ফের সুরের মঞ্চে আতঙ্কের ছায়া। বাংলাদেশের (Bangladesh) ফরিদপুরে জনপ্রিয় রকস্টার জেমসের কনসার্টে বহিরাগতদের তান্ডবে তোলপাড় ওপার ও এপার বাংলার শিল্পীমহল। ছায়ানটে বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর থেকে শুরু করে জেমসের মঞ্চে হামলা—একের পর এক এই নক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলছে।

ফরিদপুর জেলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার কথা ছিল জেমসের। কিন্তু দর্শকদের ভেতরে ঢোকা নিয়ে শুরু হওয়া ঝামেলা নিমেষেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয়। মঞ্চ লক্ষ্য করে উড়ে আসতে থাকে ইট-পাটকেল, যাতে অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখেই পুলিশ দ্রুত জেমসকে সরিয়ে নিলেও বাতিল হয়ে যায় অনুষ্ঠান। আরও পড়ুন: এসআইআরের শুনানি শুরু হতেই আতঙ্কে আত্মহত্যার চেষ্টা গোঘাটের গৃহবধূর

অশান্ত বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত এপার বাংলার সঙ্গীতমহলও । এই পরিস্থিতিতে এপার বাংলার গায়ক সিধু (সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়) মনে করেন, শিল্পীরা সবসময় ‘সফট টার্গেট’ হওয়ায় একদল অসভ্য মানুষ তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের শক্তি দেখাতে চাইছে। মুষ্টিমেয় মানুষরাই এধরনের ঘটনার সাথে জড়িত, সাধারণ মানুষরা এসব কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তিনি আরও বলেছেন, “শিল্পীদের কোনোরকম রাজনৈতিক আর প্রশাসনিক জোর নেই বলেই আজ শিল্পীরা এভাবে টার্গেট হচ্ছে”। অন্যদিকে কবীর সুমনের পর এবার প্রতিবাদী সুর শোনা গেছে নচিকেতা চক্রবর্তীর গলায়। তিনি জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে জেমসকে ফোন করবেন। এছাড়া এই ঘটনায় সরব হয়েছে জোজো,রাঘবরাও। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেন, “এ কোন বাংলাদেশকে দেখছি! সেখানে অনুষ্ঠান করতে যেতে এখন ভয় লাগছে। ভগবানের কাছে এটুকুই চাইব যারা এমন ধরণের কাজ করছেন, তাঁদের মাথায় সুবুদ্ধি আসুক।” সঙ্গীতশিল্পী জোজো এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে জানান এই ধরণের ঘটনা একেবারেই বরদাস্ত করা উচিত নয়।
উল্লেখ্য, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসামা হাদির মৃত্যুর পর থেকেই ওপার বাংলায় অস্থিরতা বেড়েছে। এমনকি এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিন দাবি করেন, একদল কট্টরপন্থী ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশে গান-বাজনা বন্ধ করতে চাইছে। আরও ক্ষতির দিকে দেশকে চালনা করতে চাইছে। তিনি জানান, এই নিরাপত্তাহীনতার কারণেই প্রখ্যাত সরোদ শিল্পী সিরাজ আলি খান বা ওস্তাদ রশিদ খানের ছেলে আরমান খানের মতো তারকারা বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তসলিমার কথায়, “জেহাদিরা এখন সংস্কৃতিকেই টার্গেট করেছে।”

সব মিলিয়ে শিল্পীদের ওপর পরপর এই আক্রমণ মুক্তচিন্তার কণ্ঠরোধের চেষ্টা বলেই মনে করছেন দুই বাংলার সঙ্গীতশিল্পীরা। দ্রুত কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধুলোয় মিশে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

–

–

–

–

–


