২০২৫ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারগুলি ভারতীয় শাসনব্যবস্থার একটি পরিণত পর্যায়কে প্রতিফলিত করে, যেখানে নিয়ন্ত্রক পরিকাঠামো সম্প্রসারণের পরিবর্তে পরিমাপযোগ্য ফলাফল প্রদানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কর (Tax), শ্রম আইন, ব্যবসা পরিচালনা ও কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রক্রিয়া সরল করা, মান্যতার কাঠিন্য কমানো এবং নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভবিষ্যৎ গতিবিধি বোঝা সহজ করার ফলে দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।

এই সংস্কারগুলি জীবনযাপনের সুবিধা, ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়েছে। সরলীকৃত কর ব্যবস্থা, আধুনিক শ্রম আইন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের বিস্তৃত সংজ্ঞার মাধ্যমে যুব, নারী, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং গ্রামীণ সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই পদক্ষেপগুলি ফলাফলভিত্তিক নীতিনির্ধারণের একটি সুসংহত বিচারধারা তুলে ধরে।

আয়করে সংস্কার
২০২৫ থেকে ২০২৬ অর্থবর্ষের (Financial Year) কেন্দ্রীয় বাজেটে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে আয়করমুক্ত করা হয়েছে। বেতনভুক্তদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ছাড় যুক্ত করে কার্যকর ছাড়ের সীমা বেড়ে হয়েছে ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। এর ফলে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির হাতে অতিরিক্ত ব্যয়যোগ্য আয় এসেছে, ফলত ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আয়কর আইন ১৯৬১ সম্পূর্ণ সংস্কার করে নতুন আয়কর আইন ২০২৫ প্রবর্তনের ঘোষণা করা হয়। এই সংস্কার কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ গঠিত একটি অভ্যন্তরীণ কমিটির মাধ্যমে তিনটি নীতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়
* ভাষা ও পরিকাঠামোর সরলীকরণ
* কর নীতিতে বড় পরিবর্তন না করা
* কর হারে কোনও পরিবর্তন না আনা
শ্রম সংস্কার
ভারত সরকার ২৯টি শ্রম আইনকে চারটি শ্রম বিধিতে একত্রিত করেছে- মজুরি বিধি, শিল্প সম্পর্ক বিধি, সামাজিক সুরক্ষা বিধি এবং পেশাগত নিরাপত্তা স্বাস্থ্য ও কর্মপরিস্থিতি বিধি।

এই কাঠামো ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা জোরদার করেছে। প্রায় ১ কোটি শ্রমিক বার্ষিক সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার আওতায় এসেছেন। নারী শ্রমিকরা মাতৃত্বকালীন সুবিধা, ছুটি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের সুফল পাচ্ছেন। এটি নিয়মনির্ভর ব্যবস্থার বদলে ফলাফলভিত্তিক শাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর।

গ্রামীণ কর্মসংস্থান সংস্কার
বিকশিত ভারত- গ্যারান্টি ফর রোজগার ও আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ আইন) ২০২৫ মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনকে রূপান্তরিত করে একটি আধুনিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। এখানে, জীবিকা নিরাপত্তা এবং সমগ্র সম্প্রদায়ের উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে জড়িত।

ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা সংক্রান্ত সংস্কার
ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোগের উপযোগী গুণমান নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে, উৎপাদনে ব্যাঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
* অতিক্ষুদ্র উদ্যোগকে ছয় মাস এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগকে তিন মাস অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
* রফতানিমুখী ও গবেষণার জন্য জরুরি আমদানির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
* পূর্ববর্তী মজুত উৎপাদন ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় মান নির্ণায়ক ব্যুরোর অধীনে বার্ষিক খরচ কমানো, যৌথ পরীক্ষাগার ব্যবহারের সুযোগ এবং সহজ পরিদর্শন ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ সংক্রান্ত অন্যান্য সংস্কার
২০২৫ থেকে ২৬ সালের বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
সংশোধিত সীমা-
* অতিক্ষুদ্র উদ্যোগের বিনিয়োগ ২.৫ কোটি টাকা, বার্ষিক লেনদেন ১০ কোটি টাকা
* ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিনিয়োগ ২৫ কোটি টাকা, লেনদেন ১০০ কোটি টাকা
* মাঝারি উদ্যোগ বিনিয়োগ ১২৫ কোটি টাকা, লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা

পণ্য ও পরিষেবা কর সংস্কার
নেক্সট জেন জিএসটি সংস্কার কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ, ন্যায্য ও বৃদ্ধি-সহায়ক করেছে। এতে উপভোক্তাদের জীবনযাপনের সুবিধা এবং ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা একসঙ্গে নিশ্চিত হয়েছে।

রফতানি উন্নয়ন মিশন
২০২৫ থেকে ৩১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রফতানি উন্নয়ন মিশন শুরু করা হয়েছে। এটি আর্থিক সহায়তা, গুণমান মান্যতা, বিপণন, পরিবহণ ও বাজার প্রবেশের সমন্বিত পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে।
অন্যান্য বাণিজ্য সংস্কার
বছর জুড়ে বাণিজ্য এবং ব্যবসা করার সারল্যের সংস্কারগুলির মূল লক্ষ্য ছিল প্রক্রিয়ার সরলীকরণ, ডিজিটাল ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং লেনদেনের খরচ হ্রাস করা, বিশেষত, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলির জন্য। এর মধ্যে বাণিজ্য ব্যবস্থার ডিজিটাল সমন্বয় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেমন ন্যাশনাল সিঙ্গল উইন্ডো, ট্রেড কানেক্ট, আইসগেট এবং ই কমার্স রফতানি হাব। ঝুঁকিভিত্তিক রিফান্ড ব্যবস্থাসহ নেক্সট জেন GST সংস্কার কার্যকর হয়েছে। শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে জেলা ব্যবসা সংস্কার কর্মপরিকল্পনা ২০২৫ চালু করে অনুমোদন ও পরিদর্শন প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে এবং ব্যবসা করার সারল্যের সংস্কার জোরদার হয়েছে। মোট ১৫৪টি লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং স্টার্টআপগুলিকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। গভর্নমেন্ট ই মার্কেটপ্লেস (জেম) এবং ‘এমএসএমই-সম্বন্ধ’-র মাধ্যমে বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ক্রয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলির অংশগ্রহণ আরও শক্তিশালী হয়েছে।
২০২৫ সালের অর্থনৈতিক সংস্কার নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য জটিলতা কমিয়ে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার বৃদ্ধি করেছে। কর সরলীকরণ, শ্রম আইন আধুনিকীকরণ, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র উদ্যোগের ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রসারের মাধ্যমে ভারতকে একটি সহনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


