সদা হাস্যময় মুখ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পলিটিকালি কারেক্ট উত্তর। কিন্তু বছর শেষের আগে সব অভিমান উগরে দিলেন অভিনেতা-প্রযোজক দেব অধিকারীর (Dev Adhikari)। সমাজ মাধ্যম থেকে সংবাদ মাধ্যমে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেললেন শঙ্কর-রঘু-নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী।

যে পোস্ট ঘিরে এত শোরগোল, কী লিখেছেন সেখানে টলি সুপারস্টার (Tollywood Superstar)?
পোস্টে (Social Media Post) লেখা, “এই বছর আমাকে অনেকে অনেক তকমা দিয়েছে, কেউ মাফিয়া তো কেউ মেগাস্টার। তারপরও সিনেমাহলে আমার সিনেমার পোস্টার লাগার পরও আমার সিনেমা জায়গা পায়নি। আশা করি সিনেমাহলের (Cinema Hall) মালিকরা খুশি, কারণ তারা যদি বাঁচে বাংলা সিনেমা বাঁচবে।”

মাস দুয়েক আগে পুজোর সময় মুক্তি পায় চারটে বাংলা ছবি। আর সেখানেই ছবি মুক্তি নিয়ে আকচাআকচিতে নখ-দাঁত বেরিয়ে গিয়েছিল গ্ল্যামারাস টলিপাড়ার। ‘মাফিয়া ম্যান, জানলা প্রোডাকশন’ কাদা ছোড়াছুড়িতে বাদ যায়নি তোনও কয়েনেজই। তবে, পরে আবার সবাই ‘ভাই ভাই সংঘ’-এ সামিল হয়েছেন। এবার বড়দিন। বাংলা ছবির দুনিয়ায় মুক্তির আরেক ঢেউ। আর তার আগেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে স্ক্রিনিং কমিটি- সবার বিরুদ্ধেই একরাশ অভিমান ঝরে পড়ল দেবে গলায়।
পোস্টে দেব সিনেমা হলের ছবি শেয়ার (Share) করেছিলেন সেটি নবীনা-র। বড়দিনে মুক্তিপ্রাপ্ত বাকি দুই ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ আর ‘মিতিনমাসি’-র শো থাকলেও এই হলে দেখানো হবে না ‘প্রজাপতি ২’। দেবের দাবি হলে না কি তাঁর ছবির পোস্টারও পড়েছিল। কিন্তু ছবি দেখানো হয়নি। এই বিষয়ে নবীনা-র মালিক নবীন চৌখানি জানাচ্ছেন, “প্রজাপতি ২ অন্যান্য হলে আছে। সেখানে অন্যান্য বাকি দুই ছবি নেই। আর কেন দেব এই পোস্ট করেছেন তা আমার জানা নেই। সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন।”

প্রিয়া সিনেমা হলে আবার ‘প্রজাপতি ২’ দেখানো হলেও বাকি দুই বাংলা ছবি নেই। প্রিয়ার হল মালিক অরিজিৎ দত্ত জানান, “প্রজাপতি ২-এর দু’টি শো রয়েছে প্রিয়াতে। বাকি দুই ছবির নেই। সমতা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।”

তাহলে দেবের (Dev Adhikari) গোঁসা কেন? অন্য ছবির প্রযোজক-পরিচালকরা তো নাকে কাঁদছেন না! আসলে টলিউডের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। প্রযোজক, ফেডারেশন, ইম্পার মাথাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ গঠন হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই ক্ষোভ দেবে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে খুব একটা রাখঢাক না করেই দেব জানিয়েছেন, এই কমিটি সিদ্ধান্তে ভালোর থেকে খারাপ না কি বেশি! দেব জানান, “২০২৬-এর ক্যালেন্ডার তৈরি হচ্ছে। আমি তো এমনিতেই এর বিরুদ্ধে। কারণ তুমি যদি ক্যালেন্ডার ঠিক করে দাও, তাহলে নতুন পরিচালকরা কোনোদিনও সুযোগ পাবে না। নতুন প্রযোজকরা টাকা ঢালার আগে ভয় পাবে, সব ডেট তো সবাই আগেই নিয়ে নিয়েছে। তাহলে আমি যে ইনভেস্ট করব তাহলে টাকাটা ফেরত আসবে কী করে। আমি আগেরদিন কমিটিকে বললাম, ‘ইউ শুড রিথিঙ্ক’।“

দেবের কথায়, “এই কমিটি গঠন হয়েছে, যাতে সিনেমা ঠিকঠাক করে মুক্তি পায়, আর বাইরে থেকে ইনভেস্টমেন্ট আসে। সব মিটিং হল। তারপরের আলোচনা ২০২৬ সালে পুজোতে কোন কোন সিনেমা রিলিজ করবে। আর প্রথম যে লাইনটা এল, দেব তুমি ২০২৬ সালের পুজোয় সিনেমা রিলিজ কোরো না।“

দেব জানান তিনি কমিটিকে বলেছেন, “আমাকে ২টো লাইনে লিখে দাও, কেন ছবি রিলিজ করব না। কাল যখন প্রেস জিজ্ঞাসা করবে, আমাকে তো বলতে হবে। আমি লকডাউনেও ছবি রিলিজ করেছি, যখন কেউ করেনি। তুমি এমন একটা ছেলেকে বলছ, যে লড়াই করে এসেছে। কোনো যুক্তি ছাড়া তুমি বলছ, ছবি দিতে না। যে ছেলেটা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাংলা ছবির প্রচার করছে, বাংলা ভাষাকে ধরে রেখেছে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে ধরে রেখেছে। যেই দলের হোক, ধর্মের হোক, সবাইকে নিয়ে কাজ করছে। তাকে তুমি বলছ ২০২৬ সালের পুজোতে আসবে না। আগে হত, যেই গাছে ফল হয়, সেই গাছে বেশি ঢিল পড়ে। আর এখন হচ্ছে যেই গাছে ফল হচ্ছে, তাকেই কেটে দাও, কারণ অন্য গাছে নাকি ফল হচ্ছে না।“

সাংসদ-অভিনেতার মতে, “আমার মনে হচ্ছে, কেউ বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ভালোর জন্য লড়ছে না। সবাই দেবের বিরুদ্ধে লড়তে ব্যস্ত।“

–


