্যরকম ছিল। আগে ১০১টি ওয়ার্ড ছিল, ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। কারণ ২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাস হয়েছিল। গোটা এসআইআর প্রক্রিয়াটাই অপরিকল্পিত। চাইলে আমার গলাও কেটে দিতে পারেন, তাও আমি মানুষের কথা বলবই। গায়ের জোরে যে কাজ করতে দু’বছর করতে লাগে, সেটা দু’মাসে করতে হবে? যাতে সরকারে আগের ছয় মাস কোনও উন্নয়ন মূলক কাজ করতে না পারে?”

বিএলএ (BLA) এবং বিএলএ-২ দের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কোন কোন বৈধ ভোটারের নাম তালিকায় ওঠেনি তার বিস্তারিত খোঁজ নিতে হবে। এ ব্যাপারে বুথ লেভেল এজেন্টদের আরও সক্রিয় ও সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। যাদের যা প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট দরকার তা দেখতে হবে বিএলএ-দের। ভোটের সময় অন্য রাজ্য থেকে নাম তুলতে এলে অবজেকশন দিতে হবে। মতুয়াদের ভোট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আদিবাসীদের ভোট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির অনেকেও বিএলও হয়েছেন, এটা এই প্রথম।”

নিজের পরিবার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আমার বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র চাইলে দিতে পারব না। ওনারা তো বাড়িতে হয়েছিলেন, হাসপাতালে নয়। মোদি-শাহের কাছে চাইলে ওরা দিতে পারবেন? ভুয়ো শংসাপত্র দেবেন। আমরা ফেক বানাই না, বড় দিন আসছে, কেক বানাই। সেই কেক খেয়ে তোমাদের (বিজেপিকে) হজম করব। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ দেখাতে পারবেন? ও সব তো লুকিয়ে ডুপ্লিকেট দেখাচ্ছে। এরা পারে না এমন কোনও কাজ নেই। একটা ডুপ্লিকেট, ফেক (শংসাপত্র) বানাতে লাগে এক সেকেন্ড। কিন্তু আমরা তো ডুপ্লিকেট বানাব না। কোনও মহিলা বিয়ে করেছেন, কিন্তু পদবি বদলাননি। কমিশন এমন একাধিক মহিলা ভোটারের নাম বাদ দিয়েছে।”

এরপরেই নাম নিয়ে বিভ্রাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইংরেজিতে নামটা অন্য শোনাচ্ছে, কিন্তু বাংলায় অন্য়। কেউ বাবা-মায়ের নাম লিখতে গিয়ে ‘এ’-র জায়গায় ‘ই’ লিখেছে। বাংলায় যেটা ‘আ’ হয়, ইংরেজিতে সেটা ‘ডবল এ’ হয়। একটা হকার, দোকানদার, একটা গরিব মানুষ, বস্তির মানুষ, একটা মহল্লার মানুষ, কলোনির মানুষ তোমার ইংরেজি বুঝবে কী ভাবে। কিন্তু সেই বিভ্রাটের জন্য নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”

spot_img

Related articles

তিনি বিজেপিরই বাই-প্রোডাক্ট: দল ঘোষণার মঞ্চ থেকে নিজেই প্রমাণ করলেন হুমায়ুন!

বাংলায় ভোট কাটার রাজনীতি করে নতুন রাজনীতির খেলায় ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। আদতে গোটা রাজ্যের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার...

এখন পিকনিক-ফিকনিক নয়, জীবন দিয়ে বিজেপিকে রুখতে হবে: ছাব্বিশের নির্বাচন নিয়ে কড়া বার্তা তৃণমূল সভানেত্রীর

“প্রাণ দিয়ে, জীবন দিয়ে বিজেপিকে রুখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, নেতারা পারবে না-কর্মীরা পারবে। এই লড়াই আমাদের বাঁচার...

বেলডাঙায় ফ্লপ শো! ধর্মের চাদর সরে যেতেই জমায়েতে ফাটল হুমায়ুনের সভায়

বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠার নামে বেলডাঙায় জমায়েত করে ৬ ডিসেম্বর তাক লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন হুমায়ুন কবীর। ২২ ডিসেম্বর দলের...

১৬ বছরের দাম্পত্য জীবন ভাঙল নৃত্যশিল্পী শ্রীনন্দা শঙ্করের

বছর শেষে বিনোদন জগতে আবার বিচ্ছেদের খবর। নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শঙ্করের মেয়ে শ্রীনন্দা শঙ্করের (Srinanda Shangkar) দাম্পত্য জীবন ভাঙনের...