Sunday, December 28, 2025

অন্ধকার আফ্রিকায় একটি ‘সৎ মানুষের দেশ’: স্বপ্ন সফল করেছিলেন থমাস সাঙ্কারা

Date:

Share post:

আফ্রিকার অন্ধকার জগতে কোথাও খাদ্য সংকট। কোথাও জীবনযাপনই একটা বড় প্রশ্ন। তার মধ্যেও সভ্যতার ছোঁয়া পাওয়া যে কয়টি দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে নিজেদের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছে আজ তার মধ্যে অন্যতম বুরকিনা ফাঁসো। মরুভূমি আর ঘন জঙ্গলের মধ্যে থেকেও যে সভ্যতা, সুশাসনের আলো জ্বালা যায়, সেই স্বপ্ন বুরকিনা ফাঁসোকে দেখিয়েছিলেন যে দেশনায়ক, তিনি ছিলেন থমাস সাঙ্কারা। যে দেশটা নিজেদের দেশে উৎপাদন না হওয়ার জন্য ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছিল, সেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার কারিগর ছিলেন যিনি, তিনিই সাঙ্কারা।

১৯৪৯ সালে আপার ভোল্টাতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাঙ্কারা। পড়াশোনার পাশাপাশি সামরিক শিক্ষার দিকে তার আগ্রহ ছিল। পরে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে ৩৩ বছর বয়সে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন থমাস সাঙ্কারা। তার আগে ক্ষমতায় ছিলেন পশ্চিমা বিশ্বের মদদপুষ্ট স্বৈরশাসক ব্লসিই কমপাওর। আরও পড়ুন: বিজেপি-শাসিত ওড়িশায় ফের বাংলা বলায় আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিক

দেশের ক্ষমতায় এসে সাঙ্কারা কার্যত নিজের দেশকে নিয়ে নিজের পরিকল্পনাগুলি সফল করতে থাকেন। প্রথমেই নিজের দেশের নাম পরিবর্তন করেন তিনি। আপার ভোল্টার নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন বুরকিনা ফাঁসো। যার অর্থ হল ‘সৎ মানুষের দেশ।’

তিনি ছিলেন এক অন্যরকমের মানুষ। দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও কোন রকম ক্ষমতা দেখাতেন না, এছাড়াও বিলাসবহুল জীবনযাপনও করেতন না। তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে ছিল ৪ টি সাইকেল, ৩টি গিটার। মন্ত্রীদের বিলাসবহুল জীবন যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাঁদের গাড়ি বিক্রি করে সাইকেলে করে কাজে যাওয়ার নির্দেশ দেন, ফ্লাইটের ফাস্ট ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তিনি বলতেন ‘যে প্রথম শ্রেনির আসন ছাড়া চলাচল করতে পারেন না, সে দেশের সেবা করবে কিভাবে?’ সরকারের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেশে হাসপাতালে চিকিৎসা করার নির্দেশ দেন। এই সব নির্দেশ নিজেও মেনে চলতেন তিনি। শিশুদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করেন। নিজের গাড়ি এবং বাড়ি থেকে এসি সরিয়ে দেন। তার জন্য বরাদ্দ মার্সিডিজ গাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কম দামের গাড়ি কেনেন। তিনি বলেছিলেন ‘আমার দেশের মানুষ গরমে আছে সেইখানে আমি কি করে ঠাণ্ডায় থাকবো।’ তিনি নিজে দেশের তৈরি পোশাক পরতেন এবং বাকিদেরও পরার কথা বলতেন।

তার সময়কালে নারীদের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন ‘নারীদের মুক্তি ছাড়া সমাজের মুক্তি সম্ভব নয়।’ সেই সময়ে নারীদের জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া, বহুবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়। তার সময়কালে আফ্রিকার সব দেশের মধ্যে বুরকিনা ফাঁসোয় মেয়েদের সব থেকে বেশি চাকরি দেওয়া হয়েছে। নারীদের সেনাবাহিনী এবং প্রশাসন বিভাগে যুক্ত করেন।

থমাস সাঙ্কারা সব বিদেশি ঋণ নির্ভর উন্নয়ন থেকে সরে আসেন তিনি। বিশ্বব্যাঙ্ক এবং আইএমএফের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। তার শাসন কালে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়। আগে প্রতি হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হত ১৭০০ কেজি তার শাসন কালে সেই পরিমাণ বেড়ে হয় ৩৮০০ কেজিতে। এর ফলে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে বুরকিনা ফাঁসো।

তিনি গ্রামের মানুষদের সব ট্যাক্স, টোল এবং সরকারি কর মুকুব করে দেন। তার ৪ বছরের শাসন কালে দেশের স্বাক্ষরতার হার ১৩ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশ বাড়ে। ১০ মিলিয়নের বেশি গাছ বসান পরিবেশের উন্নয়নের জন্য। সরকারি দফতরের কর্মচারীদের এবং নিজের মাইনে কমিয়ে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগান তিনি। ঠিক এভাবেই যখন দেশের উন্নয়নে প্রবল গতি এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাঙ্কারা, তখনই ছন্দপতন। শাসনকালের মাত্র চার বছর মেয়াদের মধ্যেই ১৫ অক্টোবর ১৯৮৭-তে আততায়ীর গুলিতে মারা যান থমাস সাঙ্কারা।

spot_img

Related articles

সমালোচনার জবাব দিলেন ব্যাট হাতে, বাইশ গজে চেনা ছন্দে স্মৃতি

বিতর্ককে পিছনে ফেলে রানের আলোয় স্মৃতি মান্ধানা (Smriti Mandhana)। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে অবশেষে রান পেলেন...

ভোটার তালিকা ও শুনানি ইস্যুতে সোমে নির্বাচন কমিশনে তৃণমূল 

ভোটার তালিকা ও শুনানি ইস্যুতে আগামিকাল অর্থাৎ সোমবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। ভোটার তালিকা সংশোধন...

শুনানির নামে বয়স্ক বৈধ ভোটারদের হেনস্থা

বিজেপির নির্দেশে বাংলার ওপর জোর করে এসআইআর চাপিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। বাংলার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার...

বাদ পড়তে পারেন তারকা ক্রিকেটার, একদিনের দল নিয়েও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিসিসিআই

টি২০ বিশ্বকাপের দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এবার একদিনের দল(ODI Team) নিয়েও বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিসিসিআই।...